একদিকে গ্রাম, আরেক দিকে খাল। খালের উত্তর দিকে সবুজ ঝোপঝাড়ে ঘেরা বিল। হেমন্তের কুয়াশামাখা সকালে সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ মহাসড়কের কাটাখাল ব্রিজের ওপর থেকে ডান দিকে তাকালেই চোখে পড়ে বিলের পানিতে লাল শাপলার হাসি। উদিত সূর্যের আলো বিলের পানিতে মুক্তাদানার মতো চিকচিক করে। বিলে ফুটে থাকা অজস্র শাপলা ফুলের ওপর অতিথি পাখির কিচিরমিচির আওয়াজে মন চায় বিলের কাছে গিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করি।
রামাইল গ্রাম লাগোয়া কাটাখালের পাশে বিলের অবস্থান। প্রাকৃতিক বিলটি স্থানীয় মানুষের মুখে ‘ছোট রামাইল বিল’ নামে পরিচিত। বর্ষায় গ্রামসহ পুরো রামাইল বিল পানিতে টইটুম্বুর থাকে। বর্ষার শেষে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে রামাইল বিলে ফুটতে শুরু করে শাপলা ফুল। হেমন্ত থেকে শীতে শাপলা ফোটা বিলে আবাস গড়ে পরিযায়ী পাখি। সেসব পাখির কলতানে ভারী হয় পুরো রামাইল বিল।
কাছে গেলে যে কাউকেই মুগ্ধ করবে পুরো বিলের সৌন্দর্য। শাপলার লতাপাতায় ঢাকা পড়েছে বিলের পানি। শাপলার ডগায় নাচছে ফড়িং। ফুটে থাকা শাপলা ফুলের পাতায় বসে কিচিরমিচির করছে পরিযায়ী পাখি। মানুষের উপস্থিতি টের পেলেই পাখিগুলো আকাশ উড়ে আগত মানুদেরই যেন অভ্যর্থনা জানায়। খানিক পরপরই চোখে পড়বে বিলের হাঁটুপানিতে শাপলা-শালুক তুলছে গ্রামের শিশু-কিশোরেরা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর, উৎমাছড়া, তুরংছড়া দেখতে অনেক পর্যটকই আসেন। তবে সড়কের পাশে রামাইল বিলের সৌন্দর্য অনেকের কাছে অচেনা। বিলটি হতে পারে কোম্পানীগঞ্জের আরও একটি দর্শনীয় স্থান। সাদাপাথর দেখতে আসা পর্যটকেরা চাইলে এখানে নেমে রামাইল বিল ঘুরে দেখতে পারেন।
রামাইল বিলে শাপলার সৌন্দর্য দেখতে চাইলে শীতের আগেই আসতে হবে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি, শাপলা বিল স্থানীয় মানুষের জীবনযাপনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে শীতের আগে বিল সেচে মাছ শিকার করেন স্থানীয় লোকজন। পাশাপাশি সেচকাজের জন্যও বিল থেকে পানি ব্যবহার করেন গ্রামের মানুষ। তাই সুন্দর রামাইল বিলের সৌন্দর্য উপভোগের এখনই সেরা সময়। সিলেটে ভ্রমণে যদি প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে চান, তবে শাপলা বিল অবশ্যই আপনার ভ্রমণের তালিকায় রাখতে পারেন।
রামাইল শাপলা বিলে পৌঁছানোর জন্য সিলেট শহর থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরত্বে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার কাটাখালে যেতে হবে। তেলিখাল বাজারের আগেই কাটাখালের অবস্থান। সিলেট থেকে কোম্পানীগঞ্জে যাওয়ার জন্য বিআরটিসি বাস, সিএনজি অটোরিকশা অথবা ভাড়া করা গাড়ি ব্যবহার করা যেতে পারে। ব্যক্তিগত গাড়ি কাটাখাল এলাকায় সড়কে পাশে রেখে ১০ মিনিট হেঁটে বিলে যাওয়া যাবে। চাইলে মোটরসাইকেলেও সরাসরি যেতে পারেন। সিলেট থেকে কোম্পানীগঞ্জের বাসভাড়া জনপ্রতি ৪৫ টাকা। সিএনজি অটোরিকশায় জনপ্রতি ৭০ টাকা ভাড়া।
তেলিখাল বাজারে স্থানীয় নাশতার দোকান রয়েছে। চাইলে এখানে সকালে চা–নাশতা সেরে নিতে পারেন।