একটি মানচিত্র, এক ফালি নির্জন জমি আর এক তরুণের দুঃসাহসিক কল্পনা—এই তিনের মিশ্রণে জন্ম নিল এক ‘স্বাধীন রাষ্ট্র’। অবিশ্বাস্য মনে হলেও ঘটনাটি সত্যি। মাত্র ২০ বছর বয়সেই নিজেকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করে নতুন দেশের গোড়াপত্তন করেছেন ড্যানিয়েল জ্যাকসন নামের এক তরুণ। দেশটির নাম ‘ফ্রি রিপাবলিক অব ভার্ডিস’।
অস্ট্রেলীয় বংশোদ্ভূত এবং ব্রিটেনে বসবাসকারী ড্যানিয়েল মূলত পেশায় একজন ডিজিটাল ডিজাইনার। ভার্চুয়াল গেম নির্মাণে পারদর্শী এই তরুণ বাস্তব জগতেই গড়ে তুলেছেন এক অভিনব ‘রাষ্ট্রীয় প্রকল্প’।
ইউরোপের ক্রোয়েশিয়া ও সার্বিয়ার সীমান্তবর্তী দানিয়ুব নদীর ধারে একটি বিতর্কিত অঞ্চল, যেটি স্থানীয়ভাবে ‘পকেট থ্রি’ নামে পরিচিত—সেই ১২৫ একর জমিকে নিজের দেশের ভূমি হিসেবে ঘোষণা করেন তিনি। কারণ অঞ্চলটি দুই দেশের কেউই নিজেদের দাবি করে না।
মাত্র ১৪ বছর বয়সে বন্ধুদের সঙ্গে মজা করেই শুরু করেছিলেন ‘নিজস্ব দেশ’ গড়ার স্বপ্ন। সময়ের সঙ্গে সেই কল্পনাই বাস্তব রূপ নেয়। ২০১৯ সালের ৩০ মে ‘ফ্রি রিপাবলিক অব ভার্ডিস’ নাম দিয়ে নতুন দেশের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন জ্যাকসন। তৈরি করেন জাতীয় পতাকা, সংবিধান, এমনকি মন্ত্রিসভাও। সরকারি ভাষা করা হয় ইংরেজি, ক্রোয়েশীয় এবং সার্বীয়। মুদ্রা হিসেবে গ্রহণ করা হয় ইউরো।
শুরুর নাগরিক সংখ্যা ছিল মাত্র চারজন। বর্তমানে ভার্ডিস দাবি করছে, তাদের নাগরিক সংখ্যা ৪০০ ছাড়িয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষ আবেদন করেছে ‘ভার্ডিসিয়ান’ হওয়ার জন্য।
যদিও এই অভিনব প্রচেষ্টার পরিণতি সুখকর হয়নি তরুণ ‘প্রেসিডেন্ট’-এর জন্য। ২০২৩ সালের অক্টোবরে ক্রোয়েশিয়ান পুলিশ জ্যাকসন ও তার সঙ্গীদের গ্রেপ্তার করে। পরে তাদের দেশছাড়া করা হয় এবং আজীবনের জন্য ক্রোয়েশিয়ায় প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
জ্যাকসন বলেন, ‘আমাদের কোনো অপরাধ ছাড়াই বের করে দেওয়া হয়। তারা বলে, আমরা নাকি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি।’
তবুও থেমে যাননি তিনি। নির্বাসনে থেকেও ভার্ডিসের প্রশাসন, আইন প্রণয়ন এবং নাগরিক যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। নিজের ক্ষমতায় থাকার আকাঙ্ক্ষা নেই তার। বরং একদিন ফিরতে পারলে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব হস্তান্তর করতে চান তিনি।
জ্যাকসনের ভাষায়, আমার মূল লক্ষ্য প্রেসিডেন্ট থাকা নয়, বরং স্বপ্নটাকে বাঁচিয়ে রাখা।
বর্তমানে ‘ভার্ডিস’ কোনো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি, জাতিসংঘের তালিকাতেও এর নাম নেই। তবু জ্যাকসনের দৃষ্টিতে এটিই তার জীবনের সবচেয়ে বড় বাস্তবতা—একটি কল্পনা, যা আজ বহু মানুষের মনেই জায়গা করে নিয়েছে।
সূত্র : নিউইয়র্ক পোস্ট