যুক্তরাষ্ট্রের ধনীরা ক্রমেই দেশত্যাগের পরিকল্পনা করছেন এবং সুইজারল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগ সরিয়ে নিচ্ছেন। সিএনবিসি’র এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন ধনীদের মধ্যে সুইস ব্যাংকে হিসাব খোলার প্রবণতা ব্যাপক হারে বেড়েছে। বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, দেশটির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, যার ফলে ডলারের মান হ্রাস পেতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি এবং সরকারি ঋণের পরিমাণ বাড়ার কারণে ডলার দুর্বল হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই উদ্বেগ থেকেই অনেক ধনী নাগরিক নিরাপদ গন্তব্য হিসেবে সুইজারল্যান্ডকে বেছে নিচ্ছেন। দেশটির নিরপেক্ষ রাজনীতি, স্থিতিশীল অর্থনীতি, শক্তিশালী মুদ্রা এবং শক্ত আইনি কাঠামো ধনীদের আকর্ষণ করছে।
আর্থিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান Alpen Partners International-এর সিইও পিয়েরে গ্যাব্রিস বলেন, এই পরিস্থিতি অনেকটা ঢেউয়ের মতো। ওবামা প্রশাসনের শুরুর দিকে, কোভিডের সময় এবং বর্তমানে ট্রাম্পের শুল্কনীতির প্রেক্ষাপটে একই রকম ঢেউ দেখা গেছে। ধনীরা আর শুধু ডলারভিত্তিক বিনিয়োগে আটকে থাকতে চান না। কেউ কেউ আবার রাজনৈতিক কারণে যুক্তরাষ্ট্রে আর নিরাপদ বোধ করছেন না। অনেকেই সোনা কেনার উদ্দেশ্যে সুইজারল্যান্ডে হিসাব খুলছেন, কারণ সোনা সংরক্ষণে দেশটি বিশ্ববিখ্যাত।
শুধু সুইজারল্যান্ড নয়, যুক্তরাষ্ট্রের ধনীরা ইউরোপ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিভিন্ন দেশ যেমন সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস, গ্রানাডা, মাল্টা, পর্তুগাল, গ্রিস প্রভৃতি দেশে গোল্ডেন ভিসার আওতায় অভিবাসনের পরিকল্পনা করছেন। Henley & Partners-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ১ লক্ষ ৪২ হাজারের বেশি ধনী নাগরিক বিদেশে বসবাসের জন্য পদক্ষেপ নিতে পারেন। একটি আইনি প্রতিষ্ঠানের হিসাব বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের ৫৩ শতাংশ মিলিয়নিয়ার দেশত্যাগের কথা ভাবছেন।
এদের মধ্যে মিলেনিয়াল ও জেন-জি প্রজন্মের ধনীদের মধ্যে এই প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপত্তা, কর সুবিধা, কাজ ও ব্যক্তিগত জীবনের ভারসাম্য এবং সাংস্কৃতিক মুক্তির জন্য তারা দেশত্যাগে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
ডলারের দুর্বলতা এবং ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে যাওয়ায় মার্কিন অর্থনীতিতে চাপ বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে ধনীদের দেশত্যাগ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্ক সংকেত হিসেবে দেখা হচ্ছে। একইসঙ্গে যুক্তরাজ্যের ধনীরাও দেশ ছাড়ছেন। ২০২৪ সালে ১১ হাজারের বেশি ব্রিটিশ ধনী লন্ডন ছেড়েছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।