বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প বিশ্বব্যাপী পরিচিতি ও দেশে পর্যটক সমাগম বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশেষ উদ্যোগ নিচ্ছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে পর্যটন খাত আরও গতিশীল করার প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর তৎপর হয়ে উঠছে এ খাতের নীতিনির্ধারকরা। এ লক্ষ্যে বিদেশী অতিথিরা যাতে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরসহ অন্যান্য স্থলবন্দরে কোন ধরনের হয়রানির শিকার না হয় সে জন্যও নেয়া হচ্ছে বিশেষ তদারকির ব্যবস্থা।
সূত্র জানায়, গত বছর টুরিস্ট ভিসায় বাংলাদেশে ৭৭,৩৭৩ বিদেশী নাগরিক আসেন। চলতি বছরের মে মাসের গত প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত এসেছেন ৩৩ হাজারেরও বেশি। এদের বেশিরভাগই ছিল ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও চীনের। আরও ছিল য্ক্তুরাষ্ট্র, য্ক্তুরাজ্য,ও ইতালিসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়- বছরতিনেক আগেও টুরিস্ট ভিসায় বাংলাদেশে প্রায় আড়াই লাখেরও বেশি বিদেশী নাগরিক ভ্রমণ করেন।
গত দু’বছরে রাজনৈতিক অস্থিরতাও সংঘাতের দরুন এ সংখ্যা অনেকটা হ্রাস পায়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি আর বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্র সৈকতের বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পের বিপ্লব ঘটানোর সম্ভাবনা রয়েছে প্রবল। তদুপরি এ খাতে কেন মন্দা ভাব সেটা খোদ প্রধানমন্ত্রীরও প্রশ্ন। বৃহস্পতিবারের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদেশী পর্যটক আকৃষ্ট করার ব্যাপারে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার ওপর জোর তাগিদ দেন।
সূত্র জানায়, বর্তমানে বিদেশী নাগরিকদের টুরিস্ট ভিসা প্রদানে অনেক ক্ষেত্রেই নানা ধরনের জটিলতা রয়েছে। যেমন ২০০৪ সালের পর থেকে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে জঙ্গীবাদের দাপট বৃদ্ধি পাওয়ায় ট্যুরিস্ট ভিসা প্রদান বেশ কড়াকড়ি করা হয়। পুলিশের বিশেষ শাখার একাধিক সূত্র জানায় তার পরও গত বছর ভারত ও পাকিস্তান থেকে উল্লেখযোগ্য পর্যটক আসেন।
ইমিগ্রেশন পুলিশের এসএস নাফিউল বলেন, বর্তমানে বিদেশী নাগরিকদের টুরিস্ট ভিসা পদ্বতি যথেষ্ট সহজ। পৃথিবীর অন্য কোন দেশ এত উদারচিত্তে টুরিস্ট ভিসা দিচ্ছে বলে আমার জানা নেই। বাংলাদেশের ভিসা পদ্ধতিও অনেক দেশের তুলনায় যথেষ্ট আন্তরিক।
তিনি বলেন, অনেক দেশের নাগরিককে ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসার পর অন এ্যারাইভাল ভিসাও দেয়া হচ্ছে। যেমন-নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা ও চীনসহ কয়েকটি দেশের নাগরিকরা এ সুবিধা পাচ্ছে। এ ছাড়া যে সব দেশের দূতাবাস ঢাকায় নেই, সেসব দেশের নাগরিকদেরও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিমানবন্দরে অন এ্যারাইভাল ভিসা প্রদান করা হয়।
এ ব্যাপারে পর্যটক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন-বিদেশী নাগরিকদের ট্যুরিস্ট ভিসা প্রদান পদ্ধতি যত বেশি সহজীকরণ করা যাবে তত বেশি পর্যটকের সংখ্যা বাড়বে। তার বড় প্রমাণ নেপাল। পৃথিবীর সব দেশের নাগরিকদেরক কাঠমান্ডু বিমানবন্দরে পৌঁছামাত্রই কয়েকমিনিটের মধ্যে ভিসা প্রদান করা হয়। এ কারণে পাহাড়ের দেশ নেপালের রাজস্ব আয়ের সিংহভাগ আসে বিদেশী পর্যটকদের পকেট থেকে। নেপালের তুলনায় বাংলাদেশের পর্যটন খাতে সম্ভাবনা অনেক বেশি। এ কারণেই বিদেশী পর্যটকবান্ধব ভিসা পদ্ধতির কোন বিকল্প নেই।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান ন্দরের মাধ্যমেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিদেশী পর্যটক আসছেন। তাদের বেশিরভাগই নিজ দেশ থেকে ভিসা নিয়ে আসছেন। অত্যন্ত সীমিত আকারে কয়েকটি দেশের নাগরিককে অন এ্যারাইভাল বা আগমনী ভিসা দেয়া হয়। পর্যটক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন- টুরিস্ট ভিসা সহজীকরণ করা হলে, বিদেশী পর্যটকদের সংখ্যা বাড়বে প্রত্যাশিত হারে। তাতে জাতীয় রাজস্ব বৃদ্ধির অন্যতম নির্ভরযোগ্য খাত হয়ে উঠবে পর্যটন।