ইসরায়েলের আরাবায় জন্মগ্রহণ করেন এই মুসলিম ফেসবুকার। তবে, ছোটবেলায় তাকে দেখে কখনো মনে হয়নি, সে এতো কথা কখনো বলতে শিখবে একদিন। ভীষণ লাজুক আর ইন্ট্রোভার্ট ধরণের মানুষ ছিলেন ছোটবেলায়। অবশ্য, একসময় খোলস ভেঙ্গে বের হন। মানুষের সাথে মিশতে শুরু করেন। ভিডিও বানান, কথা বলেন।
ঘুরে বেড়ান। এখন তিনি এতো হাসিখুশি থাকেন আর এতো কথা বলেন যে, তার ভিডিও দেখার পর আলাদা একটা এনার্জি তৈরি হয়। কারণ, তিনি যে ভীষণ এনার্জেটিক সেটা বোঝা যায় তার ভিডিওতে। তার এনার্জি ছড়িয়ে যায় ভিডিওর দর্শকদের মধ্যেও। তার স্বপ্ন ছিল কোনো বিখ্যাত নামিদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়বেন। আবেদন করেছিলেন হার্ভার্ডে। আবেদনপত্রে লিখেছিলেন, নিজের শৈশবের স্ট্রাগলের কথা, স্বপ্নের কথা। শুধু যে সুযোগই পেলেন তা নয়, হার্ভার্ডের লেখাপড়ার খরচ চালানোর স্কলারশিপও পেয়েছিলেন নাস। ২০১৪ সালে তার গ্র্যাজুয়েশন শেষ হয়। চাকরি নিয়েছিলেন একটা কোম্পানিতে সফটওয়্যার ডেভেলপার হিসেবে। বেতনও বেশ, বছরে ১২০০০০ ডলার! আপাতদৃষ্টিতে সুখী তরুণের জীবনচিত্র৷ সবাই হয়ত ঈর্ষাও করবে তাকে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, হাজার হাজার ডলারের চাকরি পেয়েছে, আর কি লাগে জীবনে!
কিন্তু, নাস কিংবা নুসায়ের ইয়াসিন হাঁপিয়ে গেলেন। ডেস্কের এককোনায় বসে থাকতে থাকতে তার খারাপ লাগলো। এই রুটিন মাপা জীবন তাকে কি আসলে সুখ দিচ্ছে? নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করলেন। তার মনে হলো, এটা তার কাজ নয়। তিনি দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়াতে চান। জীবনকে সত্যিকার অর্থেই উপভোগ করতে চান। তাই সামর্থ্যের অতিরিক্ত পারিশ্রমিক পাওয়া সেই চাকরিটা ছেড়ে দিলেন। তবে চাকরি ছাড়ার আগে বেশ কিছু টাকা জমিয়ে নিয়েছিলেন। দেড় বছরে যখন ষাট হাজার ডলার জমলো, তখন ২০১৬। সাহস করে অফিসে চাকরি ছাড়ার পত্রটা দিয়ে আসলেন। তারপর বিমানের টিকেট আর ক্যামেরা নিয়ে ছুটলেন এয়ারপোর্টে। তাকে এই বিশ্বটা ঘুরে দেখতে হবে। এটাই যে লক্ষ্য!
এরপর শুরু হয় স্বপ্নের মতো এক যাত্রা। তিনি তার প্রত্যেকদিনকার গল্প ভিডিও আকারে প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেন। খুলেন ‘নাস ডেইলি’ নামে একটি পেজ। নুসায়ের ইয়াসিনের পেজের নাম কেনো নাস ডেইলি? কারণ, আরবিতে নাস মানে জনগণ। নুসায়ের প্রতিদিন যে জনগণের সাথে কমিউনিকেশন করছেন, বিভিন্ন জীবনযাত্রা, কালচারের সাথে মিশছেন সেগুলো ডেইলি আপলোড করে দেখাবেন বলে পেজের নাম হয়েছে নাস ডেইলি। তার লক্ষ্য ছিল টানা ১০০০ দিন তিনি ভিডিও প্রকাশ করে যাবেন। বিশ্বভ্রমণের পথে নুসায়েরের প্রথম ছিল গন্তব্য কেনিয়ায়। এখানে গিয়ে ৩০০০ ডলারের একটা কাজ পেয়ে যান।
একটা রাশিয়ান কোম্পানি ফেসবুক পেজের জন্য কিছু কন্টেন্ট বানানোর দায়িত্ব দেয় তাকে। এই কোম্পানি ইতিপূর্বে নুসায়েরের আগের কিছু ভিডিও দেখে পছন্দ করেছিল তাকে। হঠাৎ কেনিয়ায় তাকে পেয়ে যাওয়ায় ব্যাটে বলে হয়ে যায়! নাস ডেইলির জন্য এমনিতে ভিডিও তো বানাতেনই, এখন ভিডিও বানানো উপলক্ষে যদি কিছু টাকা উপার্জন হয় খারাপ কি! নুসায়ের প্রথম মাসে ইনকাম করে ফেললেন ৩০০০ ডলার
নুসায়ের ইয়াসিনের সবচেয়ে বড় স্বতন্ত্র দিকটি হলো, তার ভিডিওর দৈর্ঘ্য। সবগুলো একমিনিটের। আজকাল মানুষের হাতে সময় কম। অনেক তথ্য মাথায় নেয়ার সময় নেই। চোখের পলকে যা চোখে পড়ে ওতটুকুই। তাই দর্শকদের কিছু দেখানো আজকাল বড়ই চ্যালেঞ্জিং কাজ। নাস সেই বিশাল টার্গেট মার্কেটকে ধরতে পারলেন, এক মিনিটের ভিডিও দিয়ে। তবে, কোয়ালিটি এখানে বড় এক্স ফ্যাক্টর। তিনি এমন কিছুই দেখান যা আগে কখনো দেখানো হয়নি। আর নিয়মিত ভিডিওর দেয়ার কারণেও দ্রুতই প্রিয় হয়ে উঠেন নাস।
তার ভিডিও প্রকাশ হবার পর সেগুলো রাতারাতি ভাইরাল হয় কন্টেন্টের কোয়ালিটির কারণে এবং নতুন কিছু থাকার কারণে। আর নতুন কিছু দেয়ার জন্য তার কৌশল নতুন জায়গায় ভ্রমণ। তিনি অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত দেশগুলো যেমন রোমানিয়া, মাল্টা, তানজানিয়া, রুয়ান্ডা ইত্যাদি দেশে ভ্রমণ করে সেখানকার গর্ব করার মতো ব্যাপারগুলো ফুটিয়ে তোলেন। যাদের নিয়ে আগে কেউ কাজ করেনি, তাদের নিয়ে কাজ করায় ফ্যানবেজ খুব দ্রুতই বড় হয় তার। এখন গ্লোবালি নাস ভীষণ পরিচিত এক মুখ।