শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১০:০১ অপরাহ্ন
Uncategorized

দেশের বাইরে থেকে বাংলাদেশের ই-পাসপোর্ট করবেন যেভাবে

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০২৩

বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বাইরের দূতাবাসগুলোতেও ধীরে ধীরে শুরু হচ্ছে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম

দেশে ও দেশের বাইরে প্রতিটি নাগরিক ও অভিবাসীদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নথির নাম পাসপোর্ট। একজন নাগরিকের জন্য তার পাসপোর্টটি তার নিজের দেশে যতটা না দরকার তার চেয়েও বেশি দরকার অভিবাসনের মাধ্যমে তিনি যে দেশে যাচ্ছেন সেই দেশে। সেখানে তার অভিবাসনের কারণ ও উদ্দেশ্যের পাশাপাশি দেশে প্রত্যাবর্তনের জন্য একমাত্র অবলম্বন এই পাসপোর্ট। তাই সেই দেশে থাকার মুহূর্তগুলোতে পাসপোর্টের কার্যকারীতার ব্যাপারে যথেষ্ট খেয়াল রাখা উচিত।

বর্তমানে বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বাইরের দূতাবাসগুলোতেও ধীরে ধীরে শুরু হচ্ছে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম। সেই দেশগুলোতে বাংলাদেশের মতোই পাসপোর্টের নবায়নকারীদের দেওয়া হচ্ছে নতুন ই-পাসপোর্ট। চলুন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেশের বাইরে থেকে পাসপোর্ট নবায়ন করার উপায় জেনে নেওয়া যাক।

ই-পাসপোর্ট-এর জন্য আবেদনের যোগ্যতা

বাংলাদেশে অবস্থানকারী পাসপোর্টধারীদের ন্যায় বিদেশ- বিভুঁইয়ে থাকা বাংলাদেশিদেরও পাসপোর্ট নবায়ন এবং নতুন ই-পাসপোর্ট আবেদনের জন্য একই পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। এজন্য পূর্বশর্তগুলো হলো-

আবেদনকারীর অবশ্যই একটি বৈধ বাংলাদেশি এনআইডি(জাতীয় পরিচয়পত্র) কার্ড এবং অনলাইনে নিবন্ধিত জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র থাকতে হবে।

জন্ম নিবন্ধন সনদের ক্ষেত্রে, আবেদনকারীর নিজের ও পিতামাতার নামের সঙ্গে যেন অবশ্যই আবেদনের সংশ্লিষ্ট তথ্যের মিল থাকে। নতুবা আগে প্রয়োজনীয় সংশোধন করে জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র ঠিক করতে হবে।

উপরন্তু, আবেদনকারী মার্কিন নাগরিক হয়ে থাকলে, তাকে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক জারি করা দ্বৈত জাতীয়তা সনদপত্র দেখাতে হবে। অন্যথায়, আবেদনকারীর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করার জন্য থাকতে হবে বৈধ কাগজপত্র যেমন- বৈধ ভিসা বা স্থায়ী বাসিন্দা কার্ড।

বাংলাদেশি পাসপোর্টের সঙ্গে এক বছরের বেশি মেয়াদ থাকলেও আবেদন করা যাবে না যদি না সেই পাসপোর্টধারীদের যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের স্বপক্ষে কোন বৈধ প্রমাণপত্র থাকে।

প্রবাসীদের পুরাতন পাসপোর্ট নবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

  • বারকোড এবং অ্যাপয়েন্টমেন্টের তারিখসহ পাসপোর্ট নবায়নের জন্য আবেদনের সারাংশ
  • অনলাইনে জমাকৃত আবেদনের প্রিন্ট কপি
  • পাসপোর্ট নবায়ন ফি পরিশোধের মানি অর্ডার/ক্যাশিয়ার চেক/অফিসিয়াল চেক
  • বর্তমান বাংলাদেশি পাসপোর্টের মূল কপি
  • বাংলাদেশি এনআইডি কার্ড কপি অথবা জন্ম সনদের অনলাইনে নিবন্ধনের যাচাইকরণ ওয়েবপৃষ্ঠার কপি সহ জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র
  • মার্কিন নাগরিক হলে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত দ্বৈত জাতীয়তা সনদপত্রের অনুলিপি
  • মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের প্রমাণপত্রের অনুলিপি, যেমন বৈধ ভিসা, স্থায়ী বাসিন্দা কার্ড, অথবা একটি নোটারাইজড হলফনামা যেখানে উল্লেখ থাকবে যে আবেদনকারী মার্কিন নাগরিক নন।
  • প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বিবাহ/তালাক নিবন্ধন শংসাপত্রের অনুলিপি
  • বর্তমান বাংলাদেশি এমআরপি(মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট)-এর তথ্যে কোনো পরিবর্তন প্রয়োজন হলে তার স্বপক্ষে প্রাসঙ্গিক কাগজপত্র

