শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৩২ পূর্বাহ্ন
Uncategorized

নরওয়ে ভ্রমণে ১০টি বিস্ময়কর সুন্দর স্থান

  • আপডেট সময় বুধবার, ২০ অক্টোবর, ২০২১

আধুনিক ওসলো শহর থেকে শুরু করে স্বালবার্ড দ্বীপ। এ দুইয়ের মাঝে নানা বিস্ময়কর সুন্দর স্থান। সব মিলিয়ে নরওয়ের সেরা ১০টি পর্যটন আকর্ষণের কথা থাকছে এই পোস্টে।

১. লফোটেন (Lofoten) – পোষ না মানা এক দ্বীপ


লফোটেন দ্বীপপুঞ্জ প্রকৃতির সাথে এতোটাই মিশে আছে যে একে “পোষ না মানা দ্বীপ” নামে ডাকা হয়। এই দ্বীপপুঞ্জ হচ্ছে প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি সরু লম্বা আকৃতির একটি দ্বীপপুঞ্জ যার এক প্রান্ত মূল ভূখণ্ডের সাথে সংযুক্ত। যার মানে দাঁড়ায় স্বাভাবিক দ্বীপের মতই এর সবদিকে সমুদ্র। তবে সরু একটা অংশ ভূখণ্ডের সাথে সংযুক্ত। পাহাড়ে ঘেরা এই দ্বীপপুঞ্জ। পাহাড় গুলোর চূড়া দেখতে মনে হবে যেন একেকটা গির্জার গম্বুজ। পাহাড়ের ফাঁকে ফাঁকে চোখে পড়বে ছোট ছোট গ্রাম। যেগুলোর অধিকাংশ বাসিন্দাই মাছ ধরার পেশায় নিয়োজিত। কিছু শিল্পী ধাঁচের মানুষের দেখাও পাবেন এই দ্বীপে।
সামুদ্রিক উপাদান ও ভেড়ার মাংসে তৈরি স্থানীয় খাবারগুলো এতোটাই সুস্বাদু যে কোনটা বাদ দেয়া মোটেই উচিৎ হবে না। লফোটেনে সারা বিশ্বের পর্যটকদের জন্য মূল আকর্ষণ হচ্ছে এখানকার শুভ্র বালির সৈকত। ঘুরে দেখতে পারেন লফোটার ভাইকিং মিউজিয়াম। এই দ্বীপ থেকে মূল ভূখণ্ডের যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব ভাল। পাশেই রয়েছে ইউনেস্কো তালিকাভুক্ত ভেগা দ্বীপপুঞ্জ।

২. বারগেন (Bergen) – ফিয়র্ডের প্রবেশদ্বার
Bergen
বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সঙ্গীত নির্মাতাদের একজন কিগো (Kygo) এর জন্মস্থান এই বারগেন শহর। টাটকা সামুদ্রিক খাবার, জাদুঘর এবং আর্ট গ্যালারির জন্য বিখ্যাত বারগেন শহর। সমুদ্রের কোল ঘেঁষে নানা রঙের শত শত সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি ঘর আর শহরের পেছনেই সবুজ বনে ঢাকা সাতটি পাহাড়। পাহাড়ের শরীর দিয়ে বেয়ে উঠে গেছে সোডিয়াম বাতিতে আলোকিত সরু রাস্তা। দেখে মনে হবে আপনি কোন ডিজনি মুভির সেটে দাড়িয়ে আছেন।
ব্রিগেনের মধ্যযুগীয় হানসিটিক ভার্ফ এবং তার সাথে প্রায় ৬০টি ঐতিহাসিক স্থাপনা জায়গা করে নিয়েছে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিকায়। দ্বাদশ শতাব্দীতে নির্মিত কিছু স্থাপত্যও রিয়েছে এই অঞ্চলে।

৩. ট্রংসো (Tromsø) – যেখানে আর্কটিক রোমাঞ্চের শুরু
Tromso
এই উপদ্বীপের ট্রমসাভয়া শহরটির কারণেই ট্রংসোকে আর্কটিক অঞ্চলের রাজধানী উপাধি দেয়া হয়েছে। কয়েকটি প্রধান সড়ক এই এলাকাকে একটা আন্তর্জাতিক মানের শহুরে ভাব এনে দিয়েছে। তবে শহুরে ভাবটা মোটেও মেরু অঞ্চলের স্বাদ নষ্ট করতে পারেনি। এখানে দেখার মত অনেক কিছু রয়েছে। দেখার জায়গা গুলোর মধ্যে অন্যতম হল পোলারিয়া সেন্টার, পোলার মিউজিয়াম ও ১৮৭৭ সালে স্থাপিত ম্যাক ব্রিউয়ারি। প্রকৃতি দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে বোটে করে সমুদ্রের মাঝে গিয়ে তিমি দেখা, মধ্যরাতের সূর্য বা নিশীথ সূর্য ও স্বর্গীয় সুন্দর সুমেরু প্রভা বা নর্দার্ন লাইটস।
উত্তর নরওয়ের সবচেয়ে বড় শহর ট্রংসো। শহরটির চারপাশ দিয়েই ঘিরে আছে অজস্র উঁচু পাহাড় এবং গভীর ফিওর্ড গুলোও শহরের কেন্দ্র থেকে বেশি দূরে না। প্রধান সড়ক পথ গুলো থেকেই আপনি এদের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।

