শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:০২ পূর্বাহ্ন

নেপাল ভ্রমণ

  • আপডেট সময় শনিবার, ৫ আগস্ট, ২০২৩

মার্চ মাসে ঢাকার আকাশ কালো করে বৃষ্টি নামাটা অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। সেদিনও তাই হলো। দুপুর থেকে আকাশে কালো মেঘ থাকলেও বৃষ্টি নামল ঠিক ৪টা নাগাদ। রাতে ভারতযাত্রার ট্রেনের টিকিট কাটা আছে। মার্চের গরমে সিমলা-মানালি গেলে মন্দ হয় না। কিন্তু সবকিছু ঠিক থাকলেও মনের অবস্থা আকাশের কালো মেঘের মতো। মন চাইছিল ভিন্ন কিছু। ভিসা প্রাপ্তির সহজলভ্যতার কথা বিবেচনা করে কয়েক মুহূর্তের মধ্যে নতুন গন্তব্য ঠিক হলো হিমালয় আর গোর্খা জনগোষ্ঠীর দেশ নেপাল।

ঢাকার বিষণ্ন আর ধূসর দৃশ্যপট পেছনে ফেলে উড়ে চললাম ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশে। রাজধানী কাঠমান্ডুর ভূমির দিকে তাকাতেই চোখে পড়ে মুরগির খোপের মতো ছোট ছোট ঘরবাড়ি। সবই প্রায় কাছাকাছি উচ্চতার। গাছগাছালি তেমন একটা নেই। নেপালে সাত রাত আট দিন থাকার সময় সুউচ্চ ভবন খুব কমই চোখে পড়েছে। নেই পোস্টার, বিলবোর্ডের দৃশ্য দূষণও। ফলে ভূমি থেকে নীল আকাশ খুব সহজে চোখে পড়ে।

ত্রিভুবন বিমানবন্দরে নামার পর শুরু হয় ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া। এখানে প্রয়োজনীয় কথাটা বলে রাখা যাক। বিবিধ কারণে আকাশপথে নেপাল যাওয়ার খরচ অনেকটাই বেড়েছে। ফলে কয়েক দিন আগে টিকিট কেটে রাখলে খরচ কিছুটা কমতে পারে। নেপালে ‘এক্সচেঞ্জ’-এর জন্য বাংলাদেশি টাকা নিয়ে যাওয়াটা বোকামি। এখানে রুপি, ডলারসহ অন্য দেশের মুদ্রার কদর থাকলেও বাংলাদেশি টাকার নেই। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান টাকার বিপরীতে নেপালি রুপি এক্সচেঞ্জ করে, কিন্তু মান খুবই কম। ধরুন, ১০ হাজার টাকা এক্সচেঞ্জ করলে নেপালি রুপি পাওয়া যায় ৬ থেকে ৭ হাজার। তাই ডলার নিয়ে নেপাল যাওয়াই উত্তম।

ঢাকা বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশকে ‘ফেস’ করতে সঙ্গে রাখুন এনওসি/ট্রেড লাইসেন্স/স্টুডেন্ট আইডি কার্ড। তবে ত্রিভুবন বিমানবন্দরে পৌঁছে ১৫ দিনের ফ্রি ভিসা পেতে এত কিছু লাগে না। তথ্য ফরম পূরণের জন্য কয়েকটি কম্পিউটার রাখা আছে, সেখানে পাসপোর্ট স্ক্যান করে সাধারণ কিছু তথ্য জমা দিন। সে ফরমের ছবি তুলে রাখুন ফোনে। লাইন ধরে এবার ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার কাছে যান। পূরণ করা ফরম আর পাসপোর্টের তথ্য ঠিক থাকলে পেয়ে যাবেন অন অ্যারাইভাল ভিসা। সার্কভুক্ত দেশগুলো থেকে নেপালে প্রথমবার ভ্রমণ করলে ভিসা প্রসেসিং ফি নেই। তবে দ্বিতীয় দফায় ভ্রমণ করলে ৩০ ডলার দিতে হয়। আপনি যদি প্রথমবার নেপাল যান, তাহলে বিমানবন্দরের কম্পিউটারে ফরম পূরণের সময় খেয়াল রাখুন; অনলাইন ফরমে বাই ডিফল্ট ভিসা ফি ৩০ ডলার নির্বাচন করা থাকে। তাই ভিসার ধরন নির্বাচনের সময় সেটি পরিবর্তন করে ১৫ দিনের ফ্রি ভিসার অপশনে ক্লিক করুন।

প্রক্রিয়াটা বুঝতে অসুবিধা হলেও সমস্যা নেই। সেখানে যাত্রীদের সহায়তা করার জন্য একজন বিমানবালা ও কয়েকজন কর্মী নিয়োজিত থাকেন। সাহায্যের জন্য তাঁদের কাউকে ডাকুন। বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার পথে ৫০০ নেপালি রুপিতে কিনে নিন সিম কার্ড।

এসব প্রক্রিয়া শেষে এবার ট্যাক্সি ভাড়া করে যাত্রা শুরু করি হোটেলের উদ্দেশে। বুকিং ডট কমে আগে থেকেই হোটেল বুক করে রেখেছিলাম। আপনি ভ্রমণ পরিকল্পনার সময় বুকিং ডট কম ঘেঁটে হোটেল ও ভাড়া দেখে নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে নেপাল ভ্রমণে থাকার পেছনে কত খরচ হতে পারে, সে ধারণা পেয়ে যাবেন। তবে দেশটিতে স্বল্প দূরত্বে যেতেও গাড়ি ভাড়া অনেক বেশি। বিমানবন্দর থেকে থামেলে যেতে ট্যাক্সিচালকেরা ১ হাজার রুপিও চেয়ে বসতে পারে। আপনি দর-কষাকষিতে পটু হলে তা এখানে বেশ কাজে দেবে।

পুরো নেপালে বসবাস প্রায় তিন কোটি মানুষের। তাই বিকেল বা সন্ধ্যায় শহরের মূল সড়কগুলোতেও যানজট তেমন একটা থাকে না। ফুটপাতও বেশ পরিষ্কার। হেঁটে ঘুরে শহর দেখতেও খুব একটা অসুবিধা হয় না। রাতের থামেল বেশ আলোকোজ্জ্বল। নানান দেশ থেকে আসা পর্যটকদের আনাগোনা সবখানে। সন্ধ্যায় সবার ঠিকানা হয়ে ওঠে রেস্তোরাঁ কাম বারগুলো।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com