বালি, সূর্য, সাগর ও উন্মুক্ত পরিবেশে যৌনক্রীড়া- স্পেনের স্বায়ত্বশাসিত দ্বীপপুঞ্জ ক্যানারি আইল্যান্ডসের সৈকতগুলোর কথা উঠলে এ শব্দগুলোই সবার আগে মনে আসে। সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি সেখাকার মুক্ত পরিবেশে যৌনক্রীড়ায় মেতে ওঠা পর্যটকদের জন্য আলাদা আকর্ষণ।
দ্বীপপুঞ্জটির কোনো দ্বীপের কর্তৃপক্ষ এ পর্যন্ত এই ব্যাপারে কোনো আপত্তি তোলেননি; কিন্তু পরিবেশবাদীরা জানিয়েছেন, সৈকতে উন্মুক্ত পরিবেশে পর্যটকদের উদ্দাম মিলনের ফলে সৈকতের পরিবেশ ও বাস্তুসংস্থান ব্যপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সৈকতে উন্মুক্ত পরিবেশে যৌন মিলনকে স্থানীয়ভাবে বলা হয় ‘ক্রুইজিং’। ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের সৈকতগুলো বালিয়াড়ি বা বালির টিলায় পরিপূর্ণ। সঙ্গী বা যৌনকর্মীদের সঙ্গে ক্রুইজিংয়ের জন্য এই বালির টিলার আড়ালকে ব্যবহার করেন পর্যটকরা।
ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের পরিবেশবিদরা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে টিলায় যত্রতত্র পর্যটকদের যৌনক্রীড়ায় মেতে ওঠার ফলে বালিয়াড়িকে আশ্রয় করে বেড়ে ওঠা গাছপালার বংশ বিস্তারে ক্ষতি হচ্ছে। ১০ প্রজাতির গাছ ও গুল্ম ইতোমধ্যে হারিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন তারা।
সাম্প্রতিক একই গবেষণার জন্য গবেষকরা যে কয়েকটি সৈকত বেছে নিয়েছিলেন, ঘটনাচক্রে তার সবগুলোই সমকামী পর্যটকদের জন্য নির্দিষ্ট।
তবে গবেষণার সঙ্গে যুক্ত পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এটি নেহাতই একটি কাকতালীয় ব্যাপার। গবেষক দলের অন্যতম সদস্য ও স্পেনের ইউএলপিজিসি ইনস্টিটিউটের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. গার্সিকা রোমেরো ব্রিটিশ দৈনিক দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টকে বলেন, ‘এটা একেবারেই কাকতালীয় ব্যাপার। সমকামীদের প্রতি আমাদের কোনো বিদ্বেষ নেই, তাদের অধিকারে হস্তক্ষেপ করারও কোনো ইচ্ছে আমাদরে নেই।’
‘আমাদের গবেষণার মূল লক্ষ্য হলো সৈকতের পরিবেশ ও বাস্তুসংস্থান রক্ষা করা। একটি এলাকার বাস্তুসংস্থানের জন্য গাছ কতখানি গুরুত্বপূর্ণ তা আমরা সবাই জানি।’
‘উন্মুক্ত পরিবেশে যৌনক্রীড়ার কারণে যে গাছগুলো আমদের সৈকতসমূহ থেকে হারিয়ে গেছে, সেগুলোর ওপর নির্ভরশীল ছিল একাধিক প্রাণী। গাছগুলো হারিয়ে যাওয়ার ফলে তারা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে…. বাস্তুসংস্থান এমন একটি ব্যবস্থা, যার একটি উপদান ক্ষতিগ্রস্ত হলে অন্যান্য উপাদানের ওপরও তার প্রভাব পড়ে এবং সার্বিকভাবে পরিবেশের ক্ষতি হয়।’
গবেষক দলের অন্যতম সদস্য ও ফ্লিন্ডার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক প্যাট্রিক হেস্প বলেন, ‘পর্যটকদের বিষয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। আমরা শুধু চাই, সৈকতগুলোর পরিবেশ ও বাস্তুসংস্থান ঠিক রাখার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ যেন যত্নবান হয়।’
আগামী জানুয়ারিতে তাদের গবেষণা প্রবন্ধ আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী জার্নাল অব এনভায়ার্নমেন্টাল ম্যানেজমেন্টে ছাপা হবে বলে জানিয়েছেন প্যাট্রিক।