বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৪২ পূর্বাহ্ন

দূতাবাসের নিরাপত্তার বিষয়ে ভিয়েনা কনভেনশনে কী আছে

  • আপডেট সময় বুধবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২৪

ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন কার্যালয়ে হামলার পর এটিকে ভিয়েনা কনভেনশনের লঙ্ঘন বলে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এর বাইরেও বিএনপিসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন এই ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে ভিয়েনা কনভেনশনের কথা উল্লেখ করেছে।

মঙ্গলবার ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মাকে ডেকে নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

‘পরিকল্পিতভাবে’ বাংলাদেশ হাইকমিশনে হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন কর্মকর্তারা। হামলার সময় ভারতীয় পুলিশের সদস্যরা সেটি না থামিয়ে নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে বলেও অভিযোগ করেছেন তারা।

হামলার ঘটনার পর নিরাপত্তাহীনতার কারণ দেখিয়ে সকল প্রকার ভিসা ও কনস্যুলার সেবা কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আগরতলার বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন।

যদিও হামলায় দুঃখপ্রকাশ করে ভারত বলছে, বাংলাদেশের সঙ্গে তারা একটি স্থিতিশীল সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়।

ঘটনা তদন্তে দেশটি ইতোমধ্যে একটি কমিটি গঠন করেছে। জড়িত সন্দেহে আটকও করা হয়েছে বেশ কয়েকজনকে।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগরতলায় বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা প্রদানের দায়িত্ব ছিল ভারত সরকারের। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যর্থ হওয়ায় দেশটি ভিয়েনা কনভেনশন ‘স্পষ্ট লঙ্ঘন’ করেছে।

কিন্তু ভিয়েনা কনভেনশন আসলে কী? ওই কনভেনশনে একটি দেশের দূতাবাসের নিরাপত্তার বিষয়ে কী বলা হয়েছে?

আর ভারত যদি সেটি লঙ্ঘন করে থাকে, তাহলে বাংলাদেশ তার বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারবে?

সোমবার আগরতলার বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন কার্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটে
ছবির ক্যাপশান,আগরতলার বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন কার্যালয়ে হামলার ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠিত হয়েছে

ভিয়েনা কনভেনশন কী?

কূটনৈতিক সম্পর্কের অংশ হিসেবে বহুকাল আগে থেকেই এক দেশের কূটনীতিকরা আরেক দেশে অবস্থান করে আসছেন।

তবে স্বাগতিক দেশে তারা কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবেন, তাদের আচরণ কেমন হবে, কূটনীতিকদের প্রতি গ্রহীতা দেশের দায়িত্ব কী হবে ইত্যাদি বিষয়ে গত শতাব্দীর ষাটের দশকের আগ পর্যন্ত আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অভিন্ন কোনো নিয়ম-নীতি ছিলো না।

ফলে সেই প্রয়োজনীয়তা থেকেই ১৯৬১ সালের এপ্রিলে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় একটি সম্মেলনের আয়োজন করে জাতিসংঘ। সদস্য দেশের প্রতিনিধিরা ওই সম্মেলনে অংশ নিয়ে কূটনৈতিক সম্পর্ক ও আচরণের বিষয়ে একটি চুক্তি সাক্ষর করেন, যা ‘ভিয়েনা কনভেনশন অন ডিপ্লোম্যাটিক রিলেশনস’ নামে পরিচিত।

মূলত আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কিছু নিয়ম-নীতি তৈরি এবং সেগুলো অনুসরণের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলাই ওই চুক্তির অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ছিলো বলে জানাচ্ছেন বিশ্লেষকরা।

চুক্তিটিতে মোট ৫৩টি ধারা রয়েছে, সাক্ষরকারী রাষ্ট্রসমূহ যেগুলো সব সময় মেনে চলার চেষ্টা করে। কোনো দেশ ওইসব ধারার পরিপন্থী কাজ করলে সেটাকে ‘চুক্তির বরখেলাপ’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

গত শতাব্দীর ষাটের দশক পর্যন্ত যেসব দেশ স্বাধীন ছিল, তারাই প্রাথমিকভাবে জাতিসংঘের ওই চুক্তিতে সই করেছিল। তবে পরবর্তীতে অন্য যেসব দেশগুলো স্বাধীনতা অর্জন করে, তারাও ধাপে ধাপে নিজেদেরকে চুক্তিটিতে অন্তর্ভূক্ত করে।

