সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২২ পূর্বাহ্ন

দেশের বিখ্যাত ভ্রমণ গন্তব্য

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

বলা হয়ে থাকে, যেকোনো কিছুর সৌন্দর্য আলাদা আঙ্গিকে প্রকাশ করতে চাইলে সেটির উপস্থাপন করার বিষয়ে হওয়া লাগে যত্নবান। যেমন ধরুন, আপনি আপনার ভালোলাগার বিষয়টি আলাদাভাবে ব্যক্ত করতে চান। এখন সেই ভালোলাগা যদি সাধারণভাবে প্রকাশ করে ফেলা হয় তাহলে কেমন যেন ফিকে হয়ে যায়। কিন্ত আপনি যদি সেটি না করে কিছু পন্থা অবলম্বন করেন তাহলেই সেটি হবে অনিন্দ্য সুন্দর।

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যে কাউকে মুগ্ধ করতে বাধ্য্। এখন আমাদের যদি কখনও নিজের দেশের ভালোলাগা বা অনিন্দ্য সৌন্দর্যের কথা প্রকাশ করতে হয় তাহলে সেক্ষেত্রে কিভাবে প্রকাশ করবেন, কখনও কি ভেবে দেখছেন? এমন বিশেষ কী স্থান আছে যা আমাদের দেশকে করতে পারে একটু আলাদা। আর সেই দর্শনীয় স্থানগুলোর সাথে সাথে একটু বিস্তারিত না জানলে কী আর হয়। আজকের পর্বটিতে তেমনই কিছু স্থান নিয়ে বলা হয়েছে।

চলুন জেনে আসি আজকের পর্বে কোন কোন স্তানগুলো আছে আপনদের জন্য :

পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার :

নওগাঁ জেলায় অবস্থিত পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার যা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ বিহার। পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের অপর নাম সোমপুর বিহার। এটি নির্মাণ করেছিলেন ধর্মপাল, যিনি পাল বংশের দ্বিতীয় রাজা ছিলেন। এটি অষ্টম শতকে নির্মাণ করা হয়েছিল। ১৮৭৯ সালে পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার আবিষ্কার করেছেন স্যার আলেকজান্ডার কানিংহাম।

সম্পূর্ণ বৌদ্ধ বিহারটি দেখতে অনেকটা চতুষ্কোণ আকার। এখানে চওড়া সীমানা দেয়াল রয়েছে। এছাড়া রয়েছে সারিবদ্ধ ছোট ছোট কক্ষ। কক্ষগুলোতে ভিক্ষুরা বসবাস করতেন বলে ধারণা করা হয়। সারিবদ্ধ কক্ষগুলোর দৈর্ঘ্য ৪ দশমিক ২৬ মিটার এবং প্রস্থ ৪ দশমিক ১১ মিটার। সামনে ২ দশমিক ৫ মিটার বারান্দা রয়েছে। কেন্দ্রে একটি মন্দির রয়েছে। এখানে রয়েছে উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ, স্নানঘর এবং শৌচাগার। সোমপুর বিহার বৌদ্ধদের জন্য পবিত্র তীর্থস্থান। বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা এখানে বেড়াতে আসেন।

এশিয়ার বৃহত্তম মিঠাপানির জলাভূমি হাকালুকি হাওর :

হাকালুকি হাওয়ার এশিয়ার বৃহত্তম মিঠাপানির জলাভূমি। পাঁচটি উপজেলা এবং এগারোটি ইউনিয়ন নিয়ে সিলেট ও মৌলভীবাজার এর সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত হাকালুকি হাওর। এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম হাওর। এর আয়তন ১৮,১১৫ হেক্টর। হাকালুকি হাওরে প্রায় ১০০টির বেশি ছোট-বড় বিল রয়েছে। ভ্রমণের জন্য বর্ষাকাল এবং শীতকাল সর্বোত্তম সময়।

এখানে দিগন্ত বিস্তৃত প্রাকৃতিক দৃশ্য চমৎকার। চারিদিকে সবুজ ঘাস, সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের এক অপরূপ ছবি মনের মধ্যে তৈরি করে। এছাড়াও শীতকালে পরিযায়ী পাখিদের আগমনে মুখরিত হয়ে ওঠে। এখানে আঁই, চিতল, বাউশ, পাবদা, মাগুর, শিংসহ অনেক ধরনের মাছ পাওয়া যায়।এছাড়াও বিভিন্ন জাতের উদ্ভিদ জন্মে হাকালুকি হাওরে।

