আমাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আমরা সফটওয়্যার এবং প্রযুক্তির বিভিন্ন দিকে কাজ করতে চাচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য হল বিশ্বের মানুষের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলা। এটি অর্জনের জন্য আমরা নতুন ট্রেন্ড এবং বাজারের চাহিদা পর্যবেক্ষণ করে আমাদের পণ্যের ফিচার উদ্ভাবন চালিয়ে যাব
‘ওলিও’ দেশের সবচেয়ে আলোচিত আইটি প্রতিষ্ঠান। ২১ মার্চ প্রতিষ্ঠানটি তাদের দৃষ্টিনন্দন ও আলোচিত এ আইটি প্রতিষ্ঠানের সদরদপ্তর উদ্বোধন করে। প্রতিষ্ঠানটি কিছুদিন আগেও জুমশেপার নামে পরিচিত ছিল। শিক্ষায় টেক্সটাইল প্রকৌশলী কিন্তু কাজে তথ্যপ্রযুক্তিবিদ কাউসার আহমেদ এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা। ২০১৬ সালে তরুণ উদ্যোক্তাদের সংগঠন ‘চাকরি খুঁজব না, চাকরি দেব’ সম্মাননায় ভূষিত স্বপ্নবাজ এই তরুণ উদ্যোক্তার দেশের অনলাইন মাধ্যমে ঝড় তোলা দৃষ্টিনন্দন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার গল্প শুনি চলুন–
শুরুর কথা
কাউসার আহমেদের বাবা মোহাম্মদ আলী আকবর এবং মা জাহেদা খাতুন। পরিবারের তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে কাউসার দ্বিতীয়। বাংলাদেশ টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটিতে পড়াকালীন কাউসার টিউশনির টাকা জমিয়ে ২০০৬ সালে এলিফ্যান্ট রোড থেকে সাড়ে সাত হাজার টাকায় পুরোনো কম্পিউটার কিনে প্রোগ্রামিং শুরু করেন। থাকতেন কলেজের হলে। তবে সেখানে ছিল না ইন্টারনেট সুবিধা। ফলে কাউসার লাইব্রেরি আর সাইবার ক্যাফের ইন্টারনেট দিয়েই এগিয়ে যেতে থাকেন। আস্তে আস্তে বাড়ে প্রযুক্তি দক্ষতা। শুরুতে ডেস্কটপ প্রোগ্রামিং ও সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের কাজ করেন কাউসার। এরপর ওয়েবসাইটে মনোযোগী হন। ভাবলেন, সবাই তো ওয়েবসাইট বানায়, আমি বরং ওয়েবসাইট না বানিয়ে এর কলকবজা বানানোয় মনোযোগী হই। তাই করলেন। এরপর গড়ে তোলেন জুমশেপার। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি কাউসারের। কেবলই এগিয়ে চলছেন নিজের স্বপ্নের পথে।
যে কাজ করে ওলিও
ওলিও একটি শূন্য থেকে শুরু করা প্রতিষ্ঠান যা জুমশেপার, থিমিয়াম এবং আইকোফন্টের মূল সংস্থা হিসেবে কাজ করে। সফটওয়্যার সেরা মানের বিবেচনায় দুনিয়াজুড়ে ব্যক্তিগত এবং ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। কয়েক বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি জুমশেপার এবং থিমিয়ামের মাধ্যমে ব্যতিক্রমী সফটওয়্যার তৈরি করছে। তাদের তৈরি সফটওয়্যার ১৫ মিলিয়নবার ডাউনলোড হয়েছে। সফটওয়্যার তৈরিতে প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকের নিরাপত্তার কথাই মাথায় রাখে। এ ক্ষেত্রে তারা গ্রাহকের চাহিদা মেটাতে শক্তিশালী এবং মাপযোগ্য সফটওয়্যার সমাধান তৈরিতে আধুনিক প্রযুক্তির স্ট্যাক ব্যবহার করে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটি ব্যবহারকারীর আচরণ থেকে শিখতে এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা প্রদানের জন্য বুদ্ধিমান সফটওয়্যার তৈরিতে এআই ব্যবহার করছে।
৬০ সদস্যের টিম ওলিও
প্রতিষ্ঠানটি এরই মধ্যে ৬০ জনের শক্তিশালী একটি দল তৈরি করে শুরু করেছে তাদের কর্মযজ্ঞ। ওলিও এই সদস্যদের নিয়ে গর্বই করে। কারণ তারা মনে করে, দলের সদস্যদের আছে সৃজনশীলতা, প্রতিভা এবং পেশাদারি মনোভাব। ওলিও লোকবল নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাবী, বিনয়ী, উৎসাহী এবং যোগ্য সদস্যদের নিয়োগেই অগ্রাধিকার দিয়েছে। এ ছাড়া দক্ষ এবং সৃজনশীল দল তৈরিতে প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের কথা ভাবার পাশাপাশি কর্মীদের ভালোমন্দের কথাও মাথায় রেখেছে। তাই তো দলের সদস্যদের জীবনমান সহজ ও আনন্দদায়ক করতে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। অফিসে যাতায়াতে পরিবহন সুবিধার পাশাপাশি অফিসে বিনামূল্যে দুপুরের খাবার, পর্যাপ্ত স্ন্যাকস, কফি এবং কোমল পানীয়র ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। এসব খাবারের গুণগত মানে যথাযথ নজর দেওয়া হয় বলেও জানায় প্রতিষ্ঠানটি। দলের সদস্যদের স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনায় নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছে জিম, ইন্ডোর গেম ও বাস্কেটবল কোর্ট। এই সুযোগ-সুবিধা সদস্যদের সক্রিয় এবং ফুরফুরে মেজাজে কাজে উৎসাহ দেবে বলে মনে করে ওলিও। এ ছাড়া পুরুষ এ নারীর জন্য আলাদা প্রার্থনাগার, ডে-কেয়ার সুবিধাসহ নানা খুঁটিনাটি বিষয়েও মন দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
কী আছে প্রতিষ্ঠানটিতে?