১৯৬৫ সালে ভারত ‘ভিয়েনা কনভেনশন অন ডিপ্লোম্যাটিক রিলেশনস’ চুক্তিতে সাক্ষর করে। আর স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশ ওই চুক্তিতে সই করে ১৯৭৮ সালে।

অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় হফবুর্গ প্যালেস যেখানে ১৯৬১ সালে ভিয়েনা চুক্তি সই হয়েছিল

ছবির উৎস,Getty Images

ছবির ক্যাপশান,অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় হফবুর্গ প্যালেস যেখানে ১৯৬১ সালে ভিয়েনা চুক্তি সই হয়েছিল

নিরাপত্তার বিষয়ে কী আছে?

একটা দেশে অন্য দেশের দূতাবাস কেমন হবে এবং সেটির নিরাপত্তায় স্বাগতিক বা গ্রহীতা দেশ কী ধরনের ব্যবস্থা নিবে, সে বিষয়ে ভিয়েনা চুক্তিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

চুক্তি অনুযায়ী, প্রেরক দেশের মিশন বা দূতাবাসের জন্য জায়গা বরাদ্দের পাশাপাশি সেখানে কর্মরত কূটনীতিকদেরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয় স্বাগতিক দেশকে।

এক্ষেত্রে নিরাপত্তা এতটাই সুরক্ষিত থাকে যে, ভূমি বরাদ্দ দেওয়ার পর বিদেশি মিশনপ্রধানের অনুমতি ছাড়া স্বাগতিক দেশের সরকার বা তাদের কোনো প্রতিনিধিও সেখানে প্রবেশ করতে পারবেন না।

‘ভিয়েনা কনভেনশন অন ডিপলোম্যাটিক রিলেশনস’ চুক্তির ২২ নম্বর ধারায় বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।

ওই ধারায় আরো বলা হয়েছে যে, কূটনীতিক মিশনের নিরাপত্তা বিধান করতে হবে গ্রহীতা দেশকেই। সেখানে কোনো প্রকার হামলা, ক্ষতি, শান্তি নষ্ট বা মর্যাদাহানি যেন না হয়, সে বিষয়ে স্বাগতিক দেশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

এছাড়া কূটনীতিক মিশনের প্রাঙ্গণ, আসবাবপত্র বা যানবাহনে গ্রাহক দেশ ব্যবহার, তল্লাশি, বাজেয়াপ্ত বা সংযুক্তি- কোনোকিছুই করতে পারবে না।

এমনকি, কূটনৈতিক সম্পর্কোচ্ছেদ বা সংঘাতময় পরিস্থিতির ক্ষেত্রেও মিশন প্রাঙ্গণ, সেটার সম্পত্তি ও নথিপত্র রক্ষার দায়িত্ব গ্রহীতা দেশকেই নিতে হবে।

তবে বিশেষ অবস্থায় প্রয়োজন মনে করলে গ্রহীতা দেশের সম্মতিক্রমে তৃতীয় কোনো দেশকে মিশনের রক্ষক হিসেবে দায়িত্ব দিতে পারবে প্রেরক রাষ্ট্র।

সোমবার বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা, ভাঙচুর ও পতাকা নামিয়ে ছিঁড়ে ফেলার ঘটনা ঘটে
ছবির ক্যাপশান,সোমবার বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা, ভাঙচুর ও পতাকা নামিয়ে ছিঁড়ে ফেলার ঘটনা ঘটে

আরও যা বলা হয়েছে

গ্রহীতা দেশে বিদেশি মিশনের আকারের কেমন হবে- সে বিষয়ে কনভেনশনের ১১ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে যে, আলাদা কোনো চুক্তি না থাকলে কূটনীতিক মিশনের কাজ বিবেচনায় সেটির আকার যৌক্তিক হতে হবে।

এর পরের ধারাতেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, কূটনীতিক মিশন প্রেরণকারী দেশ মিশনের জন্য বরাদ্দকৃত সীমানার বাইরে অন্য কোনো জায়গায় কোনো প্রকার কার্যালয় স্থাপন করতে পারবে না।

মিশনের প্রধানকে ওই মিশন এলাকা সম্পর্কিত বিষয়ে সব ধরণের জাতীয়, আঞ্চলিক বা মিউনিসিপালের বকেয়া ও করের বাইরে রাখতে হবে অর্থাৎ তাদের এ সম্পর্কিত কোন কর দিতে হয় না।

