1. [email protected] : চলো যাই : cholojaai.net
পর্যটকদের পদচারণে এখন মুখর শ্রীলঙ্কা
শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫, ১২:২২ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
কক্সবাজারের আকাশে রোমাঞ্চকর প্যারাসেইলিং বিয়ের টোপ দিয়ে পাকিস্তান আর বাংলাদেশের মহিলাদের যৌন ব্যবসায় নামাচ্ছেন চিনা পুরুষেরা যুক্তরাষ্ট্রে পুরো স্কলারশিপ পেয়েও ভিসা আবেদন নিয়ে অনিশ্চয়তায় স্বপ্নভঙ্গ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর বিমানে চালু হচ্ছে ‘স্ট্যান্ডিং অনলি’ আসন, কমবে খরচ নেপালের দরবার স্কয়ার যেন এক জীবন্ত জাদুঘর দুবাইয়ে বিশ্বের বৃহত্তম ভিসা আবেদন কেন্দ্র চালু, প্রতিদিন ১০ হাজার আবেদন গ্রহণ পাইলটের বুদ্ধিমত্তায় অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচলেন ১৮০ বিমানযাত্রী বেতন বছরে ৩০ কোটির বেশি, দুনিয়ায় সবচেয়ে সুখের চাকরি, তবুও কেউ করতে রাজি নয় হাডসন ইয়ার্ডসে গ্রীষ্মে বেড়েছে পর্যটকদের ভিড় কেন দেশ ছাড়ে মার্কিনরা, কোন দেশে বেশি স্থায়ী হয়

পর্যটকদের পদচারণে এখন মুখর শ্রীলঙ্কা

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৯ মে, ২০২৫

মানচিত্রে ভারতের দক্ষিণে যেন একফোঁটা জলের টিপ ঝুলে আছে, তার নাম শ্রীলঙ্কা। ক্রিকেটে দেশটির খ্যাতি বিশ্বময়। তবে এর বাইরে পর্যটনের ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কা বেশ আকর্ষণীয়। শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় পর্যটকদের পদচারণে এখন মুখর শ্রীলঙ্কা।

রাতের ফ্লাইটে ঢাকা থেকে রওনা হয়ে ভোরে কলম্বো পৌঁছলাম। ট্রাভেল এজেন্সির প্রতিনিধিরা আমাদের অভ্যর্থনা জানিয়ে গাড়িতে বসালেন এবং অল্প সময়ের ব্যবধানে একটি রেস্তোরাঁয় নিয়ে গেলেন। অনেক ধরনের অপরিচিত খাবারের মধ্য থেকে পছন্দ করে নিতে হলো নাশতা। তারপর কফি পান করে গাড়িতে উঠে বসলাম। পুরো সফরে একটি গাড়ি আমাদের সঙ্গে ছিল, ভাড়া সহনীয় পর্যায়ের।

সফরের প্রথম দিন শুরু হলো। প্রায় চার ঘণ্টার পথ। যেতে হবে সিগিরিয়া। পথে কয়েকটি দর্শনীয় স্থান দেখে দেখে এগোতে হবে। তাতে চার ঘণ্টার বেশি লাগবে বলে মনে হলো। লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে গেস্টহাউসে উঠে একটু বিশ্রাম নিলাম। এরপর ইউনেসকোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ‘সিগিরিয়া রক ফরট্রেস’ দেখতে দেখতে সূর্যাস্ত দেখার সময় হয়ে গেল। সিগিরিয়া গেস্টহাউসে রাত কাটালাম।

