কোথাও ঘুরতে গেলে সেখানে আপনি নিরাপদ কি না, তা অবশ্যই একটি বড় ব্যাপার। নতুন একটি গবেষণায় বিশেষ করে একাকী যাঁরা ভ্রমণে বের হন, তাঁদের জন্য নিরাপদ ১০টি শহরের খোঁজ দেওয়া হয়েছে। গবেষণাটি করেছে ভ্রমণ নিয়ে কাজ করা লুকিং ফোর ডট কম। শহরগুলোয় অপরাধের মাত্রা, নিরাপত্তা সূচক ও টিকটক হ্যাশট্যাগকে বিবেচনায় এনেছে তারা তালিকাটি তৈরি করতে। এতে এক নম্বরে আছে জার্মানির শহর মিউনিখ। তালিকায় পরের জায়গাটি সুইজারল্যান্ডের জুরিখ। এ ছাড়া সুইজারল্যান্ডের আরও দুটি, রোমানিয়ার দুটি এবং চেক রিপাবলিক, ক্রোয়েশিয়া, ফিনল্যান্ড ও পোল্যান্ডের একটি করে শহর আছে তালিকায়।
মিউনিখ
মিউনিখে অপরাধের মাত্রা স্বাভাবিকভাবেই অনেক কম। প্রতি বছরেরঅক্টোবরে হওয়া অক্টোবরফেস্ট উৎসবের জন্য বিখ্যাত শহরটি। পুরোনো শহর পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। বাভারিয়ান এই শহরের সেন্ট্রাল স্কয়ার অর্থাৎ মারিয়েনপ্লাতজে শপিং করেও আনন্দ পান পর্যটকেরা।
গ্রীষ্মে শহরের ইংলিশ গার্ডেনে স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকদের ভিড় থাকে। নিমফেনবার্গ প্রাসাদ ও বিএমডব্লিউ জাদুঘর এখানকার দর্শনীয় স্থানগুলোর একটি। ১৯৭২ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক যেখানে হয়, সেই অলিম্পিক গার্ডেনে ভ্রমণের সুযোগও হাতছাড়া করতে চান না পর্যটকেরা। ইউরোপের সেরা চিড়িয়াখানাগুলোর একটি হেলাব্রান জুতেও ভ্রমণগন্তব্যের তালিকায় ওপরের দিকে থাকে।
জুরিখ, বাসেল ও বার্ন
সুইজারল্যান্ডের তিনটি শহর আছে তালিকায়। জুরিখ ২ নম্বরে, বাসেল ৮ ও বার্ন ৯ নম্বরে। জুরিখের ওয়েটলিবার্গ পর্বতে আরোহণ পর্যটকের পছন্দ। তবে তার আগে জুরিখ হ্রদের তীরের কোনো রেস্তোরাঁয় কিছুটা সময় কাটাতে ভুল করবেন না। শহরের মিউজিয়াম অব আর্টও পর্যটকদের টানে। এদিকে পুরোনো শহরে ঐতিহাসিক সব গির্জা আর চত্বরের দেখা পাওয়া যায়। এখানকার রেস্তোরাঁগুলোয় নাশতা করতে আশপাশের দৃশ্য উপভোগ করা অনেক পর্যটকেরই পছন্দ।
বাসেলে প্রতি বর্গকিলোমিটারে গড়ে একটির বেশি জাদুঘর আছে। গোটা শহরে মোট জাদুঘরের সংখ্যা চল্লিশের বেশি। বাসেলের মাঝখান দিয়ে চলে গেছে রাইন নদী। ছয়টি দৃষ্টিনন্দন সেতু শহরের দুই অংশকে জোড়া লাগিয়েছে।
অন্যদিকে রাজধানী শহর বার্ন পর্যটকদের স্তব্ধ করে এর অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য। চুনাপাথরের একটা পার্বত্য এলাকায় গড়ে উঠেছে শহরটি। তিন দিক থেকে ঘিরে আছে রাইনের একটি শাখা। এখনো অনেকটা মধ্যযুগীয় চেহারায় রয়ে যাওয়া বার্ন কিন্তু ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট।
তবে সমস্যা হলো সুইজারল্যান্ডের শহরগুলো সব সময়ই বেশ খরুচে।
প্রাগ