৪. ওসলো (Oslo) – রাজধানী মহানগর
Oslo
পরিপূর্ণ প্রকৃতির মাঝখানে অবস্থান এই রাজধানী শহর। ওসলো ২০১৯ সালে ইউরোপিয়ান গ্রিন ক্যাপিটাল হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। এমনকি ভ্রমণ বিষয়ক জনপ্রিয় ওয়েবসাইট লোনলি প্ল্যানেট-এ ২০১৮ সালের সেরা ভ্রমণ স্থানের তালিকায় শীর্ষে ছিল এই শহর। রন্ধন শৈলী ও রেস্তোরাঁর জন্য বিশেষ জনপ্রিয়তা রয়েছে ওসলো শহরের। কিছু তিন-তারকা মানের মিশেলান (Michelin) রেস্টুরেন্টে খাওয়ার অভিজ্ঞতাও নিতে পারবেন এখানে। পুরস্কারপ্রাপ্ত বিশ্বসেরা কিছু বারিস্তা ও কফি ব্রুয়ারের জন্মও হয়েছে এই শহরে।
ছেলে বুড়ো সবার ভাল লাগার মত শহর ওসলো। রাতের শহরে গানের আয়োজন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, আধুনিক স্থাপত্য, শিল্পকর্ম, শহর জুড়ে সাইকেল চালানোর ও পায়ে হাটার আলাদা রাস্তা সব মিলয়ে স্বপ্নময় একটা শহর এই ওসলো।

৫. গেইর‍্যানগারফিওর্ড (Geirangerfjord) – ফিওর্ডের রূপকথার গল্প
Geirangerfjord
খাড়া পাহাড়ের গা বেয়ে অঝরে ঝরছে সেভেন সিস্টার্স সহ অসংখ্য ঝর্ণা। এসব ঝর্ণা গিয়ে মিলেছে কাঁচের মত স্বচ্ছ নীল পানির ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ গেইর‍্যানগারফিওর্ড-এ। এ যেন প্রাকৃতিক প্রশান্তির অভয়ারণ্য। বিশ্বের শীর্ষ প্রাকৃতিক আকর্ষণের একটি গেইর‍্যানগারফিওর্ড।
ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট তালিকাভুক্ত এই গেইর‍্যানগারফিওর্ড এর নির্দিষ্ট কোন মৌসুম নেই। সারা বছরই এর সৌন্দর্য অম্লান। গেইর‍্যানগারফিওর্ড এর আশেপাশের এলাকাতেও নানা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রয়েছে। যা সারা বছরই ভ্রমণ উপযোগী থাকে।

৬. স্বালবার্ড (Svalbard) দ্বীপপুঞ্জ – মেরু ভল্লুকের রাজ্য
Svalbard
ইউরোপের উত্তরতম অংশের বিশাল এই দ্বীপপুঞ্জ বন্যপ্রাণীর জগতকে নিয়ে গেছে এক ভিন্ন মাত্রায়। এখানে আপনি দেখতে পাবেন মেরু ভল্লুক, তিমি, সিল, আর্কটিক শিয়াল, হরিণ ইত্যাদি। পাশাপাশি এখানে রয়েছে সুসংগঠিত সামাজিক ব্যবস্থাও। এখানে আপনি সারা বছর নানা রকম রোমাঞ্চকর প্রকৃতি ভিত্তিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন।
এখানকার ট্যুরগাইডরা এতোটাই বন্ধুত্বপূর্ণ যে, আপনাকে একদম তাদেরই একজন স্থানীয় লোকের মত সমাদর করবে। এখানকার প্রধান শহর লংইয়ারবিয়ান (Longyearbyen) খুব ছোট একটি শহর হলেও যথেষ্ট স্বয়ংসম্পূর্ণ। বড় শহরের মত থাকার জন্য মানসম্মত হোটেল ও ভোজন রসিকদের জন্য রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে সবই পাবেন এখানে। এই শহরের একটা অদ্ভুত নিয়ম রয়েছে। এখানে মৃত মানুষের শরীর কবর দেয়া নিষেধ। কারণ এখানকার তাপমাত্রা এতোটাই কম যে কবর দেয়া শরীর অক্ষত অবস্থায় রয়ে যায় বছরের পর বছর।

