রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৮ পূর্বাহ্ন

দুবাই ভ্রমণ

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১২ জুলাই, ২০২৪

দুবাই মধ্যপ্রাচ্যের একটি মুসলিম দেশ। একসময় মরুদ্দ্যান ক্ষেত দুবাই আজ কঠোর পরিশ্রম, কঠোর অধ্যবসায় যথাযথ পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে আজ তারা উন্নত একটি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। মরুর বুকে আকর্ষণীয় স্থাপনা গড়ে তুলেছে ৷ ৫০ বছরের উন্নয়ন চোখে পড়ার মতো। ৫০ বছরে এমন উন্নতির আসলে ভাবা যায় না। সুন্দর আকর্ষণীয় স্থাপনা গুলো তৈরীর মাধ্যমে দুবাই সরকার সারা পৃথিবীব্যাপী সাড়া ফেলে দিয়েছে। প্রচুর পর্যটক দুবাইয়ের ঘুরতে যান।

এই লেখার মাধ্যমে আমি তুলে ধরতে চাই আমার দুবাই ভ্রমণের অভিজ্ঞতা।

২৮ আগস্ট ২০২২ ইং আমি ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হতে ইউএস-বাংলা BG341 বিমানযোগে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ছয়টায় দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেই। আনুমানিক দুবাইয়ের সময় প্রায় রাত্রে ১১ টার সময় আমি পৌঁছে যায় দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে।

দুবাই বিমানবন্দর আসলে অনেক বড় এবং সুন্দর একটি বিমানবন্দর ৷ বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ততম বিমানবন্দর হচ্ছে দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।

ইমিগ্রেশন শেষ করে আমি চলে আসি ট্যাক্সি কাউন্টারে৷ ট্যাক্সিতে চড়ে চলে যাই আমি আমার গন্তব্য স্থল আমার হোটেল রেডিসন ব্লু ওয়াটার ফ্রন্ট।

ট্যাক্সিতে চড়ে যাবার সময় দেখছিলাম আলোকিত দুবাই শহর। উচু উচু বিল্ডিং ইমারত আলোকিত একটি শহর ৷

রাস্তায় যাওয়ার সময় বিভিন্ন ধরনের জিনিস চোখে পড়েছে ৷ তবে একটি জিনিস আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে দুবাইয়ের ট্রাফিক সিস্তেম। দুবাইয়ের ট্রাফিক সিস্তেম কিন্তু খুবই গোছানো ৷ সেখানে আইন মানে আইন আইন ৷আইন ভঙ্গ করলে রয়েছে জরিমানা। দুবাইতে ট্রাফিক জ্যাম সর্বোচ্চ পাঁচ মিনিটের ৷ তার চেয়ে বেশি আমি দেখিনি ৷ তাদের রেড সিগনাল মানে রেড সিগনাল। রাস্তা যতই ফাঁকা হোক কেউ রেড সিগন্যাল অমান্য করে কোথাও যাচ্ছে না। রাস্তায় খুব একটা ট্রাফিক পুলিশের ও দেখা নেই ৷ চারিদিকে ক্যামেরা লাগানো এবং তার মাধ্যমে সব কিছু মনিটর করা হচ্ছে। এত ব্যস্ত নগরীর মধ্য খুব একটা ট্রাফিক জাম পোহাতে হয়নি। যাইহোক এসব সুন্দর জিনিস দেখতে দেখতে চলে এলাম আমি আমার হোটেলে তখন রাত প্রায় দুইটা।

আমার দুবাই ভ্রমণের প্রথম দিন ছিল সিটি টোর অর্থাৎ নগর ঘুরে দেখা। দুবাই বেড়াতে গেলে বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে আপনারা এই সিটি টোরের ব্যবস্থা করতে পারেন৷ কোনোটা ৪ ঘন্টা / ৮ঘণ্টার ও হতে পারে ৷

নগর ঘুরে দেখার মাধ্যমে আপনি দুবাই নগরী সম্পর্কে কিছুটা হলেও জানতে পারবেন এবং বেশ কিছু জায়গায় আপনাদেরকে নিয়ে ঘুরে দেখাবে।

আমি প্রথম দিন দুবাই মিউজিয়াম, দুবাই ফ্রেম দুবাই, মসজিদ, জুমেরা বিচ , মেরিনা ক্রুজ, বুর্জ আল আরব আরো বেশ কিছু জায়গা ঘুরে বেরিয়েছে।

যার মধ্যে দুবাই মিউজিয়াম এর আকৃতি ছিল আকৃষ্ট করার মত। গোলাকার বৃত্তের মত একটি প্রেমের আকারে মিউজিয়ামটি তৈরি করা হয়েছে৷ যা দেখতে আসলেই ব্যতিক্রমী।

সিটি টোর শেষে রাতে আমরা চলে যাই দুবাই মল ঘুরতে। দুবাই মহল অনেক সুন্দর অনেক বড় এবং একটু এক্সটেন্সিভ। দুবাই মলের একটু সামনেই হচ্ছে বুর্জ খলিফা ৷ রাত্রেবেলা বুর্জ-খলিফা দেখতে অসাধারণ ৷ অনেক সুন্দর আলোর ঝলকানি। বুর্জ খলিফা সামনে রাতের বেলা প্রতি আধা ঘণ্টা পরপর ওয়াটার ডান্স দেখা যায়।