বান্দরবানে জলপ্রপাতের ছড়াছড়ি :

প্রায় ২৫টি দেখার মতো জায়গা রয়েছে বান্দরবানে। আদিবাসীদের জীবন সংস্কৃতির মাঝে এমন একটি জেলা না দেখলে জীবনের অনেক কিছু মিস করবেন।

নাফাখুম জলপ্রপাত বান্দরবান জেলার থানচিতে অবস্থিত। বান্দরবান জেলা প্রাকৃতিক পরিবেশে এমনিতেই অনন্য। এখানে অসংখ্য জলপ্রপাত রয়েছে, তার মধ্যে নাফাখুম জলপ্রপাত অন্যতম। এটি মারমা এলাকায় অবস্থিত। নৌকা বেয়ে জলপ্রপাতে পৌঁছাতে হয়। যেতে যেতে চারপাশে অনেক পাহাড় দেখতে পাবেন। মনে হবে পাহাড় গুলো যেন মেঘ ছুঁয়েছে। পাহাড়ের উপরে দুই একটা বাড়ি দেখতে পাওয়া যায়। রেমাক্রি থেকে তিন ঘণ্টা হেঁটে আপনাকে পৌঁছাতে হবে নাফাখুম জলপ্রপাতের নিকটে। এখানে মারমাদের বাঁশ এবং কাঠের তৈরি বিশেষ বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।

বাকলাই ঝরনা বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলা অবস্থিত। ঝরনাটি প্রায় ৩৮০ ফুট উঁচু। বাকলাই ঝরনায় যেতে হলে প্রথমত আপনাকে বাকলাই গ্রামে যেতে হবে। কেওক্রাডং থেকে তাজিংডং পর্বতের মধ্যবর্তী জায়গায় বাকলাই গ্রাম অবস্থিত। সেই বাকলাই গ্রাম থেকে এক ঘন্টা পায়ে হেঁটে পৌঁছাতে হয় বাকলাই ঝরনায়।

এছাড়া রয়েছে শৈলপ্রপাত ঝরনা, জোড়া ঝরনাসহ আরো অসংখ্য ঝরনা।

ফয়েজ লেক :

১৯২৪ সালে আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রামে এই লেকটি তৈরি করেছিলেন। এটি মূলত তৈরি করা হয়েছিল পানির সুবিধার জন্য। এর নয়নাভিরাম দৃশ্য পর্যটকদের আকর্ষণ করে। চিত্তবিনোদনের জন্য এই লেকের তুলনা নেই। আশেপাশের সৌন্দর্য, সবুজ গাছপালা স্নিগ্ধ বাতাস নতুন রুপ তৈরি করে পর্যটকদের কাছে।

সাজেক ভ্যালি :

রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত সাজেক ভ্যালি। সাজেক ভ্যালি মূলত তিনটি পাড়ার সমন্বয়ে গঠিত : রুইলুই পাড়া, হামারি পাড়া এবং কংলাক পাড়া। সাজেক ভ্যালিকে বলা হয় মেঘের দেশ। এখানে আসলে আপনি অনায়াসেই মেঘ ছুঁয়ে দেখতে পারবেন। মেঘ ছোঁয়া ছাড়াও সাজেক ভ্যালির চমৎকার পাহাড় এবং সবুজে পরিপূর্ণ অরণ্যভূমির দৃশ্য পর্যটকদের আকর্ষণ করে।

এখানে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের সময় চারিদিক দৃশ্য আরও অপূর্ব হয়ে ওঠে। পর্যটকদের জন্য এখানে বাঁশের মাচানের উপর বাড়ি রয়েছে। সাজেক ভ্যালিতে লুসাই, পাংখোয়া ও ত্রিপুরা উপজাতিরা বসবাস করে। বর্তমানে পর্যটকদের কাছে এটি বেশ জনপ্রিয়।

জান্নাতুল ফেরদৌস

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com