পর্যটন মৌসুম শেষ হবার আগেই শুরু হয় পবিত্র রমজান মাস। ফলে, পুরো রমজানে জনশূন্য থেকেছে কক্সবাজারের বেলাভূমি। কিন্তু সোমবার (৩১ মার্চ) ঈদুল ফিতরের ছুটির বদৌলতে কক্সবাজারে পর্যটক সমাগম শুরু হয়েছে। ঈদের দ্বিতীয় দিন (মঙ্গলবার) উল্লেখ করার মতো বেড়েছে পর্যটক ও দর্শনার্থী উপস্থিতি। আগামী ৫ এপ্রিল পর্যন্ত এমন বিচরণ থাকবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
দেখা যায়, গরম উপেক্ষা করে কক্সবাজার সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টে সকাল-দুপুর-সন্ধ্যায় লোকসমাগম বেড়েছে। রমজানের শুনশান নীরবতা থাকা হোটেল-মোটেল জোনে অটোরিকশা বিচরণ, খাবার ও সৌখিন পণ্যের দোকানগুলো পালা করে খুলছে ব্যবসায়ীরা। বেড়েছে ফুটপাতের বেচাকেনাও। সৈকতে বেড়েছে বিনোদন সঙ্গী ঘোড়া, বীচ বাইক, জেট স্কিসহ অন্যান্য অনুষঙ্গ।
তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইসের বিপণন বিভাগের ব্যবস্থাপক ইমতিয়াজ নূর সোমেল বলেন, এবারের ঈদে টানা ১১দিন ছুটি পাওয়া গেলেও ১ থেকে ৫ এপ্রিল পাঁচ দিনই পর্যটকে সরগরম থাকবে কক্সবাজার- সে ধারণা আগেই করা হয়েছি। ৩১ মার্চ ও ১ এপ্রিল ঈদ হওয়া নিয়ে দোলাচল থাকায়, ৩-৪ তারিখকে বেড়ানোর মুখ্যম সময় ভেবে হোটেল-মোটেলের কক্ষ এ সময়ের জন্য আগাম ৯০ শতাংশ বুকিং হয়। আর ১-২ এবং ৫ এপ্রিলের জন্য বুকিং হয়েছে ৬০-৭০ শতাংশ। তবে, ৩১ মার্চ ঈদুল ফিতর উদযাপন হওয়ায়, অতীতের মতো ঈদের দিন বিকেলে স্থানীয় দর্শনার্থীরা সৈকতে ভিড় জমান। পরেরদিন তাদের সাথে যোগ দেন কিছু পর্যটকও। এতে গরমের মাঝেও বেলাভূমিতে লোকসমাগম উল্লেখ করার মতো ঘটেছে। আগামী শনিবার পর্যন্ত এ ধারা অব্যাহত থাকতে পারে বলে আশা করছি আমরা।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট ক্লাব ও ট্যুরস অপারেটর ওনার্স এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক) সভাপতি মো. রেজাউল করিম বলেন, ঈদের ছুটিতে লাখো পর্যটক সমাগম হতে পারে- এ আশায় পর্যটকদের বরণে সৈকত তীরের ৫ শতাধিক হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউজ প্রস্তুত ছিল। এবারের ঈদের ছুটির পর বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে আরও একটি ছুটিতে পর্যটক সমাগম হতে পারে এবং এটি দিয়েই চলতি পর্যটন মৌসুম শেষ হবে বলে ধরে নেয়া যায়।
কক্সবাজার সৈকতের কিটকট (বসার চেয়ার) ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান বলেন, পুরো রমজানে ব্যবসায় খরা সময় পার করেছি। ঈদুল ফিতরের ছুটিতে বিপুলসংখ্যক পর্যটক আসবে আশা করা যায়। সোমবার (ঈদের দিন) হতে ব্যবসা ভালো হচ্ছে। যারা সৈকতে ভিড় করছেন তারা শুধু পর্যটক নন, স্থানীয় দর্শনার্থী রয়েছে। অভিজ্ঞতা বলছে, এবারের ছুটিতে কয়েক লাখ পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণে আসবে।
সৈকতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হাবিব উল্লাহ বলেন, রমজানের পর্যটক না থাকায় বেচাকেনা হয়নি- তবে, ঈদের পরে ব্যবসা জমা শুরু করেছে।’
তারকা হোটেল সায়মন বিচ রিসোর্টের হিসাব কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ঈদের পরে ঘুরতে আসতে মার্জিত পর্যটকরা আমাদের সেবা নিতে বেশিরভাগ রুম আগাম বুকিং হয়েছে।
কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান জানান, সারাবছর পর্যটক উপস্থিতি না থাকলে কক্সবাজারে গড়ে ওঠা পাঁচ শতাধিক হোটেল- মোটেল মালিকরা ক্ষতির মুখে পড়েন। পুরো রমজানে সবার লস গেছে। কিন্তু ঈদুল ফিতরের ছুটিতে পর্যটক সমাগম আশানুরূপ হলে ক্ষতি কিছুটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। কক্সবাজারে আগত পর্যটক বরণে হোটেল মালিকরা একমাস ধরে প্রস্তুতি নিয়েছেন। সারাবছর কম বেশি পর্যটক উপস্থিতি নিশ্চিতে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ জরুরি বলে উল্লেখ করেন তিনি।
কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, রমজান মাসে পর্যটকশূন্য থাকার সময়টাতে হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউজের সাজসজ্জাসহ সব ধরনের মেরামতে কাজ করে পর্যটক বরণে প্রস্তুতি থাকে। ঈদের দিন হতে লোকসমাগম বাড়তে শুরু করেছে। সবাই পর্যটক নন।
টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ জানান, রমজানে জনশূন্য থাকলেও ঈদের ছুটিতে পর্যটকের সমাগম বাড়বে সেই ধারণা থেকেই- পর্যটক সেবা নিশ্চিতে এবং শৃঙ্খলা রক্ষায় আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। পর্যটকদের অতিরিক্ত চাপের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে টুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও তৎপর রয়েছে। পর্যটকদের মাঝে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের সতর্ক করা হচ্ছে।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, সৈকত তীরের তারকা হোটেলগুলো ছাড়া গেস্ট হাউস, কটেজ বা অন্য আবাসন প্রতিষ্ঠান গুলো পুরো রমজানে বন্ধ ছিল। এখন ঈদের পর হতে পর্যটক-দর্শনার্থী আসা শুরু হয়েছে। এটা টানা কিছু দিন সচল থাকলে রমজান মাসের পর্যটক শূন্যতার ক্ষতি পুষিয়ে যাবার আশা করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, পর্যটকরা কক্সবাজারের অতিথি। তাদের যথাযথ সেবা নিশ্চিতে পর্যটন সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশনা দেয়া আছে। ঝামেলাহীন নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে সৈকতে ও আশপাশের বিনোদনকেন্দ্রে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে থাকবে। কোন ধরনের অভিযোগ পেলেই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।