৭. ফ্লাম (Flåm) – চমৎকার প্রকৃতি ঘেরা ছোট্ট শহর
Flam
ফ্লাম শব্দের অর্থই হচ্ছে কল্পনার মত সুন্দর। সোগনেফিওর্ডের শাখা অরল্যান্ডসফিওর্ডের ছোট্ট গ্রাম ফ্লাম। পাহাড়ের সারি ভেদ করে ২০ কিলোমিটার জুড়ে রয়েছে একটা রেলপথ যা আপনাকে নিয়ে যাবে ছোট্ট বেলার কল্পনার জগতে।
এটি নরওয়ের একটি বহুল পরিচিতি ও জনপ্রিয় পর্যটক এলাকা হলেও বসন্ত, শরৎ, এমনকি গ্রীষ্মের শুরুতেও খুব বেশি ভিড় দেখা যায় না এখানে।

৮. ট্রন্ডহাইম (Trondheim)- তৃতীয় বৃহত্তর ও সব চেয়ে রঙিন শহর
Trondheim
দুপাশে কাঠের তৈরি রং বেরঙের ভবন ও মাঝখানে প্রাণচঞ্চল পথচারী বান্ধব রাস্তা আপনাকে নিয়ে যাবে নিদারোস ক্যাথেড্রাল ও নিদেলভেন নদীর পারে অবস্থিত প্রাচীন ওয়্যারহাউজের দিকে। ট্রনডেলাগ প্রদেশের ঐতিহ্যবাহী স্থানীয় খাবারের স্বাদ নেয়ার জন্য পাবেন প্রচুর ক্যাফে ও রেস্তোরাঁ। খাবারের জন্য রয়েছে আলাদা মার্কেট, রয়েছে খাবারের উৎসবও। সঙ্গীতের প্রতি আপনার ভালবাসাকে পুনর্জীবিত করতে রয়েছে রকহেম এবং রিংভে মিউজিক্যাল মিউজিয়াম।

৯. স্ট্যাভ্যানজার অঞ্চল – প্রাকৃতিক উচ্চতার শহর
Stavanger
৫০ বছর ধরে নরওয়ের জ্বালানি তেলের রাজধানী নামে পরিচিত হয়ে আসছে স্ট্যাভ্যানজার। অথচ সমুদ্রতীরবর্তী অঞ্চল হিসেবে এর মাধুর্য একটুও নষ্ট হয়নি এতদিনে। এমনকি হাইকিং এর জন্য নরওয়ের এই অঞ্চল সারা বিশ্বে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এখানে আসলে আপনি ঘুরে দেখতে পারবেন লাইফিওর্ড এবং প্রাইকেস্টোলেনের (The Pulpit Rock) মত জনপ্রিয় পর্বত মালভূমি।

১০. সোগনেফিওর্ড (Sognefjord) – রোমহর্ষক প্রকৃতি
Sognefjord
পুরো পোস্ট জুড়েই ফিওর্ড (Fjord) শব্দটির পুনরাবৃত্তি হয়েছে। যে জায়গায় সমুদ্রের একটা অংশ ভূমি ভেদ করে ভেতরে ঢুকে যায়। অর্থাৎ তিন দিকে ভূমি ও মাঝে সমুদ্রের একটি সরু অংশ অবস্থিত তাকে ফিওর্ড বলা হয়। সোগনেফিওর্ড হচ্ছে নরওয়ের দীর্ঘতম এবং গভীরতম ফিওর্ড। এর অবস্থান বারগেনের উত্তর উপকুল থেকে জটুনহাইমেন ন্যাশনাল পার্কের বিশাল পর্বত পর্যন্ত বিস্তৃত। সোগনেফিওর্ড-এর চারপাশের পর্বতগুলো হাইকিং-এর জন্য বেশ জনপ্রিয়। এই ফিওর্ড ও উপত্যকার মনোরম ছোট্ট গ্রাম গুলোতে প্রায় ৩০,০০০ মানুষ বসবাস করে। সোগনেফিওর্ড-এর স্থানীয় প্রকৃতি, সংস্কৃতি এবং পরিবেশ দর্শনার্থীদের মধ্যে রোমাঞ্চকর এক অনুভূতির জন্ম দেয়।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com