অনলাইনে প্রবাসীদের ই-পাসপোর্ট নবায়ন করার পদ্ধতি

প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য অনলাইনে পাসপোর্ট নবায়নের আবেদন পদ্ধতি

বাংলাদেশে অবস্থানরত নাগরিকদের মত প্রবাসী বাংলাদেশিরাও অনলাইনে পাসপোর্ট নবায়নের জন্য ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট বিভাগে যেয়ে ডিরেক্টলি টু অনলাইন অ্যাপ্লিকেশনে ক্লিক করবেন। শুরুতেই বাংলাদেশ থেকে আবেদন করা হচ্ছে কি-না জানতে চাওয়া হবে। এখানে না উত্তর দেওয়ার পর বাছাই করতে হবে দেশ ও বাংলাদেশ দূতাবাসের নাম। তারপর নাম, মোবাইল নম্বর, ইমেইল ঠিকানা এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে ওয়েবসাইটে নতুন একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে।

 

নামটি অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র বা অনলাইনে নিবন্ধিত জন্ম সনদ অনুসারে হতে হবে। ইমেইল ঠিকানা যাচাইয়ের মাধ্যমে নিবন্ধনের পর ইমেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে ওয়েবসাইটে লগইন করতে হবে। তারপর শুরু হবে পাসপোর্ট নবায়নের মুল আবেদন।

এখানে ব্যক্তিগত সেকশন থেকে শুরু করে বিতরণের ধরণ পর্যন্ত যথাযথ তথ্যাবলি দিয়ে পূরণ করতে হবে। তন্মধ্যে আইডি ডকুমেন্ট সেকশনে “Yes, I have a Machine Readable Passport (MRP)” অপশনটি বাছাই করতে হবে। এরপরে পাসপোর্ট আবেদনের কারণ হিসেবে Expired অপশনটি বাছাই করে বর্তমান পাসপোর্টের নাম্বার, ইস্যু ও মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ লিখে দিতে হবে।

অতঃপর পুরো আবেদনপত্রটি সফলভাবে শেষ হলে সাবমিট করার পর ডাউনলোড করে তার একটা প্রিন্ট নিয়ে নিতে হবে।

প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশের বাইরে থেকে যেভাবে পাসপোর্ট নবায়ন ফি দিবেন

মানি অর্ডার/ক্যাশিয়ার/অফিসিয়াল চেক (অনুর্ধ্ব ৩০ দিন)-এর মাধ্যমে বাংলাদেশ দূতাবাস বরাবর নবায়ন ফি প্রদেয় করতে হবে। নগদ বা ব্যক্তিগত চেক বা অনলাইন পেমেন্ট গ্রহণ করা হয় না। তাই অনলাইন আবেদন করার সময় অফলাইন পেমেন্ট নির্বাচন করতে হবে। দূতাবাসে বায়োমেট্রিক তালিকাভুক্তির সময় আবেদনকারীকে মানি অর্ডার/ক্যাশিয়ার/অফিসিয়াল চেক ব্যক্তিগতভাবে জমা দিতে হবে।

দেশের বাইরে বাংলাদেশি ই-পাসপোর্ট নবায়নের ফি-এর তালিকা

ই -পাসপোর্ট ৪৮ ও ৬৪ পৃষ্ঠার হয়ে থাক। প্রবাসীরা ৫-বছর বা ১০-বছর মেয়াদি পাসপোর্ট করতে পারবেন। পাসপোর্ট ডেলিভারি রেগুলার, বা জরুরি ভিত্তিতে নিতে পারেন।

বিভিন্ন দেশের পাসপোর্ট নবায়ন ফি বিভিন্ন। প্রবাসীগণ যে দেশে অবস্থান করছেন বা যে দেশ থেকে পাসপোর্ট রিনিউ করতে চান সেই দেশের দূতাবাসের ওপর নির্ভর করে এই ফি ভিন্ন হয়।

পুরাতন পাসপোর্ট নবায়নের আবেদন কীভাবে ও কোথায় জমা দিবেন

যুক্তরাষ্ট্রে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম চালুর পূর্বে ইমেলের মাধ্যমে অ্যাপয়েন্টমেন্টের সময় জানানো হতো। কিন্তু এখন অনলাইনে আবেদন করার প্রক্রিয়া চলাকালীন অ্যাপয়েন্টমেন্টের সময় নির্ধারণ করতে হবে। আবেদনের প্যাকেজ বা পাসপোর্ট আবেদন সংক্রান্ত কোনো নথি ডাকযোগে পাঠানো যাবে না।

