হাজার দুয়েক দ্বীপবেষ্টিত দেশ মালদ্বীপ পর্যটনে এক নম্বর হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। পাঁচ লাখের সামান্য বেশি জনসংখ্যার এ দেশটিকে ২০২০ সালে ‘ওয়ার্ল্ড বেস্ট টুরিস্ট ডেসটিনেশন’ হিসেবে ঘোষণা করেছে ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম অর্গানাইজেশন।
দেশটিতে থাকা বিচ্ছিন্ন এ দ্বীপগুলোতে পর্যটকদের আকর্ষণের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। পর্যটনের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে দেশটির সরকার। না দেওয়ারও কোনো কারণ নেই। এই খাত থেকে মালদ্বীপের আয়ের ৭০ শতাংশ আসে। মালদ্বীপের প্রায় দুই হাজার দ্বীপজুড়ে ছোট-বড় বিভিন্ন আকারের হোটেল ও কটেজ রয়েছে। এর মধ্যে বিশ্বের অনেক নামীদামী ব্র্যান্ডের হোটেল-রেস্তোরাঁর শাখাও রয়েছে।
গত ৪ ডিসেম্বর মালদ্বীপ সফররত সংবাদকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নাজমুল হাসান বলেন, ‘এ দেশের পর্যটনশিল্পের বিকাশ ও উন্নয়নের প্রধান কারণ। এখানকার সরকার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে। পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে সরকার প্রয়োজনীয় সব ধরনের নীতিমালা, আইনকানুন ও শর্তাবলী তৈরি করে দিচ্ছে। কিন্তু বেসরকারি ব্যবসায় সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করছে না।’
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘তবে ব্যবসা পরিচালনায় কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ না করলেও সরকারের বিভিন্ন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বিভিন্ন দ্বীপে যে কটেজ রয়েছে সেগুলোতে মাঝে মাঝে আকস্মিকভাবে পরিদর্শনে যান। পর্যটকদের খাবার কিংবা অন্য যে কোনো বিষয়ে কোনো অভিযোগ পেলে প্রথমবার সতর্ক করে আসেন। পরবর্তী সময়ে আবারও সেই প্রতিষ্ঠানের কোনো ধরনের অনিয়ম বা অপরাধের প্রমাণ পেলে পাঁচ বছরের জন্য সিলগালা করার পাশাপাশি মামলা করে দেয়। বেসরকারি ব্যবসায়ীদের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হলেও সরকারের কঠোর নজরদারি রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে কোনো দেশের পর্যটনশিল্পসহ সার্বিক উন্নয়নে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদেরকে ব্যবসার ক্ষেত্রে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়ার পাশাপাশি পর্যটকদের জন্য সকল সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা গেলে আমাদের পর্যটন শিল্প থেকেও কোটি কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। সরকার কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ না করেও সার্বক্ষণিক মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার রাখলে পর্যটনশিল্পে দেশে সার্বিক উন্নয়ন ঘটবে।’
মালদ্বীপে সফররত সংবাদকর্মীদের অনেকের মতামতও তাই। বলেন, আমাদের দেশে বিশ্বের অন্যতম সমুদ্র সৈকত আছে। পাহাড়, দ্বীপ আছে। পর্যটকদের আকৃষ্ট করার মতো সম্পদ প্রকৃতি অকৃপণ হাতে দিয়েছে আমাদের। কেবল সুষ্ঠু পরিকল্পনা এবং এর বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরাও প্রতিবছর হাজার কোটি টাকা আয় করতে পারি এই শিল্প থেকে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমাদের দেশেও পর্যটকরা আসেন। কিন্তু নানা অব্যবস্থাপনা, যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহাল দশা; পর্যাপ্ত সুযোগ-সু্বিধা না পাওয়া- সর্বোপরি নিরাপত্তাহীনতার কারণে এখানে পর্যটকরা আসলেও থাকতে চান না।
পুরো পর্যটন শিল্পকে বেসরকারিখাতে ছেড়ে দিয়ে সঠিক এবং সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার মাধ্যমে পরিবহন, রিসোর্ট তৈরি, বিদেশিদের জন্য নির্দিষ্ট এলাকা নির্ধারণ করে সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করলে মালদ্বীপের মতো আমাদের দেশেও অর্থনীতিতে পর্যটনশিল্প বিরাট ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মনে করেন এসব সংবাদকর্মীরা।