পুরোদমে চলছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রস্তুতি। নিরাপত্তাজনিত কারণে সুনির্দিষ্ট তারিখ এখনো জানা না গেলেও দেশে প্রস্তুত রয়েছে তার আবাসন ব্যবস্থা ও অফিস। বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল ইতিমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করেছে। তবে বিজয় দিবসের আগেই তিনি দেশে ফিরছেন বলে জানা গেছে।
তার দেশে ফেরার পর নেতাকর্মীদের মধ্যে উদ্দীপনা তৈরি হবে-এটি মাথায় রেখেই নিরাপত্তাসহ অন্যান্য বিষয়ে প্রস্তুতি চলছে। তার ফেরার দিন বড় কোনো জনসমাগম হবে কিনা, তা তারেক রহমানের নিজস্ব সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।
বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, গুলশান-২-এর এভিনিউ রোডের ১৯৬ নম্বর বাড়িতে থাকবেন তারেক রহমান। সূত্রমতে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের থাকার জন্য ওই বাড়িতে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে।
অন্তবর্তী সরকার সম্প্রতি গুলশানের ১৯৬ নম্বর বাড়ির নামজারি সম্পন্ন করে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র খালেদা জিয়ার হাতে বুঝিয়ে দিয়েছে। এই বাড়ির পাশের ‘ফিরোজা’ ভবনেই থাকেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ১৯৮১ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাতের পর তদানীন্তন সরকার তার স্ত্রী খালেদা জিয়াকে এ বাড়িটি বরাদ্দ দেন। এরপর দীর্ঘদিন ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশের কাছে ভাড়া ছিল বাড়িটি।
বিএনপির অপর আরেকটি সূত্র জানায়, চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়েই তারেক রহমান অফিস করবেন। তার বসার উপযোগী করে ইতিমধ্যে কক্ষটি সাজানো হচ্ছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাবাহিনী সিএসএফ-ই তারেক রহমানের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে। এদিকে, নির্বাচনী প্রচারণাকে সামনে রেখে দুটি বুলেটপ্রুফ গাড়ি কেনার উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নিরাপত্তায় এ গাড়ি কেনার অনুমতি ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া হয়েছে। গত অক্টোবরে একটি বুলেটপ্রুফ বাস ও জুন মাসে একটি বুলেটপ্রুফ গাড়ি কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়। দলের কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যবহারের জন্য বুলেটপ্রুফ গাড়ি কেনার আবেদন করেন। এছাড়া আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের জন্যও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে দলটি।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হুমায়ুন কবির বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ফেরার তারিখ এখনো ঠিক হয়নি। তবে নির্বাচনে তার নেতৃত্বেই আমরা অংশ নেব। তাই তিনি শিগগিরই দেশে ফিরবেন-এটা ধরে নেওয়া যায়। তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। আমরা আশা করি, অন্তবর্তী সরকার তার নিরাপত্তা নিশ্চিন্তে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেবে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরার জন্য পাসপোর্ট বা ট্রাভেল পাস প্রয়োজন হলে সরকার তা দেবে।
প্রায় ১৭ বছর ধরে লন্ডনে আছেন তারেক রহমান। ২০০৭ সালের ৭ মার্চ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে থাকাকালীন তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তিনি জামিনে মুক্তি পান এবং ১১ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য পরিবারসহ লন্ডনে চলে যান। সেখান থেকেই তিনি দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেওয়ার পর তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর সব মামলা থেকে তিনি অব্যাহতি পান।