সিগিরিয়া থেকে ক্যান্ডি রওনা হলাম সকালে, কয়েক ঘণ্টার পথ। শ্রীলঙ্কার মধ্যাঞ্চল প্রদেশে অবস্থিত ক্যান্ডি রাজধানী কলম্বোর পর দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। এটি শ্রীলঙ্কার প্রাচীন রাজাদের রাজধানী ছিল। এ শহর গড়ে উঠেছে পাহাড়ের পাদদেশে চা উৎপাদনকারী অঞ্চল হিসেবে। ধর্মীয় চেতনা এবং দেশের প্রশাসনিক হাব হওয়ায় এই শহরের বিশেষ পরিচিতি রয়েছে। পথে স্পাইস গার্ডেন দেখার পর সেখানকার পবিত্র বলে কথিত বৌদ্ধমন্দির দেখানো হলো আমাদের। উজ্জ্বল রোদ আর ঝলমলে দিন। কিন্তু উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় আরোহণ অনেক পরিশ্রম ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার বিবেচনায় আমরা পাহাড়ের নিচ থেকে চূড়ায় অবস্থিত মন্দিরটির বিভিন্ন স্থাপনা দেখলাম।

লাল মসজিদ, কলম্বো। ছবি: লেখকলাল মসজিদ, কলম্বো। ছবি: লেখক

সেই পাহাড় পেছনে রেখে আমরা ছবি তুললাম। ক্যান্ডি শহর ঘুরে দেখলাম। সেখানে গাছে গাছে লাফিয়ে বেড়ায় বানর এবং কালোমুখো হনুমানের দল। সব স্পটেই বিভিন্ন দেশের পর্যটকদের দেখা পাওয়া যায়।

পরদিন সকালে বেরিয়ে পড়লাম ক্যান্ডি থেকে নুওয়ারাএলিয়ার উদ্দেশে। সেখানে রয়েছে ন্যাশনাল পার্ক। অনেকে এল্লা ও নুওয়ারাএলিয়া নিয়ে তুলনা করে থাকেন। অল্প সময়ে প্রকৃতিকে ভালোবেসে তুলনামূলকভাবে ঠান্ডা জায়গায় যাঁরা থাকতে চান এবং চা পান করতে ভালোবাসেন, তাঁদের জন্য নুওয়ারাএলিয়া ভালো পছন্দ। সুন্দর সবুজের মাঝে শীত শীত আবহাওয়ায় নয়ন জুড়িয়ে যাবে সুশোভিত বাগানগুলো দেখে। খুব যত্নে বাগান পরিচর্যা করা হয় এখানে। এখানকার গ্রেগরি লেক বিশেষভাবে আকর্ষণীয়। নুওয়ারাএলিয়াকে ‘লিটল ইংল্যান্ড’ নামে ডাকা হয়। ব্রিটিশ আমলে তৈরি অট্টালিকা ও স্থাপনার জন্য এ শহর বিখ্যাত।

রোদের তাপ থেকে একটু রেহাই পেতে আমাদের সফর সংক্ষেপ করার পরিকল্পনা হলো। তবে ভ্রমণ কিছু কম হলো না। দেখলাম রাঙ্গিরি শ্রীলঙ্কা মিডিয়া নেটওয়ার্ক। এই নেটওয়ার্কের অন্তর্ভুক্ত রেডিও, টেলিভিশন ও সংবাদপত্রের কার্যালয়। এরপর দেখতে গেলাম ক্যান্ডি ওয়ার সিমেট্রি। ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ সালের যুদ্ধে নিহতদের স্মরণে নির্মিত হয়েছে এই সিমেট্রি।

জানা যায়, যুদ্ধে নিহতদের দেহ এখানে সমাহিত করা হয়নি। তবে তাঁদের স্মরণে নামফলক স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া এখানে দর্শনীয় রয়েছে হরটন প্লেইন ন্যাশনাল পার্ক, কয়েকটি জলপ্রপাত, গ্রেগরি লেক এবং কয়েকটি চা-বাগান।

নুওয়ারাএলিয়া পার্ক। ছবি: লেখকনুওয়ারাএলিয়া পার্ক। ছবি: লেখক

পরদিন আমরা ইয়ালা, গ্যাল্লে ও বেন্টোটা—এই তিন জায়গা ঘুরে দেখলাম। এঁকেবেঁকে চলা পাহাড়ি রাস্তা কখনো চলে গেছে উঁচু চূড়ায়।

সেখান থেকে নিচের দিকে তাকিয়ে বিস্মিত হতে হয়। মনে করতে হয় এক মহাজাগতিক অস্তিত্বের কথা।

