শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১৮ পূর্বাহ্ন

নিঝুম দ্বীপ

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৪ মার্চ, ২০২৩

বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। প্রতি বর্গকিলোমিটারে এখানে গড়ে প্রায় এক হাজার ২০০ মানুষ বসবাস করে। কিন্তু অদ্ভুতভাবে এরপরও আমাদের দেশে এমন কিছু স্থান রয়েছে যেখানে মানুষের বসতি খুবই কম, প্রকৃতির সেখানে অবাধ বিস্তার।

নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার দক্ষিণে ১৯৫০-এর দশকে এই দ্বীপটি জেগে ওঠে, এরপর ক্রমে পলি জমে দ্বীপটি আজকের আকার ধারণ করে। ১৯৭৪ সালের দিকে বন বিভাগ এই দ্বীপের উত্তর অংশে ব্যাপকভাবে বনায়ন করে, যার ফলে আজ ১৫ বর্গমাইল দ্বীপটির বেশির ভাগই পরিণত হয়েছে অভয়ারণ্যে। শুরুতে ‘চর ওসমান’ নামে পরিচিত হলেও ১৯৭৯ সালে সাবেক মন্ত্রী আমিরুল ইসলাম খান এই দ্বীপের নাম দেন ‘নিঝুম দ্বীপ’।

দ্বীপটি মূলত বেশ কিছু চরের সমষ্টি। এর মাঝে বয়ে চলেছে নদী আর খাল, যেন অবিকল সুন্দরবন। উপকূলীয় অঞ্চল হওয়ায় শীতকালে শীতের তীব্রতাও তুলনামূলকভাবে এখানে কম। ফুরফুরে সামুদ্রিক বাতাস আর মনোলোভা প্রকৃতি মনে এনে দেবে দারুণ সুখের অনুভূতি। সম্প্রতি দ্বীপের বেশ দক্ষিণে জেগে উঠেছে নতুন এক চর, ভ্রমণপিয়াসীরা যার নাম দিয়েছেন ‘ভার্জিন আইল্যান্ড’।

কী দেখবেন

আপনি যদি প্রকৃতিপ্রেমী হন, তাহলে তো কথাই নেই। মূল দ্বীপসহ আশপাশের দ্বীপগুলোতে শীতকালে আসে হাজার হাজার অতিথি পাখি। এদের মধ্যে আছে সরালি, লেনজা, জিরিয়া, পিয়ং, চখাচখি, রাঙ্গামুড়ি, ভূতিহাঁসসহ নানারকম হাঁস, রাজহাঁস, কাদাখোঁচা, জিরিয়া, বাটান, গুলিন্দাসহ জলচর নানা পাখি, হরেক রকমের গাংচিল, কাস্তেচরা ইত্যাদি। কদাচিৎ আসে পেলিক্যান। আর বছরজুড়ে সামুদ্রিক ঈগল, শঙ্খচিল, বকসহ নানা স্থানীয় পাখি তো আছেই। দ্বীপের আশপাশের জঙ্গলেই আছে হরিণ, শেয়াল, বন্য শূকর, নানা রকম সাপ ও বানর।

বাংলাদেশের প্রকৃতি মানুষের কলুষতার হাত থেকে সামান্য মুক্ত হলেই যে কি অবিশ্বাস্য প্রাণিসম্পদের সম্ভার ধারণ করতে পারে, তা নিঝুম দ্বীপে না গেলে বোঝা অসম্ভব। তবে দ্বীপে নামলেই যে এসব আরামসে দেখবেন এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই।

পাখি বা হরিণ দেখতে হলে খুব ভোরে উঠতে হবে। হরিণ মূল দ্বীপেই স্থানীয় গাইডদের সাথে গিয়ে দেখে আসতে পারবেন। পাখি দেখতে হলে ট্রলারে করে পার্শ্ববর্তী দ্বীপগুলোতে যেতে হবে, পেরোতে হবে অনেকটা কাদা। কবিরাজের চর ও দমার চর পাখি দেখার জন্য বেশ উত্তম জায়গা।

আর অ্যাডভেঞ্চারপিয়াসী হলেও নিঝুম দ্বীপ আপনাকে নিরাশ করবে না।
জঙ্গলে হাঁটাহাঁটি তো আছেই, সাথে ধরুন সমুদ্রের বালুকাবেলায় ক্যাম্পিং করে থাকা অথবা বার-বি-কিউয়ের আয়োজন, ধু ধু চরে হেঁটে বেড়ানো মহিষের বিশাল পাল, কিংবা নৌকায় করে সাগর ভ্রমণ করার মতো এখানে আছে অনেক কিছুই।

কোথায় থাকবেন 

নিঝুম দ্বীপের মূল জনবসতির নাম হলো ‘নামার বাজার’। এখানকার পর্যটন রিসোর্টে থাকতে পারবেন। ভাড়া পড়বে রুমপ্রতি ৫০০ থেকে এক হাজার ৫০০ পর্যন্ত। পাঁচ বেডের ডরমিটরি রুম আছে, ভাড়া বেশ কম। এ ছাড়া বাজারে হোটেল শাহীনে থাকতে পারবেন, যদিও খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি পড়বে।

