চরম অর্থনৈতিক সংকটে থাকা শ্রীলঙ্কার মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে এসেছে। ফলে, গত দুই বছরের মধ্যে এই প্রথম দেশটির মূল্যস্ফীতি এক অঙ্কের ঘরে নামলো। শুধু তাই নয় দেশটির পর্যটন খাতও ঘুরে দাঁড়িয়েছে, যা তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে।
শ্রীলঙ্কার সংবাদমাধ্যম ডেইলি মিরর ও কলম্বো পেজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জুলাইয়ে সর্বোচ্চ পর্যটক শ্রীলঙ্কা ভ্রমণ করেছেন। জুলাইয়ে ১ লাখ ৪০ হাজারের বেশি পর্যটক শ্রীলঙ্কায় প্রবেশ করেন।
শ্রীলঙ্কা ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (এসএলটিডিএ) প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, জুলাইয়ে মোট ১ লাখ ৪৩ হাজার ৩৯ জন পর্যটক দেশটিতে প্রবেশ করেছে, যা গত বছরের চেয়ে ২০২ শতাংশ বেশি। এর আগে চলতি বছরের মার্চে পর্যটক ছিল সর্বোচ্চ ১ লাখ ২৫ হাজার ৪৯৫ জন।
এছাড়া চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে ৭ লাখ ৬৭ হাজার ৯১৩ জন পর্যটক শ্রীলঙ্কা ভ্রমণ করেছেন। যা পুরো ২০২২ সালের চেয়ে বেশি, গত বছরব্যাপী পর্যটকের সংখ্যা ছিল ৭ লাখ ১৯ হাজার ৯৭৮ জন। জুলাইয়ে দৈনিক পর্যটকের গড় বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ৬১৪, যা জুনে ছিল ৩ হাজার ৩৪৬ এবং মার্চে ৪ হাজার ৪৮ জন।
জুলাইয়ে শ্রীলঙ্কা সবচেয়ে বেশি পর্যটক পেয়েছে ভারত থেকে, যা মোট আন্তর্জাতিক পর্যটকের ১৬ শতাংশ। জুলাইয়ে ২৩ হাজার ৪৬১ জন ভারত থেকে শ্রীলঙ্কা ভ্রমণ করেন। যুক্তরাজ্য ১২ শতাংশ পর্যটক নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে, সেখান থেকে ১৭ হাজার ৪৮২ জন শ্রীলঙ্কায় প্রবেশ করেন।
গত ৩০ জুলাই শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্সিয়াল মিডিয়া সেন্টারে (পিএমসি) এক প্রেস ব্রিফিংয়ে দেশটির পর্যটন প্রতিমন্ত্রী ডায়ানা গামাগে বলেন, পর্যটন শিল্পের বিকাশের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহের কর্মসূচি সফল হচ্ছে। এই অর্জন শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক রিজার্ভকে শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
অবশ্য গত বছর শ্রীলঙ্কার পর্যটন ব্যবসা ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। অর্থনৈতিক সংকট ও আকাশছোঁয়া মূল্যস্ফীতির কারণে পর্যটকরা শ্রীলঙ্কাকে পর্যটন গন্তব্য হিসেবে পছন্দ করেননি। এছাড়া, বিভিন্ন দেশ শ্রীলঙ্কা সফরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। কিন্তু প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহের ক্ষমতায় আসার পর সেই পরিস্থিতি পাল্টেছে। দেশটির অর্থনীতি আবার ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে। একই সঙ্গে পর্যটন শিল্পের জন্য অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। পর্যটন খাতের পুনরুত্থান শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
পর্যটক আকর্ষণে শ্রীলঙ্কার পর্যটন মন্ত্রণালয় দেশটিকে একটি আকর্ষণীয় পর্যটন গন্তব্য হিসেবে গড়ে তুলতে নতুন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সম্প্রতি দেশটি মিস ট্যুরিজম ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত রাউন্ডের আয়োজন করেছিল, যেখানে ৩০টি দেশের প্রতিযোগীরা দ্বীপ রাষ্ট্রটি ঘুরে দেখেন। এই ইভেন্টটি শ্রীলঙ্কার পর্যটন শিল্পের প্রসারে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে।
তথ্য বিশ্লেষণ দেখায়, ইংল্যান্ড, রাশিয়া, জার্মানি ও ফ্রান্সের মতো দেশগুলো থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পর্যটক আগে শ্রীলঙ্কা ভ্রমণ করেছিলেন। এসব দেশের পর্যটকরা আবার শ্রীলঙ্কা ভ্রমণে আগ্রহ দেখাচ্ছেন, যা দেশটির পর্যটন শিল্পকে আরও শক্তিশালী করবে।
শ্রীলঙ্কা পর্যটকদের নিরাপত্তার দিকটি খুবই গুরুত্ব দিচ্ছে। এমনকি পর্যটকদের সঙ্গে কেউ যেন খারাপ আচরণ না করে সে বিষয়েও দেশটির নাগরিকদের বারবার সচেতন করা হচ্ছে। কারো এ ধরনের কাজ শ্রীলঙ্কার সুনামের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই পর্যটক ও পর্যটন খাতের স্বার্থ রক্ষায় দেশটি শক্তিশালী নিয়ন্ত্রক কাঠামোর কথা ভাবছে।