শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:২৬ অপরাহ্ন

পরিবারের জন্য সবকিছু বিলিয়ে দেওয়ার নামই প্রবাস জীবন

  • আপডেট সময় সোমবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৩

প্রবাসে পা রেখে পরিবারের কথা অনেক বেশি মনে পড়তো। খুবই কষ্ট হতো বাবা-মাকে ছাড়া থাকতে। কিন্তু ধীরে ধীরে সব ব্যথা সয়ে গেছে নীরবে। প্রথম প্রথম কাজে এসে ফোরম্যানের ঝাড়ি, বসের ক্যাঁচরম্যাচর খুব বিরক্ত লাগতো। মনে মনে এত রাগ হতো বলার ভাষা থাকতো না।

কিন্তু নির্মম বাস্তবতা সবকিছুই মানাতে বাধ্য করেছে আমাকে। খাবার নামের ক্যাটারিং, প্রথম প্রথম গলার অর্ধেক পর্যন্ত ঢুকে আবার ফিরে আসতে চাইতো, গ্যাস্ট্রিকও প্রচণ্ড রকমের বেড়ে যেতো। কিন্তু ধীরে ধীরে অভ্যাস হয়ে গেছে। লোহার খাটের শক্ত প্লাইউডের বিছানায় শুতে খুব কষ্ট হতো, কিন্তু তাও শরীর মানিয়ে নিয়েছে।

রাতে সারপোকার কামড়ে ঘুম ভেঙে গেলে, চোখে পানি চলে আসতো রাগে কষ্টে। কিন্তু ধীরে ধীরে সেটাও সয়ে গেছে। মাস শেষে হাজার হাজার টাকা বেতন পেয়ে, বাড়িতে টাকা পাঠানোর পর যখন মাসের অর্ধেক দিন শেষ না হতেই খরচের টাকা ফুরিয়ে যেতো তখন বুকফেটে কান্না আসতো। কিন্তু এখন তাও সয়ে গেছে।

পরিবারের সবার জন্য এত কিছু করার পরেও, যখন তারা বলে তুমি কী করেছে? কিছুইতো করোনি আমাদের জন্য; এ কথা শুনে প্রথম প্রথম নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে হতো, কিন্তু এখন সবই অভ্যস্ত হয়ে গেছি।

প্রবাসে মানুষগুলো কত স্বার্থপর, নতুন নতুন খুব অবাক হতাম, বিদেশে মানুষের কথা আর ব্যবহার দেখে, এখন সব অভ্যাস হয়ে গেছে। করোনার প্রথম লগ্নে, ডরমিটরির বন্দি জীবন মৃত্যুর থেকেও যন্ত্রণার মনে হতো, কিন্তু ইচ্ছা অনিচ্ছায় সেটাও এখন জীবনের সঙ্গে মানিয়ে গেছে, আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি।

মহামারির শুরুতে মাস্ক মুখে দিতেই দম বন্ধ হয়ে মরার উপক্রম হতো, আর আজ যেনো মাস্কহীন নিজেকে অপূর্ণ মনে হয়। প্রবাসী মানেই সয়ে নেওয়া, যেকোনো স্থানে, যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া। প্রবাসী মানেই, বিনা সংকোচে, একবাক্যে সব কিছু নীরবে সহ্য করা।

প্রবাসী মানেই পরিবারের তরে নিজের জীবনটাকে বিলিয়ে দেওয়া। স্যালুট এক কোটি প্রবাসী বাংলাদেশিকে।

সুমন সিকদার, সিঙ্গাপুর

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com