নরসিংদীর রায়পুরার খলিলাবাদ বিলে প্রতি বছরের মতো এবারও ঐতিহ্যবাহী পলো বাওয়া উৎসব করেছে মাছ শিকারিরা।
বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) দুপুরে এই উৎসবে যোগ দেয় দেশের বিভিন্ন জেলার দুই হাজারেরও বেশি মাছ শিকারি। প্রতি বছরই ফাল্গুন-চৈত্র মাসের কোনো একদিনে এই উৎসব করেন তারা।
ঐতিহ্যবাহী খলিলাবাদ বিলে গিয়ে দেখা যায়, বসন্তের দুপুরে ঝলমলে রোদে ২ হাজারের অধিক শিকারি পানিতে নেমে কচুরিপানা সরিয়ে পলো ও মাছ রাখার থলে নিয়ে হই-হুল্লোড় করে মাছ শিকার করছেন। এ উৎসবকে ঘিরে নরসিংদীসহ পার্শ্ববর্তী জেলা গাজীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মুন্সিগঞ্জ, রাজবাড়ী, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন জেলার ২ হাজারের অধিক শিকারি অংশগ্রহণ করেছেন। পলো উৎসব উপভোগ করতে গ্রামের সকল বয়সী নারী-পুরুষ বিলের পাড়ে উল্লাস করছেন।
মাছ শিকারি ও স্থানীয়রা জানান, উপজেলার পলাশতলী ইউনিয়নের খলিলাবাদ বিলে শত বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসছে পলো বাওয়া উৎসব। উৎসবের সপ্তাহ খানেক আগে পলো বাওয়া উৎসবে অংশ নেওয়া কোনো একজনের দায়িত্বে পার্শ্ববর্তী গ্রামেগঞ্জের প্রতি বাজারে ১০০ টাকার বিনিময়ে তেলের টিন বাজিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয় উৎসবের তারিখ। এমন খবর জানার পর লোকজন পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে পুরোনো পলোগুলো ধুয়ে মুছে উৎসবে যাওয়ার জন্য তৈরি করে রাখেন। আর যাদের পলো নষ্ট হয়ে গেছে, তারা বাজার থেকে নতুন পলো ক্রয় করে উৎসবে অংশ নেয়।
উৎসবের দিন সকালে নিজ নিজ পলো, হাতাজাল, উড়ালজাল ও লাঠিজালসহ নানা ধরনের মাছ ধরার সামগ্রী নিয়ে বিলের পাড়ে গিয়ে সমবেত হন শিকারিরা। ঘড়ির কাটায় নির্ধারিত সময় বেজে উঠলেই সবাই মিলে একসঙ্গে পলো নিয়ে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। পলোতে ধরা পড়ে বোয়াল, শোল, মাগুর, গজারসহ বিভিন্ন জাতের ছোট-বড় নানান রকমের মাছ।
গাজীপুর থেকে আসা ষাটোর্ধ্ব মাছ শিকারি আহাম্মেদ আলী বলেন, ৭ বছর ধরে প্রতি বছর উৎসবে এখানে আসি মাছ শিকার করতে। মাছ পাওয়া, না পাওয়া বিষয় না। সবাই মিলে আনন্দ করছি, হৈ-হুল্লোড় করছি। দুটো গজার মাছ পেয়েছি। আশাকরি আরও পাব।
ময়মনসিংহের সোলায়মান বলেন, আমরা পাঁচজন এসেছি, এখন পর্যন্ত একটা শোল মাছ পেয়েছি, আনন্দ লাগছে। বেচেঁ থাকলে আগামীতেও আসব।
খলিলাবাদ গ্রামের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমরা ছোট বেলায় দেখতাম বসন্তের এ সময়টাতে দাদারা এ বিল থেকে বড় বড় রুই, কাতল, মৃগেল, শোল, বোয়াল, পুঁটিসহ প্রায় অর্ধশত প্রজাতির মাছ ধরতেন। এ বিলের মাছ অনেক সুস্বাদু। এখনও প্রতি বছর পার্শ্ববর্তী ৫-৬টি জেলার মানুষ এ বিলে মাছ ধরতে আসেন। কেউ মাছ পায়, আবার কেউ পায় না। তবে সকলেই আনন্দের সঙ্গে হাসিমুখে এ উৎসবে অংশ নেয়।
পলাশতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া জানান, এই বিল সবার জন্য উন্মুক্ত। প্রতি বছরই এই বিলে উৎসবমুখর পরিবেশে পলো বাওয়া উৎসব হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছর তা পালন করছেন বিভিন্ন জেলা থেকে আগত মৎস্য শিকারিরা।