নেপালের সবচেয়ে দর্শনীয় স্থান গুলোর ৫ম স্থানে আছে লুম্বিনি। নেপালের তীর্থ যাত্রীদের কাছে এই লুম্বিনি খুবই জনপ্রিয় একটি স্থান। কারণ, ধারণা করা হয়, এটাই সম্ভবত গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান। এর অবস্থান নেপালের দক্ষিণ পশিমাঞ্চলের একটি ছোট্ট শহর – রুপানদেহি জেলায়। প্রত্নতাত্ত্বিক ভাবে এর বেশ গুরুত্ব রয়েছে কেননা এটি ৫৫০ খ্রিস্টপূর্বের নিদর্শনও বহন করছে। সংস্কৃত ভাষায় লুম্বিনি অর্থ সুন্দর।
কথিত আছে গৌতম বুদ্ধের মা, মায়া দেবী, এখানে বাগানের একটি গাছের কাছে তার জন্ম দিয়েছিলেন। সেখানে ছোট একটি পার্কের মাঝে মায়া দেবীর নামানুসারে ‘মায়া দেবী মন্দির‘ নামে একটি মন্দির নির্মাণ করা হয়েছে। সারা বিশ্ব থেকে বৌদ্ধ তীর্থযাত্রীদের এই তীর্থস্থান ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
নেপালের সবচেয়ে দর্শনীয় স্থান গুলোর লিস্টে পরবর্তী স্থানে আছে রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে ২০০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত পোখরা। জনসংখ্যার দিক দিয়ে এটি নেপালের ২য় বৃহত্তম শহর হলেও দেখে তা মনেই হবে না। শহরটি খুবই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। তার সাথে মনোরম জলবায়ু এবং নির্মল বাতাস। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর নেপালের এই পোখরা শহরকে বলা হয় “নেপাল রানী” ও “নেপালের ভূস্বর্গ”। শহরটি পৃথিবীর সর্বোচ্চ কিছু পর্বতশৃঙ্গ দ্বারা ঘিরে রয়েছে যারা হল – ধৌলাগিরি, মানসলু, এবং অন্নপূর্ণা ১।
পোখরার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম হল নেপালের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক লেক, ফেওয়া লেক। লেকের মাঝামাঝি স্থানে “বারাহি হিন্দু মন্দির” নামে একটি হিন্দু মন্দির আছে। এছাড়া পোখরার আরো কিছু দর্শনীয় স্থান হল ডেভিস ফল, মহেন্দ্র গুহা, শরনকোট, ইন্টারন্যাশনাল মাউন্টেন মিউজিয়াম, গুরখা মেমোরিয়াল মিউজিয়াম, তিব্বতিয়ান বুদ্ধীজম মোনাষ্ট্রী ইত্যাদি। তাছাড়া ট্রেকারদেরর জন্য, পোখরা হিমালয়ের গেটওয়ে এবং এটি জমসম ও অন্নপূর্ণা অঞ্চলের ট্রেকগুলির শুরুও হয় পোখরা থেকেই।
নেপালের সবচেয়ে দর্শনীয় স্থান গুলোর লিস্টে ৩য় স্থানে আছে ভক্তপুর। এর অবস্থান রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে। নেপালের প্রাচীন রাজধানীটি ছিল প্রাচীন রাজ-রাজাদের আবাসস্থল। শহরটির বুদগাঁও ও খৌপা নামে আরো দুইটি নাম রয়েছে। শহরটি মধ্যযুগীয় শিল্প-সাহিত্য, কাঠের কারুকাজ, ধাতুর তৈরি মূর্তি ও আসবাবপত্রের জন্য বিখ্যাত। এখানে দেখা যায় বৌদ্ধ ও হিন্দু মন্দিরের অপূর্ব সমন্বয়।
