1. [email protected] : চলো যাই : cholojaai.net
নিউজিল্যান্ড থেকে সবাই পালাচ্ছে কেন
বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ০১:৪৭ অপরাহ্ন

নিউজিল্যান্ড থেকে সবাই পালাচ্ছে কেন

  • আপডেট সময় বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫

দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের কোলে অবস্থিত মনোরম দ্বীপরাষ্ট্র নিউজিল্যান্ড—পৃথিবীর অন্যতম নিরাপদ, পরিচ্ছন্ন ও মানবিক দেশ হিসেবে পরিচিত। সবুজ পাহাড়, নীল সমুদ্র, নির্ভেজাল বাতাস আর সুশৃঙ্খল সমাজব্যবস্থায় দেশটি যেন এক জীবন্ত স্বর্গ। মাত্র সাড়ে পাঁচ মিলিয়ন মানুষের এই ছোট্ট দেশটি শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সমতায় বিশ্বের শীর্ষ তালিকায়।

তবু আশ্চর্যজনকভাবে, এই স্বপ্নের দেশ থেকেই মানুষ *দলে দলে চলে যাচ্ছে বিদেশে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম ও দক্ষ পেশাজীবীরা অস্ট্রেলিয়ার পথে পাড়ি জমাচ্ছেন।

নিউজিল্যান্ডের সৌন্দর্য যতটা মোহিত করে, এর পেছনের অর্থনৈতিক বাস্তবতা ততটাই কঠিন।
প্রতিবছর হাজার হাজার তরুণ নিউজিল্যান্ড ছেড়ে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ায়। বর্তমানে দেশটির মোট নাগরিকদের ১০ শতাংশেরও বেশি অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছে।

মূল কারণ—জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি ও সীমিত সুযোগ।

নিউজিল্যান্ডে জীবনযাত্রার খরচ ভয়াবহভাবে বেড়ে গেছে।
বিশেষ করে বাড়ির দাম ও ভাড়া এতটাই বেশি যে একজন তরুণ চাকরিজীবীর পক্ষে নিজের আয় দিয়ে বাড়ি কেনা প্রায় অসম্ভব।

অকল্যান্ড, ওয়েলিংটন বা ক্রাইস্টচার্চের মতো শহরে এখন আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য রাখা অনেকের কাছেই দুঃস্বপ্নের মতো।
বাড়িভাড়া পরিশোধ করতেই মাসিক আয়ের বড় অংশ চলে যায়।

সরকার বিদেশি ক্রেতাদের জন্য আবাসন নিষিদ্ধ করলেও অস্ট্রেলিয়ান বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রে তা কার্যকর হয়নি। ফলে আবাসন বাজার এখনো মূলত বিদেশি মূলধনের দখলে, যার প্রভাব পড়ছে স্থানীয়দের জীবনযাত্রায়।

নিউজিল্যান্ডের অর্থনীতি মূলত কৃষি ও আবাসন নির্ভর।
উর্বর ভূমি, দুধ, উল, মাংস ও ফলের রপ্তানিতে দেশটি বিশ্বে পরিচিত হলেও, শিল্প ও প্রযুক্তি খাতে তেমন কোনো সম্প্রসারণ নেই। বিশ্বের মূল অর্থনৈতিক কেন্দ্রগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন ভৌগোলিক অবস্থান দেশটির জন্য বড় সীমাবদ্ধতা।
অকল্যান্ড কখনোই সিডনি বা সিঙ্গাপুরের মতো আন্তর্জাতিক ব্যবসাকেন্দ্র হতে পারেনি।

ফলে উচ্চশিক্ষিত তরুণরা দেশের মধ্যে পেশাগত উন্নতির পথ সংকীর্ণ দেখতে পাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ায় একই কাজের জন্য বেশি বেতন ও উন্নত সুযোগ পাওয়ায় তারা সেখানে চলে যাচ্ছেন।

অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক সম্পর্কও এই অভিবাসন প্রবণতাকে সহজ করেছে।
দুই দেশের নাগরিকরা একে অপরের দেশে ভিসা ছাড়াই কাজ, পড়াশোনা ও বসবাসের সুযোগ পান।

অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিউজিল্যান্ডের শিক্ষার্থীরা স্থানীয়দের মতোই ফি ও লোন সুবিধা ভোগ করে।
ভাষা, সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রা প্রায় এক হওয়ায় মানিয়ে নিতে কোনো সমস্যা হয় না।

ফলে তরুণদের কাছে অস্ট্রেলিয়া এখন নতুন জীবনের প্রতীক।

এই প্রবণতার ফলে নিউজিল্যান্ডে দক্ষ কর্মীর ঘাটতি প্রকট আকার ধারণ করেছে।
সরকার ঘাটতি পূরণে বিদেশি অভিবাসীদের ওপর নির্ভর করছে এবং ভিসা নীতি অনেক সহজ করেছে।

কিন্তু এই নীতিরও অপ্রত্যাশিত প্রভাব পড়ছে—
অনেক অভিবাসী নিউজিল্যান্ডে স্থায়ী হওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ায় চলে যাচ্ছে, যা দেশটির জন্য এক ধরনের ‘ব্যাকডোর ব্রেইন ড্রেন’ তৈরি করেছে।

নিউজিল্যান্ড আজও বিশ্বের অন্যতম শান্তিপূর্ণ ও মানবিক দেশ—কিন্তু জীবনের মান বজায় রাখতে হলে কেবল সৌন্দর্য যথেষ্ট নয়, দরকার টেকসই অর্থনীতি ও বাস্তবসম্মত সুযোগ।

স্বর্গীয় প্রাকৃতিক দৃশ্য আর নিরাপদ জীবনযাত্রার মাঝেও যখন তরুণ প্রজন্ম ভবিষ্যৎ দেখতে পায় না, তখন তারা স্বপ্নের দেশ ছেড়ে চলে যায় আরও স্বপ্ন খুঁজতে— অস্ট্রেলিয়ার পথে, নতুন জীবনের সন্ধানে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Developed By ThemesBazar.Com