কূটনীতি মিশনের দাপ্তরিক কাজে ব্যবহার এবং কূটনীতিক ও তার পরিবারের সদস্যদের গৃহকর্মে ব্যবহৃত যেকোন পণ্য আনা হলে তা সব ধরণের শুল্ক ও করের বাইরে থাকবে।

মারাত্মক কোন অভিযোগ না থাকলে কূটনীতিক এজেন্টদের ব্যাগও তল্লাশি করা যাবে না।

ভিয়েনা কনভেনশনের ২৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী, বিদেশি কূটনীতিক মিশনের সকল সদস্য স্বাগতিক দেশে স্বাধীন ও অবাধে চলাচল করতে পারবেন। তবে জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত বিশেষ সংরক্ষিত এলাকায় তারা বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করতে পারবেন না।

নিরাপত্তাহীনতার কারণে ভিসা ও কনস্যুলার সেবা বন্ধ রেখেছে আগরতলার বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন

ছবির উৎস,Netai Dey

ছবির ক্যাপশান,নিরাপত্তাহীনতার কারণে ভিসা ও কনস্যুলার সেবা বন্ধ রেখেছে আগরতলার বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন

চুক্তির ২৭ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে যে, বিদেশি মিশন যেন সব ধরনের দাপ্তরিক কাজ অবাধে সম্পন্ন করতে পারে, সেজন্য প্রয়োজনীয় যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

এক্ষেত্রে মিশন প্রেরক রাষ্ট্রের সরকার, অন্য মিশন বা কনস্যুলেটে কূটনৈতিক চিঠি, সংকেত বার্তা ইত্যাদি মাধ্যম ব্যবহার করতে পারবে।

তবে ওয়্যারল্যাস ট্রান্সমিটার ব্যবহারের ক্ষেত্রে তাদেরকে গ্রহীতা দেশের অনুমতি নিতে হবে।

ভিয়েনা কনভেনশনের ২৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী, বিদেশি কূটনীতিকদের আটক বা গ্রেফতার করা যাবে না। অর্থাৎ তারা স্বাগতিক দেশের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার বাইরে থাকবে।

এমনকি তারা কোনো ঘটনায় সাক্ষ্যও দিতে বাধ্য থাকবেন না।

এছাড় চুক্তিটির ৩০ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে যে, মিশন প্রাঙ্গণের মতোই কূটনীতিকদের বাসভবন, নথিপত্রসহ অন্যান্য যাবতীয় সম্পত্তির সুরক্ষায় গ্রহীতা দেশকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

হামলার ঘটনার পর হাইকমিশনে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে

ছবির উৎস,Netai Dey

ছবির ক্যাপশান,হামলার ঘটনার পর হাইকমিশনে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে

‘সুস্পষ্ট লঙ্ঘন’

ভারতের আগরতলায় অবস্থিত বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে সোমবার হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও পতাকা ছিঁড়ে ফেলার যে ঘটনা ঘটেছে, সেটি ভিয়েনা কনভেনশনের পরিপন্থী বলে জানাচ্ছেন বিশ্লেষকরা।

“আগরতলায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে যে ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি যে ভিয়েনা কনভেনশনের পরিপন্থী এবং সুস্পষ্ট লঙ্ঘন যে হয়েছে, সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবীর।

ঘটনার পর সোমবার রাতেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রাপ্ত তথ্য চূড়ান্তভাবে নির্দেশ করে যে, বিক্ষোভকারীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের প্রধান ফটক ভেঙে প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে।

হামলাকারীরা বাংলাদেশের পতাকার খুঁটি ভাঙচুর করে, জাতীয় পতাকা অবমাননা এবং সহকারী হাইকমিশনের অভ্যন্তরের সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত করে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের উপস্থিতিতেই ঘটনাগুলো ঘটলেও তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় ভূমিকা রাখেননি বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

“অথচ নিয়ম অনুযায়ী, হাইকমিশনের সীমানায় ঢোকার আগেই বিক্ষোভকারীদের আটকে দেওয়ার কথা। যেখানে অনুমতি ছাড়া সরকারের প্রতিনিধিই ঢুকতে পারে না, সেখানে এতগুলো মানুষকে কীভাবে ঢুকে পড়লো?,” বিবিসি বাংলাকে বলেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ।

এ ধরনের ঘটনা যেন ভবিষ্যতে আর না ঘটে, সেজন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ বলেও মনে করেন বিশ্লেষকরা।

বিবৃতিতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

ছবির উৎস,MOFA/BANGLADESH

ছবির ক্যাপশান,বিবৃতিতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

কী ব্যবস্থা নেওয়া যাবে?

