শিল্পায়ন, বনায়ন ও কর্মসংস্থান—এই তিন গুরুত্বের বাইরেও জেলাটি এখন পর্যটনশিল্পের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। সারা বছরই প্রকৃতিপ্রেমী ও ভ্রমণপিপাসু মানুষের আনাগোনায় মুখর থাকে রিসোর্টগুলো। বিশেষ করে নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত ঘুরতে আসা মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকায় আসেন বিদেশিরাও।
জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমানের ভাষায়, পর্যটনশিল্পের জন্য অপার সম্ভাবনাময় জেলা গাজীপুর। এটি একটি শিল্প অধ্যুষিত এলাকা। প্রচুর মানুষ, কলকারখানা এখানে। কিন্তু তার মধ্যেও প্রকৃতিকে কাজে লাগিয়ে যে আধুনিক রিসোর্টগুলো গড়ে উঠেছে, তা প্রশংসার দাবিদার। রিসোর্ট ও জেলার অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্রে সারা বছরই ভ্রমণপিপাসু মানুষের আনাগোনা থাকে। এটা দেশের অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
গাজীপুরে রিসোর্টশিল্পের শুরু কখন কীভাবে, তার সুস্পষ্ট কোনো তথ্য নেই। তবে জেলা প্রশাসনের তথ্যানুসারে, অবকাশযাপনে জেলায় রিসোর্ট আছে প্রায় ৬১টি। পরিবেশ-প্রকৃতি ও সুযোগ-সুবিধা বিবেচনায় অন্যতম কয়েকটি হলো গ্রিন হেভেন কটেজ অ্যান্ড রিসোর্ট, সারাহ রিসোর্ট, নক্ষত্রবাড়ি রিসোর্ট, ড্রিম স্কয়ার রিসোর্ট, ভাওয়াল রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা, জল ও জঙ্গলের কাব্য, রাঙামাটি ওয়াটার ফ্রন্ট রিসোর্ট, ছুটি রিসোর্ট, সিগাল রিসোর্ট, নীল কমল রিসোর্ট, সোহাগ পল্লী, অরণ্যবাস, আনন্দ পার্ক অ্যান্ড রিসোর্ট, ধানসিঁড়ি রিসোর্ট ও পাখির স্বর্গ রিসোর্ট।
সরেজমিনে এক দিন
গাজীপুরের পুবাইল-জয়দেবপুর সড়ক। দুই পাশে প্রচুর গাছগাছালি। কোথাও ধানখেত, কোথাওবা ঘন বন। সড়কটি এবড়োখেবড়ো। মানুষের চলাফেরা নেই খুব একটা। গত রোববার এ সড়ক ধরেই যেতে দেখা যায় ছয়টি রিসোর্ট ও কটেজ। সুযোগ-সুবিধায় একটি অন্যটি থেকে কম নয়।
জয়দেবপুরের দিকে পুবাইল ভাদুন গ্রামে হাতের ডানে চোখে পড়ে গ্রিন হেভেন কটেজ। পুরো রিসোর্টটি চারদিকে সবুজ গাছপালায় ঘেরা। তার মাঝেই অত্যাধুনিক নকশায় নির্মাণ করা হয়েছে চারটি বিশেষ কটেজ। বৈশিষ্ট্যভেদে কটেজগুলোর নাম আলাদা। কটেজগুলোর কক্ষসংলগ্ন নানান গাছগাছালি। সামনে বিশাল সবুজ মাঠ। গোসলের জন্য সুইমিংপুল, বিনোদনের জন্য টিভি, জিম সেন্টার, শিশুদের খেলার জায়গাসহ নানা সুবিধা। প্রায় ১১ বিঘা জমির ওপর গড়ে উঠেছে পুরো রিসোর্টটি। রিসোর্টটির ব্যবস্থাপক মো. সাদেকুল বলেন, প্রকৃতির আদলে সব সুযোগ-সুবিধাই রাখা হয়েছে রিসোর্টে। যান্ত্রিক জীবন থেকে অবসাদ পেতে লোকজন তাঁদের এখানে ঘুরতে আসেন।
সাধ আছে সাধ্য নেই
রিসোর্টগুলো অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন হওয়ায় খরচ অনেক বেশি। এ কারণে অনেকের সাধ থাকলেও সাধ্যে কুলায় না। ১২টি রিসোর্টের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য ঘাঁটাঘাঁটি করে জানা যায়, রিসোর্টগুলোতে রাতযাপনের জন্য সর্বনিম্ন ১ হাজার ৮০০ থেকে শুরু করে ৬৬ হাজার টাকা পর্যন্ত গুনতে হয়, যা অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয়।
ভ্রমণপিপাসু কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। অধিকাংশেরই দাবি, রিসোর্টগুলোতে ভাড়া বা খরচের ব্যাপারে কোনো নীতিমালা নেই। আবার প্রশাসন থেকেও কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করা হয় না। ফলে রিসোর্টগুলোতে রাতযাপনের জন্য যে খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে, তা অনেকের কাছেই বোঝা।
জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান বলেন, রিসোর্টগুলোর খরচ বা ভাড়ার ব্যাপারে সেভাবে কোনো সরকারি বাধ্যবাধকতা নেই। তবে রিসোর্টের মালিকদের সঙ্গে বসে এই শিল্পকে কী করে আরও জনবান্ধব ও সহজলভ্য করা যায়, সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার চেষ্টা চলছে।
গাজীপুরের বোর্ডবাজার এলাকার বাসিন্দা আলতাফ মাহমুদ কয়েকটি পর্যটক গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত। ঘুরেছেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। তিনি বলেন, ঘুরতে যাওয়া মানুষের জন্য থাকার জায়গাটা খুব গুরুত্ব বহন করে। অনেক সময় খরচার ভয়ে মানুষ ঘুরতে যেতেও ভয় পায়। সে ক্ষেত্রে রিসোর্টের মালিকের নমনীয়তা বা প্রশাসন থেকে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা থাকলে ঘোরাঘুরিতে মানুষের আগ্রহ বাড়বে।