 

আবেদনকারীকে অ্যাপয়েন্টমেন্টের নির্ধারিত তারিখে সশরীরে দূতাবাসে আসতে হবে। অতঃপর বায়োমেট্রিক তালিকাভুক্তির পরে আবেদনকারীর বর্তমান পাসপোর্ট ফেরত দিয়ে দেওয়া হবে। তালিকাভুক্তি সম্পূর্ণ করার আগে খসড়া ডেলিভারি স্লিপ দেখানো হবে। সেখানে সমস্ত তথ্য যাচাই করার পর আবেদনকারী তাতে স্বাক্ষর করে তার নিজের কপিটি সঙ্গে নিয়ে আসবেন। আবেদনকারীর বর্তমান ঠিকানা কোন দূতাবাসের আওতায় পড়েছে তা জানা যাবে সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশ দূতাবাসের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে।

প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাসপোর্ট নবায়নে কত দিন সময় লাগে

সাধারণত এক্সপ্রেস ডেলিভারিতে ২১ কার্যদিবস, রেগুলার ডেলিভারিতে ৪৫ কার্যদিবস লাগে। তথ্য অসামঞ্জস্যতা বা সংশোধনের ক্ষেত্রে পাসপোর্ট প্রক্রিয়াকরণের সময়ে আরও বেশি সময় লাগতে পারে। তাছাড়া ই-পাসপোর্ট ঢাকা থেকে প্রস্তুত হয়ে বিতরণ হয় বলে কমপক্ষে তিন সপ্তাহ সময় লেগে যায়।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের অবস্থানরত বাংলাদেশিদের ই-পাসপোর্ট হাতে পেতে আনুমানিক ৭৫ দিন সময় লাগে। জার্মানিতে ৮-১০ সপ্তাহ; কখনও কখনও এর চেয়েও বেশি সময় লেগে যায়।

নবায়নকৃত পাসপোর্ট সংগ্রহ

তালিকাভুক্তির সময় আবেদনকারী যদি একটি প্রিপেইড ও স্ব-ঠিকানাযুক্ত রিটার্ন খাম (শুধুমাত্র ইউএসপিএস) ট্র্যাকিং নম্বর এবং নিজের বাংলাদেশি এনআইডির অনুলিপি প্রদান করেন তাহলে তাকে নতুন পাসপোর্ট ডাকযোগে পাঠানো হবে।

নতুন পাসপোর্ট ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে দূতাবাসে ই-পাসপোর্ট সফটওয়্যারের মাধ্যমে গৃহীত হয়। এ সময় সাধারণ টেমপ্লেট সহ একটি সিস্টেম জেনারেট করা ইমেল ঢাকার ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট বিভাগ থেকে পাসপোর্ট সংগ্রহ করার জন্য আবেদনকারীর নিকট একটি ইমেইল যায়। এই বার্তাপ্রাপ্তির পর রিটার্ন খাম এবং এনআইডি এর কপি প্রদানকারীরা নিজের বর্তমান ঠিকানায় ডাকযোগে নতুন পাসপোর্ট পেয়ে যাবেন।

যাদের বাংলাদেশি এনআইডি নেই তাদেরকে যে কোনো কর্মদিবসে বিকাল ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে দূতাবাসে যেয়ে পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে হবে। ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট বিভাগের ওয়েবসাইট থেকেই পাসপোর্ট ইস্যু হওয়ার আপডেট পাওয়া যায়।

শেষাংশ

প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেশের বাইরে থেকে পাসপোর্ট নবায়ন করার উপায়টি আগের মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট নবায়ন থেকেও সহজ। কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্রটি অনলাইন নিবন্ধিত না থাকলে অথবা পাসপোর্টের তথ্যে সঙ্গে মিল না থাকলে অনেক বিড়ম্বনায় পড়তে হবে নবায়নের জন্য আবেদনকারীদের।

বিষয়টি খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে প্রবসীদের, কেননা প্রবাসে পাসপোর্টের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার ছয় মাস আগেই পাসপোর্টটি নবায়ন করা জরুরি। তাই ভবিষ্যতের কথা ভেবে অভিবাসনের সময়ে পাসপোর্টের সঙ্গে সম্পর্কিত যাবতীয় নথিপত্র দেশ থেকেই ঠিক করে যাওয়া উত্তম।

ইউএনবি

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com