রাতের বেলা দুবাই শহরের লাইটিং এক অন্যরকম ৷ অসাধারণ সৌন্দর্যপূর্ণ। সেদিনের দুবাই মল সিটি এবং বুর্জ খলিফা দেখা শেষে ফিরে যায় হোটেলে।

দ্বিতীয় দিন আমি চলে যাই আবারো বুর্জ খলিফাতে৷ বুর্জ আল খলিফা হচ্ছে বিশ্বের সর্বোচ্চ উচ্চতার ইমারত। ১৪৮ তলার বৃহৎ উচ্চতার একটি ইমারত।

সেদিন বুর্জ আল খলিফা উচ্চতায় অর্থাৎ ১২৬ তলায় উঠে যাই ৷

১২৬ তালার উপর থেকে দুবাই শহর কে দেখতে পেয়ে আমার ভীষন ভালো লাগছিল৷ পুরো দুবাই শহরটাকে চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছিলাম।

বুর্জ আল খলিফা টপ ফ্লোর দেখার পরে আমরা চলে আসি দুবাই মিউজিয়ামে ফিস অ্যাকুরিয়াম । বুর্জ খলিফা উচ্চতায় ওঠা এবং ফিশ অ্যাকুরিয়াম দুইটার জন্য কিন্তু আলাদাভাবে টিকেট কাটতে হয় এবং দুইটা জায়গার দূরত্ব অনেকটা কাছাকাছি।

দুবাইয়ের ফিশ অ্যাকুরিয়াম দুবাই মল এ অবস্থিত এবং এটাএকটি বড় অ্যাকুরিয়াম। অ্যাকুরিয়ামে মধ্যে বিভিন্ন ধরনের, বিভিন্ন প্রজাতির বিভিন্ন ধরনের মাছ দেখতে পেয়েছি। তাছাড়া সেখানে পেঙ্গুইন দেখারও সুযোগ রয়েছে। একুরিয়াম থেকে বের হয়ে দুবাই মলের নিচ তলায় রয়েছে সৌন্দর্য্যপূর্ণ একটি ঝর্ণা যা আপনাকে মন্ত্রমুগ্ধ করতে বাধ্য ৷

দুবাই মল এবং বুজ খলিফা এসব দেখতে কিন্তু অনেক সময় প্রয়োজন ৷ যার কারণে আমাদের দ্বিতীয় দিন দুবাই মল এবং বুর্জ খলিফার আশেপাশেই কেটেছে ৷

তৃতীয় দিন
আমি চলে যাই গোল্ড এর বাজারের যার নাম গোল্ড সুক । দুবাইয়ের সোনা দিয়ে বানানো গহনা অত্যন্ত জনপ্রিয়। বাংলাদেশের অনেকে দুবাই বেড়াতে গেলে কিছু না কিছু হলো সোনা বাজার করেন।

বিভিন্ন ধরনের ডিজাইন বিভিন্ন আকৃতির বিভিন্ন ধরনের সোনা দিয়ে তৈরি গহনা রয়েছে। সোনা দিয়ে তৈরি গহনা গুলো দেখতে অনেক চকচক করছিল তা দেখে বেশ ভালো লাগছিল।

গোল্ড সুকের পর্ব শেষ করে আমরা চলে যাই দুবাই সিটি সেন্টারে সেখানে কিছু টুকটাক শপিং করি ৷ শপিং শেষ করে চলে আসি জুমেরা বিচে কিছুক্ষণ সেখানে থাকার পর ফিরে আসি হোটেলে।

চতুর্থ দিন।
দুবাই ট্যুর এর চতুর্থ দিন ছিল আমার জন্য স্মরণীয়। সেদিন আমি মাঠে গিয়ে বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কা এশিয়া কাপ ২০২২ খেলা দেখেছি৷ দূর্ভাগ্যজনিত কারণে বাংলাদেশ সেদিন জিততে পারেনি ৷ তবে মাঠে বসে খেলা দেখার আনন্দ ছিল অন্যরকম ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। মাঠে বসে খেলা দেখার মজাটাই আলাদা। প্রচুর বাঙালি দর্শক ছিল সেখানে খেলা দেখার জন্য।

পঞ্চম দিন
ঐ ছিল খুবই আনন্দপূর্ণ ৷ সেদিন আমি দেখতে যাই ডলফিন শো এবং পাখির শো দেখতে ৷ যেখানে ডলফিন নানান ভাবে নানান আকৃতিতে তারা নিত্য দেখাচ্ছিলো। পাখির শো কম ছিলনা কোন অংশে। অন্যরকম সুন্দর৷ সেখানে পাখিরা নানা ভঙ্গিমায় নানান ভাবে অনেক কিছু দেখাচ্ছিলো ৷ দর্শকরা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে দেখছিলেন।

