শীত, বসন্ত আর বর্ষায় বাংলার নীল নদ সারির রূপ বদলে ফেলে। বর্ষায় পাহাড়ি ঢল নামলে দক্ষ মাঝিরাও ভয়ে ভয়ে বইঠা চালান। আর শীতে সারি নদীর নীল পানি দেয় অপার্থিব জগতের খোঁজ। নদীটি ধরে কিছুদূর উজান বাইলেই পাওয়া যাবে লালাখাল জিরো পয়েন্ট।
হেমন্ত শেষে এসেছে শীত। শুরু হয়েছে ভ্রমণের সময়। বৃষ্টি নেই এখন। তাই লালাখালের নীল ও পান্না সবুজ রঙের পানিতে নৌকায় ভেসে কাটিয়ে দেওয়া যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এ জন্য যেতে হবে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায়। সারি নদীর বালুর খ্যাতি দেশময়। স্বচ্ছ পানির নিচে দেখা যাবে এ বালু। এই নীল পানির ওপর নৌকায় বসে পাহাড়ি জনপদ দেখতে দেখতে অল্প সময়ে পৌঁছে যাওয়া যাবে লালাখালে।
মেঘালয়ের জংলা টিলা ছাপিয়ে দূরের আবছা পাহাড়ের আড়াল ভেদ করে ভারতের মাইনথু নদীটি কাঁটাতারহীন সীমান্ত পেরিয়ে এ দেশে সারি নদী নামে পরিচিতি পেয়েছে। বালু, পাথর এবং দুই পাড়ের ভূমি স্তরের কারণে নদীটি কোথাও সবুজ, কোথাও পান্না রঙের বাহার তৈরি করে রেখেছে। মুগ্ধ না হওয়ার কোনো উপায় নেই।
জেনে রাখা ভালো, সারি নদী ও লালাখাল আলাদা কিছু নয়। লালাখাল পর্যটনকেন্দ্রটি সারি নদীরই অংশ। শীতের শুরু থেকে গ্রীষ্মের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত নীল স্বচ্ছ পানি চোখে পড়বে এ নদীতে। শুকনো মৌসুমে এর অনেক জায়গায় ভেসে ওঠে চর। সারিঘাট থেকে নৌকায় লালাখাল হয়ে ভারত সীমান্তের জিরো পয়েন্টে পৌঁছাতে ৪০-৪৫ মিনিট লাগে। এ জন্য নৌকা ভাড়ায় ব্যয় করতে হবে প্রায় ২ হাজার টাকা।
এ ছাড়া জিরো পয়েন্টের তীরে রয়েছে এক দারুণ চা-বাগান। নদী দেখতে গিয়ে এখানেও কাটানো যাবে অনেকটা সময়।
উপজেলা সদরে রয়েছে জৈন্তিয়া রাজবাড়ির বিভিন্ন নিদর্শন। এ ছাড়া জৈন্তিয়ায় রয়েছে লাল শাপলার বিল, লাল শাপলার লেক এবং শ্রীপুর রাংপানি নদী। এগুলোর প্রতিটি আপনাকে দেবে ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতা।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সড়ক, রেল, আকাশ—তিন পথেই সিলেটে যাওয়া যায়। সিলেট থেকে লালাখালে যেতে নগরীর ধোপাদিঘির পাড় ওসমানী শিশু উদ্যানের সামনে থেকে লেগুনা, মাইক্রোবাস অথবা জাফলংগামী বাসে করে সারিঘাটে যেতে হবে। সেখান থেকে লালাখালে যাওয়ার সিএনজিচালিত অটোরিকশা রয়েছে। যদি নদীপথে লালাখালে যেতে চান, তবে সারিঘাট থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকা ভাড়া নিতে হবে। লালাখাল থেকে সিলেটে ফিরতে রাত ৮টা পর্যন্ত বাস ও লেগুনা পাওয়া যায়।