আগরতলায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের ঘটনায় ভিয়েনা কনভেনশনের লঙ্ঘন হলেও ভারতের কাছে ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করা ছাড়া বাংলাদেশ সরকারের আর তেমন কিছু করার নেই বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা।

“এক্ষেত্রে খুবই কমন (সাধারণ) যে প্রতিক্রিয়াটি দেখা যায়, সেটি হলো রিসিভার (গ্রহীতা) দেশের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে আনা,” বলছিলেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ মি. আহমেদ।

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও সেটিই করা হয়েছে। ঘটনার পরদিন, অর্থাৎ মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মাকে ডেকে পাঠায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এর আগে, সোমবার রাতে প্রকাশিত বিবৃতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

“সোমবার আগরতলার হিন্দু সংগ্রাম সমিতির বিক্ষোভকারীদের দ্বারা বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের প্রাঙ্গণে হিংসাত্মক বিক্ষোভ ও আক্রমণের জন্য বাংলাদেশ সরকার গভীরভাবে ক্ষুব্ধ,” বিবৃতিতে বলা হয়।

একইসঙ্গে, তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের বিচার এবং ভারতে কর্মরত বাংলাদেশের কূটনীতিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান জানানো হয়।

“এর বাইরে, কূটনীতিকদের দেশে ফিরিয়ে আনা বা দূতাবাস বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া খুব একটা কিছু করারও নাই। কিন্তু সবচেয়ে ভালো আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা,” বিবিসি বাংলাকে বলেন সাবেক রাষ্ট্রদূত মি. কবীর।

তবে হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় বাংলাদেশ চাইলে আইনগত ব্যবস্থাও নিতে পারে।

“কিন্তু সেটি অনেক সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তাছাড়া এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া মানে দু’দেশের সম্পর্ককে রীতিমত ঝুঁকিতে ফেলে দেওয়া,” বিবিসি বাংলাকে বলেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ মি. আহমেদ।

হামলার ঘটনার পর আগরতলায় পুলিশের সতর্ক অবস্থান

ছবির উৎস,Netai Dey

ছবির ক্যাপশান,হামলার ঘটনার পর আগরতলায় পুলিশের সতর্ক অবস্থান

ভারত কী বলছে ?

সোমবার আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের এক বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির কর্মকর্তারা।

এছাড়া হামলায় জড়িত সন্দেহে সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সেইসঙ্গে, দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে পুলিশের তিনজন সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত এবং এক কর্মকর্তাকে ‘ক্লোজ’ করা হয়েছে বলে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

অন্যদিকে, ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে একটি স্থিতিশীল সম্পর্ক চায় বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা।

“আমরা সত্যিকার অর্থে একটি গঠনমূলক ও স্থিতিশীল সম্পর্ক চাই। এখানে অনেক বিষয় রয়েছে। অনেক বিষয়ে একে অপরের ওপর নির্ভরশীলতা রয়েছে। পরস্পরের ওপর এই নির্ভরশীলতাকে আমরা উভয়ের স্বার্থে কাজে লাগাতে চাই,” মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন ভারতীয় হাইকমিশনার মি. ভার্মা।

ভারতীয় কিছু রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠী বাংলাদেশে পণ্য রফতানি বন্ধ করার হুঁমকী দিলেও ভারতীয় হাইকমিশনার সেই সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন।

“আমরা আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখব, যাতে আমাদের দুই দেশই উপকৃত হয়,” বলেন মি. ভার্মা।

তিনি আরও বলেন, “আমাদের সম্পর্ক বহুমুখী এবং আমরা অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করি। একে আমরা শুধু একটিমাত্র বিষয়ে সীমাবদ্ধ করতে পারি না।”

এদিকে, হামলার ঘটনার পর নিরাপত্তাহীনতাজনিত কারণ দেখিয়ে আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের সকল প্রকার ভিসা ও কনস্যুলার সেবা কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

যদিও ভারত সরকারের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে, দেশটিতে অবস্থিত বাংলাদেশের হাইকমিশন ও সহকারী হাইকমিশনগুলোর নিরাপত্তা বাড়ানোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com