তালিকায় ৩ নম্বরে আছে চেক প্রজাতন্ত্রের প্রাগ। নানা ধরনের স্থাপত্যরীতির দালানকোঠা ও স্থাপনার জন্য বিখ্যাত চেক প্রজাতন্ত্রের শহরটি। এখানকার প্রাগ ক্যাসলের সীমানার ভেতরে ঘুরে বেড়ানো পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় ওপরের দিকে থাকে। ৮৭০ সালের দিকে চারপাশে দেয়ালঘেরা একটি দুর্গ হিসেবে এটি তৈরি করা হয়। পরে অবশ্য সময়ের সঙ্গে এতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। গত শতকের অসাধারণ স্থাপত্যকীর্তির উদাহরণ বলা যায় একে। এর সীমানায় পড়েছে সেন্ট ভিটাস ক্যাথেড্রাল, সেন্ট জর্জ বাসিলিকা, ওল্ড রয়েল প্যালেস, গোল্ডেন লেনের মতো পর্যটকদের প্রিয় গন্তব্যগুলো। ৬২১ মিটার দীর্ঘ চার্লস সেতুও শহরটির অন্যতম আকর্ষণ। ওয়েনচেস লাস চত্বরে পাবেন দেশটির জাতীয় জাদুঘরসহ আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। প্রাগ জাদুঘর, প্রাগের ন্যাশনাল লাইব্রেরিও পর্যটকদের আকৃষ্ট করে।
জাগরেব
তালিকার ৪ নম্বরে আছে ক্রোয়েশিয়ার শহর জাগরেব। দেশটির রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র বলা চলে শহরটিকে। জাগরেবের আপার টাউনের লাল টালির ছাদের দালানগুলো নজর কাড়ে পর্যটকদের। এখানে পার্লামেন্ট ভবন, বেশ কিছু জাদুঘর আর গির্জা আছে। শহরের এই অংশের টকালসিসেভা স্ট্রিট ধরে হাঁটার মজাও আলাদা। দুই পাশের রেস্তোরাঁ আর নানান পণ্যসামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসা দোকানগুলোও টানবে। লোয়ার টাউনেও জাগরেব উদ্ভিদ উদ্যান, দ্য মডার্ন গ্যালারিসহ দেখার মতো অনেক কিছুই আছে।
তিমিসোরা ও ক্লুজ-নাপোকা
রোমানিয়ার শহরগুলো কম খরচে ঘুরে আসার জন্য ভালো। তালিকায় পাঁচে আছে এখানকার শহর তিমিসোরা, আর দশে ক্লুজ-নাপোকা। ‘সিটি অব ফ্লাওয়ারস’ বা ফুলের শহর হিসেবে পরিচিত তিমিসোরায় ঘুরে বেড়াবার মতো অনেক গাছপালাময় জায়গা পাবেন। প্রচুর ঐতিহাসিক স্থাপনাও আছে শহরটিতে। এখানকার মেট্রোপলিটন অর্থোডক্স ক্যাথেড্রালের মোজাইকের টালির ছাদ আর গ্যালারির জন্য বিখ্যাত। অন্যদিকে ক্লুজ-নাপোকা পড়েছে দেশটির ট্রান্সসিলভানিয়া অঞ্চলে। নানা ধরনের ফেস্টিভ্যাল বা উৎসবের জন্য বিখ্যাত শহরটি। আছে চমৎকার সব পার্ক, জাদুঘর। বিখ্যাত হইয়া বাচিও জঙ্গলের অবস্থানও এখানেই।
হেলসিঙ্কি
ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কি আছে তালিকার ৬ নম্বরে। গালফ অব ফিনল্যান্ডের উত্তর উপকূলে এর অবস্থান। ১৮০৮ সালে আগুনে শহরের বড় একটি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে নতুন করে তৈরি করা হয়। চওড়া রাস্তা, প্রচুর পার্কের জন্য বিখ্যাত শহরটি। হেলসিঙ্কির পোতাশ্রয়ে দিনে বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা শ তিনেক প্রমোদতরি নোঙর করে। শহরের মাঝখানে অবস্থিত মার্কেট স্কয়ার ঘোরাফেরা ও কেনাকাটার জন্য বিখ্যাত।
ক্রাকুফ
পোল্যান্ডের শহর ক্রাকুফের অবস্থান তালিকার ৭-এ। ওল্ড টাউন বা পুরোনো শহর ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। এখানকার রাইনেক গওনি বা মার্কেট স্কয়ার, রেনেসাঁ স্থাপত্যরীতির ক্লথ হল, ফার্মেসি জাদুঘর, সেন্ট মেরি’জ বেসিলিকা, চার্চ অব সেন্ট অ্যান উল্লেখযোগ্য।
সূত্র: লুকিং ফোর ডট কম, প্ল্যানেট ওয়ার ডট কম, ডেইলি এক্সপ্রেস