সফরের পঞ্চম দিন ইয়ালা থেকে গ্যাল্লে গেলাম। সেখানে বিকেলে ওলন্দাজদের নির্মিত ঐতিহাসিক কেল্লা দেখলাম। সেখানকার প্রাচীন লাইটহাউস, যুদ্ধে ব্যবহৃত সমরাস্ত্র ও স্থাপনা নিয়ে যাবে কয়েক শ বছর আগে। সেখানে কচ্ছপের ডিম ফোটানোর কৃত্রিম ব্যবস্থাপনা পর্যটকদের বিশেষভাবে দেখানো হয়। এ ছাড়া মাদু নদীতে স্পিডবোটে কয়েক ঘণ্টার ট্রিপে দারুচিনি বাগান দেখানো হয়। সেখানে দারুচিনি, লবঙ্গ তেল, কয়েক রকম মসলা দেখানো এবং বিক্রি করা হয়। অনেক পর্যটক সেসব সংগ্রহ করে থাকেন।

কলম্বো লোটাস টাওয়ার। ছবি: লেখককলম্বো লোটাস টাওয়ার। ছবি: লেখক

শ্রীলঙ্কা মূল্যবান পাথরের জন্য বিখ্যাত। এসব পাথর সংগ্রহের পদ্ধতি দেখা এবং ফ্যাক্টরিতে সেগুলোর সূক্ষ্ম কাটিং ও পলিশিং পদ্ধতি দেখা যায়। যাঁরা গ্রহ-নক্ষত্র এবং মূল্যবান পাথরের

ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে উৎসাহী, তাঁদের জন্য এই ধরনের সুযোগ অপেক্ষা করছে শ্রীলঙ্কায়।

সফরের শেষ দিকে আমরা ক্যান্ডি চলে আসি। সেখান থেকে আরও দুই দিন ক্যান্ডি এবং আশপাশের দর্শনীয় জায়গাগুলো দেখি। কলম্বো এসে দেখলাম দর্শনীয় জামি-উল-আলফার মসজিদ, যা লাল মসজিদ নামে খ্যাত। এটি কলম্বোর একটি ঐতিহাসিক ও জনপ্রিয় পর্যটন স্থান। জানা যায়, এই মসজিদের নির্মাণকাজ শেষ হয় ১৯০৯ সালে। এই মসজিদ ইন্দো-সারাসেনিক কাঠামোর চিত্রের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিল। এটি একটি সংকর স্থাপত্যশৈলী, যা স্থানীয় ইন্দো-ইসলামিক এবং ভারতীয় স্থাপত্য থেকে অনুপ্রাণিত। সুশোভিত এই মসজিদে প্রায় দেড় হাজার মানুষ নামাজ আদায় করতে পারতেন। সম্প্রতি মসজিদসংলগ্ন বেশ কিছু জায়গা কিনে নিয়ে মসজিদের ধারণক্ষমতা ১০ হাজারে উন্নীত করতে সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়েছে।

মাদু নদীতে স্পীড বোটে দারুচিনি বাগান যাত্রা। ছবি: লেখক

মাদু নদীতে স্পীড বোটে দারুচিনি বাগান যাত্রা। ছবি: লেখক

কলম্বোর অন্যতম দর্শনীয় স্থাপনা লোটাস টাওয়ার। এর সিংহলি নাম নেলুম কুলুনা। এশিয়ার ১১তম এবং বিশ্বের ১৯তম উঁচু টাওয়ার এটি। এর উচ্চতা ১ হাজার ১৬৮ ফুট। একে শ্রীলঙ্কার আধুনিক উদ্ভাবন, প্রযুক্তি এবং শিক্ষার প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়। কলম্বো শহরে কেনাকাটার জন্য পেটাহ এলাকা বিশেষ সমৃদ্ধ। এই এলাকায় লোকজনের সমাগম ভালো, রাস্তায় ব্যস্ততা বিশেষভাবে লক্ষণীয়।

যাঁরা বেড়াতে পছন্দ করেন, তাঁদের অন্তত একবারের জন্য হলেও শ্রীলঙ্কা ঘুরে আসা উচিত।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Developed By ThemesBazar.Com