বাঙালির আবেগ, উৎকণ্ঠা, উৎসাহ ও উদ্দীপনার আরেক নাম পদ্মা সেতু। নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত এই সেতু উদ্বোধনের এক বছর পূরণ হলো আজ। পদ্মা সেতু চালুর পর দেশের অর্থনীতির বাঁক বদলের সূচনা হয়েছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি দারিদ্র্যপীড়িত জেলার উন্নয়নে হয়েছে গতি সঞ্চার। পর্যটন, কৃষি, শিল্প-প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের মধ্যে দিয়ে এক সময় এই পদ্মা সেতুই হবে দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি।
তথ্যমতে, পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের মধ্যে দিয়ে যেমন দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের দ্বার উন্মোচিত হয়েছে, তেমনি অর্থনীতিতেও দেখা দিয়েছে উন্নয়নের অপার সম্ভাবনা। সেতুর ওপর দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১৬ হাজার যানবাহন যাতায়াত করছে। এতে, দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের বেঁচে যাচ্ছে হাজার কোটি টাকার কর্মঘণ্টা। বসরকারি-বেসরকারিভাবে হচ্ছে নানা প্রকল্প। গড়ে উঠেছে কৃষিভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠান, কমেছে বেকারত্বের হার। মংলা বন্দরের এসেছে পরিবর্তনের ছোঁয়া।
শুধু তাই নয়, পদ্মা সেতুর সুফল পাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের পর্যটন খাতও। বিশেষ করে সুন্দরবন ঘিরে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সমাগম বেড়েছে। ঘুরে দাঁড়িয়েছে হিমায়িত মৎস্য শিল্প। রপ্তানি বেড়েছে চিংড়িসহ দেশীয় অন্যান্য মাছের।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, পদ্মা সেতুর রেল ও গ্যাসের সংযোগ কার্যকর হলে সেতুকে ঘিরে পর্যটন, শিল্পায়ন, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ বাড়বে। এতে বেকারত্ব আরও কমবে, দারিদ্র্য সমস্যা সমাধানেও ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, জমি ও গ্যাসের সংযোগ সঠিক সময়ে দেওয়ার পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারলে দক্ষিণাঞ্চলে বড় ধরনের শিল্পনগর তৈরির সুযোগ রয়েছে। আর এটি হলে পদ্মা সেতুর পরিপূর্ণ ইতিবাচক প্রভাবটা আমরা অর্থনীতিতে পাব।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) রিসার্চ ফেলো ড. মাহফুজ কবির জানান, পদ্মা সেতুকে ঘিরে নতুন করে অর্থনৈতিক মহাপরিকল্পনা করতে হবে। এটি আগামী পাঁচ থেকে ১০ বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে পারলে শুধু দক্ষিণাঞ্চল নয়, পুরো বাংলাদেশের অর্থনীতির চিত্রটাই পাল্টে যাবে।
সরকারি গবেষণায়, পরোপুরি চালু হলে দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে এক দশমিক ২-৩ শতাংশ অবদান রাখবে এ সেতু। আর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপি বাড়বে ২ দশমিক ৩ শতাংশ।
সূত্র : আরটিভি