তবে ভক্তপুরের সবচেয়ে দর্শনীয় স্থান হল দরবার স্কয়ার । এখানে রয়েছে প্রাচীন অনেকগুলো রাজপ্রাসাদ ছাড়াও বেশ কয়েকটি হিন্দু ও বৌদ্ধ মন্দির। ভক্তপুরের উল্লেখযোগ্য আরো কিছু দর্শনীয় স্থান হল পটার্স স্কয়ার, ভৈরবনাথ মন্দির, ভৈরব মূর্তি, রাজা ভূপতিন্দ্র মাল্লার কলাম, ভত্সলা দুর্গা মন্দির, ন্যাশনাল আর্ট গ্যালারি, সিদ্ধি লক্ষ্মী মন্দির, ফাসিদেগা মন্দির, দত্তনারায়ণ মন্দির, ভীমসেন মন্দির ইত্যাদি। পুরো শহরটিই ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
নেপালের সবচেয়ে দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে অন্যতম হলঅন্নপূর্ণা পর্বত। এই অন্নপূর্ণা হল অনেকগুলো পর্বতের সমষ্টি। এটি পোখরার পশ্চিমে অবস্থিত। হিমালয়ের পশ্চিমাংশের কয়েকটি চূড়ার সারি এখানে অবস্থিত। অন্নপূর্ণার সবচাইতে উঁচু চূড়াটির উচ্চতা প্রায় ৮০০০ মিটার। এই অঞ্চলের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থান হল অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্প ট্র্যাক। যারা ট্র্যাক করে তাদের জীবনে একবার হলেও এখানে যাওয়া উচিত। আর তাই পেশাদার পর্বতারোহীদের জন্য এটি নেপালের সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্র্যাকিং স্পট।
বছরের যে কোন সময় এখানে ট্র্যাক করা গেলেও অতিরিক্ত বরফের কারণে মাঝে মাঝে শীতকালে ট্র্যাক বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে এখানে ট্র্যাকিং-এর উপযুক্ত সময় হচ্ছে বসন্তকাল। অন্নপূর্ণা পর্বতসারির ট্রেকিং রাউটগুলোর মধ্যে অন্যতম হল অন্নপূর্ণা সেঞ্চুয়ারি ট্রেক, অন্নপূর্ণা বেইসক্যাম্প ট্রেক এবং অন্নপূর্ণা সার্কিট ট্রেক। ১৯৮৬ সালে একে নেপালের একটি প্রাকৃতিক সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
নেপালের সবচেয়ে দর্শনীয় স্থান হল নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু। এটি জনসংখ্যা ও আয়তনের বিচারে নেপালের বৃহত্তম শহর। তবে শহরটি বিশ্বের অন্য কোন শহরের মতো নয়। শহরের কেন্দ্রস্থলে বিলাসবহুল পরিবেশের বিপরীতে রয়েছে প্রাচীন বিভিন্ন প্রাসাদ ও তাদের ধ্বংসস্তুপ এবং বিভিন্ন বৌদ্ধ ও হিন্দু মন্দির। তাই পর্যটনের পাশাপাশি শহরটি ঐতিহ্যগত ভাবেও খুবই মাহাত্ম্যপূর্ণ। আর নেপাল ভ্রমণের উত্তেজনাপূর্ণ অভিজ্ঞতা আসলে শুরুই হয় এই কাঠমান্ডু থেকে।
এখানকার সবচেয়ে দর্শনীয় স্থান হল দরবার স্কয়ার । এই দরবার স্কয়ারটি পাতান এবং ভক্তপুরের দরবার স্কয়ার এর তুলনায় অনেক বড়। কাঠমান্ডুর এই দরবার স্কয়ারটি ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃত। তবে এই দরবার স্কয়ারটি ২০১৫ সালের ভূমিকম্পে গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এবং এখনো এর মেরামত কাজ চলছে।
নেপালের আরো কিছু দর্শনীয় স্থান: জানকপুর, খুম্ব, নাগরকোট, চিতন জাতীয় উদ্যান, পাটান, কাকানি, কীর্তিপুর, কোপান মঠ, সাঙ্খু ইত্যাদি।