শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:৫১ পূর্বাহ্ন

নিউইয়র্কে ফাহিমকে হত্যায় তাঁর সহকারী হাসপিল দোষী সাব্যস্ত

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন, ২০২৪

নিউইয়র্কের ম্যানহাটানে তরুণ উদ্যোক্তা বাংলাদেশে পাঠাওয়ের সহপ্রতিষ্ঠাতা ফাহিম সালেহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তাঁর সাবেক সহকারী টাইরেস হাসপিল দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। গত সোমবার ম্যানহাটান সুপ্রিম কোর্টের জুরিবোর্ড এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।

আদালতে হাসপিল দাবি করেছেন, তিনি তাঁর প্রেমিকাকে আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে তাঁকে নানা উপহার কেনার জন্য ফাহিমের অর্থ চুরি করেছিলেন। সেই ঘটনা লুকাতেই এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছেন। তবে বিচারক তাঁর এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন।

২৫ বছর বয়সী টাইরেস হাসপিল তাঁর বস ফাহিম সালেহর ৪ লাখ মার্কিন ডলার চুরি করেছিলেন। এই অর্থ চুরির ঘটনা লুকাতে ফাহিমকে হত্যার পর ইলেকট্রিক করাত দিয়ে দেহ টুকরা টুকরা করা হয়েছে। এ কারণে হাসপিলকে প্রথম-ডিগ্রি হত্যার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ফাহিম সালেহ রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম পাঠাওয়ের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তা ছিলেন। নাইজেরিয়াভিত্তিক স্কুটার স্টার্টআপ গোকাদা প্ল্যাটফর্মের প্রধান নির্বাহী তিনি। নিউইয়র্কের নিজ অ্যাপার্টমেন্টে ২০২০ সালের ১৩ জুলাই খুন হন তিনি। ওই ঘটনায় তখন তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী টাইরেস হাসপিলকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ফাহিম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় হওয়া মামলায় নিউইয়র্কের ম্যানহাটানের একটি আদালতে ২০২০ সালের ১৩ অক্টোবর হাসপিলের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার শুরু হয়।

ফাহিমের আর্থিক ও ব্যক্তিগত বিষয়গুলো দেখতেন হাসপিল। তদন্তসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র তখন জানিয়েছিল, ফাহিমের মোটা অঙ্কের অর্থ (চার লাখ ডলার) সরিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। বিষয়টি ধরা পড়ার পর ফাহিম ওই অর্থ পরিশোধ করার সুযোগ দিয়েছিলেন তাঁকে। হাসপিল ধাপে ধাপে অর্থ পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিলেও পরে আবার অর্থ চুরি করছিলেন। এ অবস্থায় তাঁর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দেন ফাহিম। এরপরই তিনি এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটান।

আইনজীবীরা বলেছেন, ফাহিমকে ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনামাফিক খুন করেন হাসপিল। এর আগে টেজার ব্যবহার করে ফাহিমকে অজ্ঞান করা হয়। টেজারের সূত্র ধরে হাসপিলকে শনাক্ত করার কথা জানায় পুলিশ। হত্যার পর ফাহিমের শরীর টুকরা টুকরা করার কাজে ব্যবহৃত ইলেকট্রিক করাতসহ পরিচ্ছন্নতাসামগ্রী কেনার ভিডিও ফুটেজ পাওয়া যায়।

আইনজীবীরা বলেন, আদালতে হাসপিল দোষ স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ঘটনার দিন ফাহিম যখন লিফটে ওঠেন, তখন তিনি তাঁর পিছু নিয়ে দ্রুত লিফটের ভেতর ঢুকে পড়েন। পেছন থেকে টেজার ব্যবহার করে ফাহিমকে অজ্ঞান করার চেষ্টা করেন। এরপর একটি ছুরি দিয়ে তাঁর ঘাড়ের দিকে আঘাত করার চেষ্টা করেন। এ সময় ফাহিম চিৎকার করে বলেছিলেন, ‘তুমি কী করছ?’

হাসপিলের আইনজীবীরা আদালতে যুক্তি দিয়েছেন, হাসপিল মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। তাঁরা তাঁকে কম সাজা দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন। কিন্তু গত সোমবার ১২ সদস্যের জুরিবোর্ড তাঁদের দাবি নাকচ করে দিয়েছেন। আগামী ১০ সেপ্টেম্বর এ মামলায় হাসপিলের সাজা ঘোষণার দিন ধার্য করা হয়েছে। তাঁর ২৫ বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে।

বিচারের সমাপনী যুক্তিতে অংশ নেওয়া ম্যানহাটানের ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অ্যালভিন ব্র্যাগ এক বিবৃতিতে বলেছেন, সালেহ অভিবাসী পরিবারের সন্তান। তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা। অথচ টাইরেস হাসপিল দুঃখজনকভাবে তাঁকে হত্যা করেছেন।

হাসপিলের আইনজীবী স্যাম রবার্টস বলেছেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় হাসপিল ‘অনুতপ্ত’। তিনি সাজা কম হওয়ার প্রত্যাশা করেন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com