শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:১১ অপরাহ্ন
Uncategorized

দৃশ্যমান হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু

  • আপডেট সময় শনিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২১

পদ্মা সেতুর পর দেশের আরেক বৃহৎ প্রকল্প বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ কাজ এখন এগিয়ে চলেছে। করোনাকালেও থেমে নেই এই এই রেল সেতুর নির্মাণ কাজ। টুং টাং শব্দে প্রমত্তা যমুনার বুকে স্বপ্নের সেতুর একটির পর একটি পিলারের পাইলিং কাজ এগিয়ে চলছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি পিলারের পাইলিং কাজ শেষ হয়েছে। এতে প্রতিনিয়ত দৃশ্যমান হচ্ছে সেতুটি। দিনরাত সমান তালে চলছে এই সেতু নির্মাণের মহাযজ্ঞ। দেশের কোটি কোটি মানুষের স্বপ্ন এখন বাস্তবে রূপ লাভ করছে। এই রেল সেতুটি নির্মাণ হলে একদিকে যেমন উত্তরের যোগাযোগ খাতে নব দিগন্তের সূচনা হবে।

অন্যদিকে খুলবে অপার অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার।
দেশের মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু। যেটির বাস্তবায়ন এখন দৃশ্যমান। বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর ৩ শ’ মিটার উজানে সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইলে সেতুর দুই প্রান্তেই দিনরাত চলছে নির্মাণ কাজ। ৪.৮০ কি.মি. দীর্ঘ ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাক সহ এ রেল সেতুর মোট ৫০টি পিলারের মধ্যে ইতিমধ্যে ৪২নং থেকে ৪৯ নং (৮টি) পিলারের পাইলিং কাজ শেষ হয়েছে। চলছে আরো বেশ কয়েকটি পিলারের পাইলিং কাজ। জাপানী অর্থায়ন ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ সেতু নির্মাণে কাজ করছে।

এ রেল সেতু বাস্তাবায়িত হলে বিদেশ থেকে দেশে আসা মালবাহী ট্রেন সরাসরি চলাচল করতে পারবে। এতে আমদানি রপ্তানি খরচ কমে যাওয়া সহ বঙ্গবন্ধু সেতু ও মহাসড়কের ওপর চাপ কমবে। ঝুঁকিও হ্রাস পাবে বঙ্গবন্ধু সেতুর। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর দিয়ে সমান্তরালভাবে গাড়ি ও রেল চলছে, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এজন্য খুবই ধীরগতিতে চলে রেল কোচ। বর্তমানে ওই সেতুতে অনুমোদিত গতিবেগ ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার। কমে আসবে ভ্রমণকালও। জ্বালানি খরচও কমবে রেল বিভাগের। একই সঙ্গে উত্তরবঙ্গ থেকে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা সহজ হবে, কমবে পণ্য পরিবহন খরচ যা এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও সামাজিক জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। এটা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে মনে করে সরকার। রেল বিভাগের তথ্য মতে ডুয়েল গেজ ডাবল-ট্র্যাকের এ সেতুটি হবে দেশের সবচেয়ে বড় রেল সেতু। এটি রাজধানীর সঙ্গে দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ ও উন্নত করবে। এ ছাড়া ট্রেন শিডিউল বিপর্যয় কমাতেও এ সেতু সহায়তা করবে বলে জানিয়েছে রেল বিভাগ।

বঙ্গবন্ধু সেতু ও রেল সেতুর পশ্চিমেই গড়ে উঠছে সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোন ও বিসিক শিল্প পার্ক। এখানে উত্তরজনপদের ৭ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। ইতিমধ্যে এসব অঞ্চলে শিল্প কারখানা স্থাপনে আগ্রহ দেখিয়েছে দেশি বিদেশি শিল্প উদ্যাক্তোরা। বঙ্গবন্ধু রেল সেতু নির্মাণ হলে এই শিল্পাঞ্চল থেকে রেলপথ, সড়কপথ, স্থলপথ ব্যবহার করে বিশ্বের যে কোন দেশে পণ্য পরিবহন সহজ হবে। একই সাথে উত্তর জনপদের উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী পরিবহনও সহজ হবে মনে মনে করছেন ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা। এতে এ জনপদের মানুষের ভাগ্য পরিবতনের অপার সম্ভাবনা দেখছেন তারা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো: মাসুদুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ৩৮ টি ট্রেন চলাচল করে। নতুন রেল সেতু নির্মাণ হলে ডাবল লাইনে দ্রুত গতিতে মালবাহী সহ ৬৮টি ট্রেন চলাচল করার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সাথে ট্রেন চলাচলের আন্তঃসংযোগ সৃষ্টি হবে। ইতিমধ্যে এ রেল সেতুর ৩৩ শতাংশ কাজ বাস্তবায়িত হয়েছে। আমরা দ্রুত গতিতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। ২০২০ সালে ২৯শে নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ সেতুটির নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। ২০২৪ সালের মধ্যে এ সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।

সিরাজগঞ্জ রেল বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক নব কুমার কর্মকার মানবজমিনকে বলেন, আমাদের এই জেলাটি এক সময় রেলের শহর হিসেবে খ্যাত ছিলো। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সেতু হওয়ার পর শহরের বাহির দিয়ে রেল যোগাযোগ শুরু হয়। এতে শহরের সাথে রেলের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের অনেক আন্দোলনের ফলে শহর থেকে একটি ট্রেন চালু হয় রাজধানীর সাথে। এই রেল সেতুটি চালু হলে সিরাজগঞ্জের সাথে বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর রেল সংযোগ শুরু হবে। নতুন দিগন্ত শুরু হবে উত্তরবঙ্গে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুটি আমাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসছে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com