1. [email protected] : চলো যাই : cholojaai.net
পরিত্যক্ত গ্রাম পেয়েছে নতুন জীবন
সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ০৪:৫৫ পূর্বাহ্ন

পরিত্যক্ত গ্রাম পেয়েছে নতুন জীবন

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১১ জুলাই, ২০২৫

জাপানের গ্রামীণ জনপদে জনসংখ্যা দ্রুত কমে যাচ্ছে। শহরমুখী মানুষের ঢলে গ্রামগুলো ফাঁকা হয়ে পড়ছে। এই বাস্তবতায় শিক্ষার্থীর অভাবে প্রতিবছর প্রায় ৪৫০টি করে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

এই সংকটের মধ্যেই তৈরি হয়েছে নতুন এক দৃষ্টান্ত। যেসব স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে, সেগুলোকে বদলে ফেলা হচ্ছে ক্যাফে, অফিস কিংবা অতিথিশালায়। এমনই এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ হলো ‘হারে তো কে’।

জাপানের চার প্রধান দ্বীপের মধ্যে ক্ষুদ্রতম শিকোকুর পার্বত্য অঞ্চল মিয়োশিতে অবস্থিত ‘হারে তো কে’। এটি একসময় ছিল ‘দেইয়াই’ নামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ২০০৫ সালে শিক্ষার্থী সংখ্যা পাঁচজনে নেমে এলে বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যালয়টি। স্থানীয় সংবাদপত্রের তথ্য অনুসারে, ১৯৪৫ সালে স্কুলটির জমজমাট সময়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৫০০ জনের বেশি। কিন্তু জাপানের গ্রামগুলোর বিপুল শহরমুখী প্রবণতার কারণে স্কুলটি ক্রমশ জনশূন্য হয়ে পড়ে। আট বছর অব্যবহৃত থাকার পর ২০১৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে স্কুলটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

এমন অবস্থায় টোকিওভিত্তিক নকশাকার শুকো উয়েমোতোই এগিয়ে আসেন এক অভিনব ধারণা নিয়ে। তিনি ২০১৪ সালে দুই বছরের ছেলেকে নিয়ে প্রথম মিয়োশিতে আসেন এবং স্থানটির নিস্তব্ধ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন। পাহাড়ের শান্ত বাতাস ও বিশুদ্ধ পানিতে তাঁর ছেলের হাঁপানির লক্ষণ হঠাৎ কমে যায়। তখনই তিনি ভাবতে শুরু করেন, এই জায়গা শুধু প্রকৃতির জন্য নয়, মানুষের মানসিক ও শারীরিক প্রশান্তির জন্যও বিশেষ কিছু হতে পারে।

শুকো উয়েমোতোই স্থানীয় প্রশাসনের স্কুল পুনর্ব্যবহার প্রকল্পে আবেদন করে তিন বছরের একটি পরিকল্পনা জমা দেন। তারপর স্থানীয়দের সহযোগিতায় গড়ে তোলেন ‘হারে তো কে’ নামের অতিথিশালাটি। নামের মধ্যেই লুকিয়ে আছে এর দর্শন। ‘হারে’ মানে উৎসব বা বিশেষ দিন আর ‘কে’ অর্থ প্রতিদিনকার সাধারণ জীবন। জাপানের ঐতিহ্য অনুযায়ী, এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য থাকাটাই সুখী জীবনের চাবিকাঠি।

ハレとケ-6_R-800x600

এই অতিথিশালায় অতিথিদের জন্য থাকে হ্যান্ডমেইড পিৎজা ডিনার, হারবাল ইনফিউশন, অ্যারোমাথেরাপি, পাহাড়ি হাওয়ায় বিশ্রাম। এই অতিথিশালার বিশেষ আকর্ষণ স্লিপ ট্রিপ। এর মাধ্যমে অতিথিরা ঘুমের এক ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতা পেয়ে থাকেন। শীতল বাতাস, নিস্তব্ধ রাত, বন থেকে ভেসে আসা হরিণের ডাক আর ঝরনার শব্দ তাঁদের কাঙ্ক্ষিত শান্তির ঘুম এনে দেয়।

স্কুলটির পুরোনো কাঠামো যতটা সম্ভব অক্ষত রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। দেয়ালে এখনো আঁকা আছে শিক্ষার্থীদের পুরোনো গ্র্যাজুয়েশন ছবি, ক্লাসরুমে রাখা আছে পুরোনো ব্ল্যাকবোর্ড আর চশমা টেস্ট চার্ট। বাইরের মাঠে স্থানীয় প্রবীণেরা গেটবল খেলেন, ঠিক যেমনটা তাঁরা ছোটবেলায় করতেন।

Credit-Hare-to-Ke-৫

মিয়োশির অন্তত ১৩টি বন্ধ স্কুল ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা হয়েছে। সেগুলোর কোথাও হয়েছে কমিউনিটি সেন্টার, কোথাও আবার গেস্টহাউস। এতে শুধু ঐতিহ্য বেঁচে থাকছে না, নতুন কর্মসংস্থানও তৈরি হচ্ছে।

এই অতিথিশালায় অতিথিরা অংশ নিতে পারেন স্থানীয় রান্নার ক্লাসে ও মাসিক নৈশবাজারে। আর চাইলে দেখতে পারেন ৯০০ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী মাউন্ট সুরুগি উৎসব, যেখানে স্থানীয়রা সাদা পোশাকে মন্দিরের প্রতীকী রথ নিয়ে উঠে যান প্রায় ২ হাজার মিটার উঁচু পাহাড়ে।

‘হারে তো কে’ শেখায় পরিত্যক্ত ভবনও ব্যবহার করা যেতে পারে দারুণভাবে; যা শহুরে মানুষকে ফিরিয়ে আনবে গ্রামে, আর গ্রামকে দেবে নতুন জীবন।

সূত্র:বিবিসি

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Developed By ThemesBazar.Com