ডলফিন এবং বার্ড শো ছিল ভিন্নধর্মী , ব্যতিক্রমী এবং অত্যন্ত আনন্দদায়ক।

ষষ্ঠ দিন
আমি চলে যাই ডেজার্ট সাফারি পার্ক অর্থাৎ মরুভূমিতে। মরুভূমি দেখাটা ছিল এক ভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা। যেহেতু কখনো মরুভূমি দেখা হয়না তাই প্রথমবার মরুভূমি দেখতে যাওয়ার আকর্ষণটা ছিল অন্যরকম ৷ চারিদিকে ধুধু বালুচর প্রচন্ড রোদের মধ্যে আমরা সেখানে অবস্থান করি। মরুভূমিতে সবচেয়ে আনন্দদায়ক জিনিস ছিল উটের পিঠে চড়া। বাংলাদেশের উটের পিঠে চড়ে কোথাও ভ্রমন করার সুযোগ নেই তাই মরুভূমিতে উটের পিঠে প্রথমবার চলে বেশ মজা পাচ্ছিলাম। প্রথমবার এরকম মরুভূমি দেখে বেশ ভালো লাগছিল তবে সেখানে প্রচন্ড গরম লাগছিল ৷

ডেজার্ট সাফারি পর্ব শেষ করে আবার চলে আসি শহরে। তবে একটা কথা বলে রাখা ভাল, ডেজার্ট সাফারি জন্য কিন্তু আলাদাভাবে টিকেট কাটতে হয় আমি অনলাইনে টিকেটবুকিং করেছিলাম।

দুবাইতে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরার জন্য একটা দিক খেয়াল রাখলে আপনি খুব সহজেই কম খরচে ঘোরাঘুরি করতে পারবেন ৷
তার মধ্যে প্রথমেই হচ্ছে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার আগে গুগলের সার্চ করে ওই দেশ সম্পর্কে জেনে নেওয়া৷ তারপর আপনি কোথায় কোথায় যেতে চান সেটা সিলেক্ট করে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইনে টিকেট বুকিং করলে আপনার খরচটাও অনেকটাই কমানো সম্ভব। আমি একটা জিনিস খেয়াল করেছি তারা খুব টাইম মেনটেন করে ৷ কোথাও যদি বুকিং করেন তারা টাইম এর বাহিরে যায় না৷

আমি এখন পর্যন্ত যতগুলো জায়গায় ঘুরেছি সব জায়গাতেই আমাদেরকে হোটেল থেকে পিকআপ করেছে এবং সেটা খুবই টাইমলি ।

দুবাইয়ের ওয়েদার অত্যন্ত গরম ৷ অনেক গরম সেখানে। তাই সবসময় নিজেদের সাথে পানি ,শরবত, ছাতা,কেপ রাখাটা অত্যন্ত জরুরী।

আর দুবাইয়ের খাবার-দাবার সম্পর্কে যদি আমি বলি, তাহলে একেক এরিয়াতে একেক রকম ৷

তবে আমাদের বাংলাদেশীদের মত আমরা যারা আছি নরমালে ভাত ডাল খেয়ে অভ্যস্ত তাদের জন্য সেখানে একটু কষ্ট হয়ে যায়। সেখানে আপনি বেশিরভাগ সময় বিরিয়ানি পাবেন৷ বাংলাদেশের মতো নরমাল ভাত এবং ডাল পাওয়া খুবই কষ্টকর। তাই খাবারের ক্ষেত্রে এই জিনিসটা একটু মাথায় রাখতে হবে। আপনি খুব সহজেই ইন্ডিয়ান অথবা পাকিস্তানের রেস্টুরেন্ট পেয়ে যাবেন কিন্তু সেখানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আপনি বিভিন্ন ধরনের বিরিয়ানি পাবেন।

দুবাইয়ের কোথায় যাতায়াতের জন্য ট্যাক্সি এবং মেট্রো রেল রয়েছে ৷লোকাল বাসে যাতায়াত খরচ তুলনায় কিছুটা কম ৷ ট্যাক্সি ভাড়া কিছুটা বেশি।

বুর্জ আল খলিফা ফিশ অ্যাকুরিয়াম ডলফিন শো এসকল যে ধরনের জিনিস আছে এগুলোর টিকেট যদি অনলাইনে এজেন্সির মাধ্যমে বুকিং করা সম্ভব হয় তাহলে খরচটা অনেকটা কমানো সম্ভব। তা না হলে ইনস্ট্যান্ট টিকিট কাটলে খরচ অনেকটাই বেড়ে যায়।

সপ্তম দিন
এবার যাওয়ার পালা দুবাইয়ের অনেক মন্ত্রমুগ্ধ স্মৃতি সাথে নিয়ে আবারো আমায় ফিরে যেতে হচ্ছে আমার প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ।

অনেক কিছু দেখেছি৷ অনেক এনজয় করেছি ৷ দুবাই আসলেই আমাকে মন্ত্রমুগ্ধ করেছে ৷অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে অনেক কিছু শিখেছি।

আমার এই লেখাটার মাধ্যমে অনেকেই দুবাই সম্পর্কে জানতে পারবেন। আর কেউ যদি দুবাই যেতে চান আশা করি এই লেখাটা অনেকের কাজে লাগবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com