শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০১:৩৭ অপরাহ্ন
Uncategorized

নন্দকাননে নতুন রূপে আলুটিলা

  • আপডেট সময় বুধবার, ১১ মে, ২০২২

নতুন রূপে সাজানো হয়েছে খাগড়াছড়ির আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্র। আলুটিলা— সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩০০০ হাজার ফুট উঁচু পর্বত এটি যা একটি অন্যতম ব্যতিক্রমী পর্যটনকেন্দ্র। আলুটিলা খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে ৮ কি.মি. পশ্চিমে মাটিরাঙ্গা উপজেলায় অবস্থিত। খাগড়াছড়ি শহরের প্রবেশপথ হচ্ছে আলুটিলা। এটি খাগড়াছড়ি জেলার সবচেয়ে উঁচু পর্বত। আলুটিলা থেকে সম্পূর্ণ খাগড়াছড়ি শহর দেখা যায়। আলুটিলার একটি অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে আলুটিলা রহস্যময় গুহা। স্থানীয়দের কাছে আলুটিলা গুহা ‘মাতাই হাকড়’ বা ‘দেবতার গুহা’ নামে পরিচিত। আলুটিলা গুহার দৈর্ঘ্য ৩৫০ ফুট। আলুটিলা গুহার কাছেই রয়েছে রিসাং ঝরনা।

খাগড়াছড়ির আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্রকে সাজানো হয়েছে নতুন রূপে। তৈরি করা হয়েছে নন্দকানন নামের এই স্থাপনা। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে আগামী এক বছরের মধ্যে আলুটিলার মতোই ঢেলে সাজানো হবে রিসাং ঝরনা ও মানিকছড়ি ডিসি পার্ক।

খাগড়াছড়ির এই আলুটিলাকেই সৌন্দর্য বর্ধন করে নতুন রূপে সাজানো হয়েছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাথে মিল রেখেই এখানে ঝুলন্ত সেতু, গোলচত্বর, নয়নাভিরাম হাঁটাপথ আর পাহাড়ে ধাপ কেটে তৈরি করা সিঁড়ি নিয়ে নতুন সাজে সাজানো হয়েছে আলুটিলা। আগে পর্যটকের আকর্ষণ ছিল আলুটিলা গুহা, এখন থেকে পর্যটকেরা শান্ত সমাহিত পাহাড়ের রূপও উপভোগ করতে পারবেন। উঁচু পাহাড়ের বেদিতে দাঁড়িয়ে দেখতে পারবেন খাগড়াছড়ি শহরের বিস্তার।

২০০ একর জায়গাজুড়ে অবস্থিত আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্রের তোরণ তৈরি করা হয়েছে নতুন করে। বৌদ্ধ স্থাপত্যে গড়া দৃষ্টিনন্দন তোরণ পার হলেই দুই পাহাড় নিয়ে গড়ে ওঠা পর্যটনকেন্দ্র। দুই পাহাড়কে যুক্ত করতে তৈরি করা হয়েছে ১৮৪ ফুট দীর্ঘ লোহার ঝুলন্ত সেতু (কেব্‌ল ব্রিজ)। এই সেতুতে আছে কাচের ব্যালকনি। পাহাড়ের বাঁ দিকে সড়ক ধরে গেলেই দেখা মিলবে প্রাকৃতিক গুহা ও ভিউ পয়েন্টের। আর ডান দিকের সড়ক ধরে এগোলেই দুই গজ দূরে নতুনভাবে তৈরি করা হয়েছে ভিউ পয়েন্ট কুঞ্জছায়া, আড্ডা দেওয়ার স্থান নন্দনকানন। গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে দেখা যাবে খাগড়াছড়ি শহর। ৩৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের প্রাকৃতিক গুহা এখনো এই পর্যটনকেন্দ্রের প্রধান আকর্ষণ। গুহা থেকে বেরিয়ে সেতু পার হয়ে নান্দনিক সিঁড়ি বেয়ে দর্শনার্থীরা আসবেন নন্দনকানন ও কুঞ্জছায়ায়। এর পাশেই পাহাড়ে খাঁজ কেটে তৈরি করা হচ্ছে ৭০০ আসনবিশিষ্ট অ্যাম্ফিথিয়েটার। এছাড়া চারতলাবিশিষ্ট একটি রেস্টহাউসও নির্মাণাধীন রয়েছে।

খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্র জানায়, পর্যটনকেন্দ্রের সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাসের উদ্যোগে পর্যটন মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের অর্থায়নে আলুটিলার উন্নয়নকাজ চলছে। প্রথমে ২০২০ সালে ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে তৈরি করা হয় ভিউ পয়েন্ট কুঞ্জছায়া। এরপর তৈরি করা হয়েছে তোরণসহ নানা স্থাপনা। এই কেন্দ্রে ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে তৈরি করা হয়েছে ঝুলন্ত সেতু। আর ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে অ্যাম্ফিথিয়েটারের কাজ চলছে। এ ছাড়া কোটি টাকা ব্যয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে চারতলার একটি গেস্টহাউসের কাজও এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে প্রতিদিন এখানে ৪০০–৫০০ পর্যটক আসছেন এই কেন্দ্রে। এক বছরের মধ্যে এই উদ্যোগ আরো ফলপ্রসূ হবে বলেই মনে করছেন খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন।

কীভাবে যাবেন

নতুন রূপের এই আলুটিলা দেখতে যেতে চাইলে প্রথমে খাগড়াছড়ি আসতে হবে। তারপর খাগড়াছড়ি থেকে স্থানীয় পরিবহণে আলুটিলা গুহায় যেতে হবে। খাগড়াছড়ি শহর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে মাটি রাঙ্গা উপজেলায় আলুটিলা গুহা অবস্থিত।

গুহার ভেতরে সব সময় অন্ধকার থাকে এজন্য গুহায় প্রবেশ করতে হলে মশালের প্রয়োজন হয়। চাইলে মশালের বিকল্প হিসাবে মোবাইল টর্চ বা চার্জ লাইট নিয়ে যেতে পারেন। তাছাড়া গুহার অভ্যন্তরের পাথর গুলো বেশ পিচ্ছিল তাই ভালো গ্রিপের জুতা পড়ে যাওয়া উচিত। আলুটিলা গুহায় প্রবেশের আগে মূল গেটের কাছ থেকে ৪০ টাকা দিয়ে টিকেট সংগ্রহ করতে হয়। গুহার এক প্রান্ত দিয়ে ঢুকে অন্য প্রান্ত দিয়ে বের হতে মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় লাগে। ছুটি পেলে এবার নিশ্চয়ই মন-প্রাণ নিয়ে ছুটবেন খাগড়াছড়ি, তবে সময় নিয়ে গেলেই লাভবান হবেন নিশ্চিত।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com