ছোটবেলা থেকেই প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন ছিল। উচ্চমাধ্যমিক শেষে প্রকৌশল নিয়ে পড়ার ইচ্ছার পাশাপাশি বিমানের প্রতি একধরনের আগ্রহ তৈরি হয়। ইচ্ছা আর আগ্রহকে গুরুত্ব দিয়েই ঢাকার উত্তরায় কলেজ অব অ্যাভিয়েশন টেকনোলজিতে ভর্তি হন মো. মাসুম বিল্লাহ। এখানে তিনি অ্যারোনটিক্যাল অ্যান্ড অ্যাভিয়েশন সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ছেন। তাঁর ভাষ্য, ‘এখন তো সারা বিশ্বেই নানা ধরনের ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ বাড়ছে। প্রকৌশলী হওয়ার লক্ষ্য নিয়েই আমি অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছি। এ বিষয়ে পড়ে শুধু যে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ হয়, তা নয়। আমাদের বেশ কয়েকজন সিনিয়র বিশ্বের আলোচিত সব বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। তাঁদের দেখেই আমি আরও অনুপ্রাণিত হয়েছি।’
কলেজ অব অ্যাভিয়েশন টেকনোলজিতে হাতে-কলমে শিক্ষাকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় বলে জানালেন মাসুম। বন্ধু শামীম হোসেন, আফসানা মিমি, ইকরাম আলীসহ ক্লাসের বাকি শিক্ষার্থীদের নিয়ে এরই মধ্যে ঘুরে এসেছেন হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। বিমানবন্দরগুলোতে কীভাবে কার্যক্রম চলে, সেসব দেখেছেন। বিমানের নানা প্রকৌশলসংক্রান্ত বিষয়গুলোও হাতে-কলমে শেখার সুযোগ পান কলেজ অব অ্যাভিয়েশন টেকনোলজির শিক্ষার্থীরা।
ক্যাম্পাসের প্রবেশমুখেই রাখা আছে বিভিন্ন বিমানের বড় বড় ইঞ্জিন। পাশে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে। ক্লাসরুমে বসেই দেখা যায় বিমানের উড্ডয়ন-অবতরণ। কলেজের চতুর্থ বর্ষে পড়ছেন আকরাম মাইনুর। তাঁর বাবা সৌদিপ্রবাসী। তাই শৈশবেই বিমানে চড়ে সৌদি আরবে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। তখন থেকেই বিমান কীভাবে কাজ করে, তা নিয়ে আগ্রহ। তাই ভর্তি হন কলেজ অব অ্যাভিয়েশন টেকনোলজিতে। জর্ডান ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে ইন্টার্নশিপ করেছেন মাইনুর। যখন দ্বিতীয় বর্ষে পড়তেন, তখন প্রায় তিন মাস প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ হয়েছে। ভবিষ্যতে বিদেশের কোনো বিমান সংস্থায় যোগ দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানালেন তিনি। মাইনুরের সহপাঠী মাহবুব আলম, জেরিন খান, সাইফুরের কথায়ও একই সুর।
কুলসুম লিনা কলেজের শেষ বর্ষে পড়ছেন। এখন দুবাইয়ে আছেন তিনি। ইতিহাদ এয়ারওয়েজে ইন্টার্নশিপ করছেন। ২০ জুন হোয়াটসঅ্যাপে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। লিনা বলেন, ‘অ্যাভিয়েশন নিয়ে ক্যারিয়ার অনেক বিস্তৃত। বিমানসংক্রান্ত বিষয়ে পড়তে হলে অনেক ব্যবহারিক দক্ষতার প্রয়োজন হয়। শুধু ক্লাসরুমে পড়াশোনা করলেই চলে না। এ কারণে কলেজে পড়ার সময় থেকেই আমি হাতে–কলমে শেখার চেষ্টা করেছি। ইতিহাদের আগেও আমি আরেকটা জায়গায় ইন্টার্নশিপ করেছিলাম। সেবার স্যাটেলাইট নিয়ে গবেষণার সুযোগ হয়েছিল। এ ধরনের সুযোগে শিক্ষার্থী হিসেবে বেশ ভালো অর্থও আয় করা যায়। আমি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ পেয়েছি। শুধু আমি নই, আমাদের কলেজের অনেক শিক্ষার্থীই নানা প্রতিষ্ঠানে যুক্ত আছেন।’ কলেজ অব অ্যাভিয়েশন টেকনোলজিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন দুটি বিষয়ে স্নাতক করার সুযোগ আছে। অ্যারোনটিক্যাল অ্যান্ড অ্যাভিয়েশন সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (বিএসসি) এবং অ্যাভিয়েশন ম্যানেজমেন্ট (বিবিএ)। অ্যারোনটিক্যাল অ্যান্ড অ্যাভিয়েশন সায়েন্সে বিমানসংক্রান্ত বিজ্ঞান ও প্রকৌশল পড়ানো হয়। অ্যাভিয়েশন ম্যানেজমেন্টের শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে শেখানো হয় এই খাতসংক্রান্ত নানা ব্যবস্থাপনার কৌশল।
মো. মাহবুব আলম এই কলেজে অ্যারোনটিক্যাল অ্যান্ড অ্যাভিয়েশন সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে (বিএসসি) চতুর্থ বর্ষে পড়ছেন। ইন্টার্নশিপ করেছেন ভারতের কারুনিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেসে। তাঁর সহপাঠী সত্যজিৎ মুখার্জিও একই প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ করেছেন। মাহবুব বলেন, ‘ইন্টার্নশিপের সময় আমি অ্যারোস্পেস বিভাগে গবেষণায় যুক্ত ছিলাম। সেখানে নিজস্ব প্রকল্প নিয়ে কাজ করেছি। এ ছাড়া আমি ওমানের ওমান সুলতান কাবুস ইউনিভার্সিটিতে ইন্টার্নশিপ করেছি।’
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনে কলেজ অব অ্যাভিয়েশন টেকনোলজি থেকে শিক্ষার্থীরা সনদ পান। কলেজে ভর্তিপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী। দুটি বিষয়েই চার বছরের কোর্স। অ্যারোনটিক্যাল অ্যান্ড অ্যাভিয়েশন সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে আট সেমিস্টারের বেতন, ভর্তি ফিসহ, আনুষঙ্গিক খরচ প্রায় সাড়ে আট লাখ টাকা। এ ছাড়া অ্যাভিয়েশন ম্যানেজমেন্টে ৮ সেমিস্টারে খরচ পড়বে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ টাকা। বৃত্তি ও আর্থিক প্রণোদনারও সুযোগ আছে। বিস্তারিত জানা যাবে তাদের ফেসবুক পেজে: www.facebook.com/Collegeofaviationtechnology
ঠিকানা: সেক্টর -১৬ জে, সড়ক -১৩, প্লট -২২, উত্তরা, ঢাকা। ফোন: ০১৯২৬৯৬৩৬৫৩