বাজারেই আছে মসজিদ বোর্ডিং, এখানে খুবই কম খরচে থাকা যায়, তবে বিদ্যুতের ব্যবস্থা নেই। গোটা দ্বীপেই সোলার প্যানেল অথবা জেনারেটর ব্যবহার করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় সীমিত সময়ের জন্য। কাজেই বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম বুঝেশুনে ব্যবহার করাই ভালো।

এ ছাড়া দ্বীপে থাকতে পারেন সরকারি উপজেলা কমপ্লেক্স অথবা বন বিভাগের ডাকবাংলোয়, তবে এগুলোর জন্য আগে থেকে অনুমতি নিয়ে রাখতে হয়। আর ক্যাম্পিং করতে চাইলে মূল দ্বীপেই করা ভালো। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, আশপাশের চরগুলোতে মাঝেমধ্যে ডাকাত হানা দিয়ে থাকে।

খাওয়া-দাওয়া বাজার থেকেই করতে পারবেন। দাম অনেক কম পড়বে, তবে মাছ ছাড়া অন্যান্য খাবারের ক্ষেত্রে সংগত কারণেই বৈচিত্র্য পাবেন না।

কীভাবে যাবেন

ঢাকার সদরঘাট থেকে ‘এমভি ফারহান’ নামে একটাই লঞ্চ যায় হাতিয়া। বিকেল সাড়ে ৫টায় যাত্রা শুরু করে হাতিয়ার তমরুদ্দীন ঘাট পর্যন্ত পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় ১২ ঘণ্টা। ডেকের টিকেট ৩৫০ টাকা, কেবিন সিঙ্গেল ২ হাজার টাকা, ডাবল চার হাজার টাকা।
হাতিয়া নেমে মাছ ধরার ট্রলারে জনপ্রতি ২০০ টাকা দিয়ে পৌঁছাতে পারেন নামার বাজারে। ট্রলার না পেলে মোটরসাইকেলে (জনপ্রতি ৩০০ টাকা) করে যেতে পারেন মোক্তারঘাট। সেখান থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ৫-১০ মিনিটে মেঘনা পার হয়ে পৌঁছাবেন নিঝুম দ্বীপে। এরপর আপনাকে আবার মোটরসাইকেল (জনপ্রতি ৫০টাকা) অথবা রিকশা (১০০ টাকা) করে নামার বাজারে যেতে হবে।

এ ছাড়া আপনি ট্রেনে করে যেতে পারেন নোয়াখালীর মাইজদী পর্যন্ত। সেখান থেকে ট্রলারে করে যাওয়া যায় নিঝুম দ্বীপ।

ফেরার সময়ও একটাই লঞ্চ ছাড়ে, হাতিয়া থেকে ঠিক দুপুর সাড়ে ১২টায়। অথবা আপনি ট্রলারে করে মাইজদী গিয়ে ঢাকার ট্রেন ধরতে পারেন।

যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখবেন

•    নিঝুম দ্বীপের জঙ্গলকে সরকার সংরক্ষিত অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে। তা ছাড়া এই গোটা দ্বীপ বাংলাদেশের সম্পদ। কাজেই যত্রতত্র ময়লা ফেলবেন না।

•    শিকারের বাতিক থাকলে সেটা ভুলে যাওয়াই ভালো। দ্বীপের প্রাণী ও পাখিদের রক্ষার জন্য সরকার ও বন বিভাগ তো বটেই, স্থানীয় মানুষও বেশ সচেতন।

•    স্থানীয় মানুষ বেশ ভদ্র ও নিরীহ। অকারণে তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করলে তারা সহযোগিতা করতে চাইবে না, সে ক্ষেত্রে আপনার ভ্রমণ মোটেই সুখকর হবে না।

•    আশপাশের চরে পাখি দেখতে চাইলে জোয়ার থাকা অবস্থাতেই পৌঁছানো ভালো, কারণ ভাটার টান শুরু হয়ে গেলে চরে নৌকা ভিড়তে পারবে না এবং প্রায় কোমর সমান কাদা পার হয়ে চরে পৌঁছাতে আপনার ওপর দিয়েও ধকল কম যাবে না।

•    গরমের সময় সমুদ্র বেশ উত্তাল থাকে। এ সময় গেলে আবহাওয়া বিষয়ে খোঁজখবর করে যাওয়া ভালো।

•    নিঝুম দ্বীপে যাওয়াটা বেশ সময় ও শ্রমসাপেক্ষ, তাই বয়স্ক অথবা কম বয়সীদের সেখানে না নিয়ে যাওয়াই ভালো।

•    লঞ্চ সব সময় একদম ঠিক সময়ে ছাড়ে, কাজেই এ ব্যপারে সতর্ক থাকবেন।

•    অকারণে জঙ্গলে গাছের পাতা ছিড়বেন না বা ডাল ভাঙবেন না, এগুলো হরিণের খাবার। পাখিদের উত্ত্যক্ত করবেন না।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com