ওলিওর অফিস যে ভবনে গড়ে তোলা হয়েছে, সেই ভবনে ঢোকার মুখে রাখা হয়েছে বেশ কয়েকটি ছাতা। এসব ছাতার নিচে আছে বসার জায়গা। আছে বাস্কেটবল খেলার কোর্ট ও খেলা উপভোগের জন্য গ্যালারিও। ভবনের মূল ফটকের ওপরে জ্বলজ্বল করছে ওলিওর লোগো। ভবনের নিরাপত্তাবেষ্টনী পার হয়ে ভেতরে ঢুকতেই রিসিপশন। রিসিপশনের মুখোমুখি প্যাঁচানো কাঠের সিঁড়ি চলে গেছে দোতলায়। এর সামনেই ছোট্ট একটি মঞ্চ। তাতেও অবসর কাটানোর নানা আয়েশি আয়োজন। এসব পেরিয়ে একটু এগোতেই চোখে পড়ে খেলার ঘর, খাবার ঘর ও জিমনেশিয়াম। খেলার ঘরে টেবিল টেনিস, ফুটবলসহ নানা খেলার আয়োজন। আছে কফি খাওয়ার জায়গা এবং খাবার ঘর। আর ওপরের দুটি ফ্লোরে মূলত প্রতিষ্ঠানটির ওয়ার্কস্টেশন। প্রতি ফ্লোরে ৫০টি করে ওয়ার্কস্টেশন। ওপেন অফিস কনসেপ্টে গড়ে তোলা এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি ফ্লোরে আছে ফোনবুথ, সভাকক্ষ এবং কনফারেন্স রুম। আছে ছোট ছোট কাজের ঘর, এসব ঘরে একসঙ্গে কয়েকজন কাজ করতে পারেন। বিভিন্ন রকম গাছগাছালি দিয়ে একটি সুন্দর জায়গা তৈরি করা হয়েছে দোতলায়; যেখানে কর্মীরা ক্লান্তি দূর করতে পারেন। এ ছাড়া আছে কফি কর্নার, লার্নিং রুম, ব্রেইনস্টর্মিং কক্ষ। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কক্ষটি রাখা হয়েছে তৃতীয় তলায়। এই তলাতেই আছে ছাদবারান্দা।
ওলিওতে যোগ দিতে চাইলে
বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে কোনো ধরনের খালি পদ না থাকলেও আগামীতে প্রতিষ্ঠানটিতে যোগ দিতেই পারেন। যে কোনো সময় আসতে পারে প্রতিষ্ঠানটির লোকবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি। আর এ সম্পর্কিত তথ্য জানতে চাইলে ওলিওর ফেসবুক এবং লিঙ্কডইনে চোখ রাখতে পারেন নিয়মিত। প্রতিষ্ঠানটি মূলত সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, ডিজাইনার, ডিজিটাল মার্কেটার, বিজনেস ডেভেলপার, কনটেন্ট রাইটার এবং টেকনিক্যাল সাপোর্ট ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়োগ দিয়ে থাকে। তবে প্রতিষ্ঠানটি লোকবল নিয়োগের ক্ষেত্রে একাডেমিক রেজাল্টের চেয়ে দক্ষতাকেই সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। তাই প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি ছাড়াও যাঁরা দক্ষ, তাঁরাও স্বপ্ন দেখতে পারেন এই প্রতিষ্ঠানে ক্যারিয়ার গড়ার!
আগামীর স্বপ্ন
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের একদল তরুণ-তরুণী ওলিওতে জড়ো হয়েছেন কাউসার আহমেদের স্বপ্ন পূরণের সঙ্গী হতে। নিজের ও প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে আগামীর যে স্বপ্ন, সেই স্বপ্ন সম্পর্কে জানতে চাইলে কাউসার আহমেদ বলেন, ‘আমাদের ভবিষ্যতের পরিকল্পনার অংশ হিসাবে, আমরা সফটওয়্যার এবং প্রযুক্তির বিভিন্ন দিকে কাজ করতে চাচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য হল সারা বিশ্বের মানুষের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলা। এটি অর্জনের জন্য, আমরা নতুন ট্রেন্ড এবং বাজারের চাহিদাগুলি পর্যবেক্ষণ করে আমাদের পণ্যের ফিচার উদ্ভাবন চালিয়ে যাব। আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্নিং এবং অন্যান্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তিগুলো ব্যবহার করে নতুন নতুন সফটওয়্যার বানানোর চেষ্টা করব। আমরা আশা করবো এই প্রযুক্তি সফটওয়্যারগুলো সারা বিশ্বের ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানগুলি ব্যবহার করবে। ওলিওর উদ্দেশ্য থাকবে প্রযুক্তির উদ্ভাবনে এগিয়ে থাকা।’
আমরাও বিশ্বাস করি, তাঁর মতো তরুণ স্বপ্নবাজদের স্বপ্নের পথ ধরে এগিয়ে যাবে আগামীর বাংলাদেশ!