ইউরোপে ভ্রমণ বা বসবাস আমাদের কাছে স্বপ্নের মতো। আমাদের জীবনের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য এবং নিরাপদ জীবনের জন্য প্রায়ই ইউরোপের দেশগুলোর দিকে ছুটতে থাকি। কেননা, সেই দেশ গুলোতে জীবিকার মান অনেক উন্নত। আর আপনি যদি সেই দেশ গুলোতে গিয়ে কাজ করতে পারেন। তাহলে আপনি উন্নত জীবন উপভোগ করার পাশাপাশি ভালো বেতনের সুবিধা নিতে পারবেন।
ইউরোপে ছুটার পেছনে আমাদের অনেক প্রতিবন্ধকতা থেকে থাকে। যেমন আমাদের অনেকের টাকার অভাব থাকে, অনেকের কাছে যথেষ্ট পরিমাণে অর্থ থাকা সত্ত্বে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ যাওয়ার উপায় সম্পর্কে না জানার কারণে ইউরোপে যেতে পারে না।
ইউরোপে যাওয়ার জন্য অন্যতম মাধ্যম দেশ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতকে। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারতসহ এশিয়ার দেশসমূহের লোকজন সংযুক্ত আরব আমিরাত অর্থাৎ দুবাইকে বেছে নেন। কেননা দুবাই থেকে ইউরোপ যাওয়ার প্রসেসিং সিস্টেম সহজতর হওয়ায় ভিসা পাওয়া সম্ভব হয়। আজ আপনাদের সাথে আলোচনা করবো যারা দুবাই থেকে ইউরোপে ট্যুরিস্ট ভিসায় যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন তাদের জন্য পরামর্শ।
আপনি যদি চিন্তা-ভাবনা করে থাকেন যে দুবাই থেকে ইউরোপে প্রবেশ করবেন তাহলে অবশ্যই আপনাকে প্রথমত দুবাইয়ে প্রবেশ করা লাগবে। সেখানে আপনি ভিজিট ভিসা অথবা সরাসরি এমপ্লয়মেন্ট ভিসা নিয়ে খুব সহজে যেতে পারবেন। এক্ষেত্রে কোনো রকমের সমস্যা হয় না। বর্তমানে দুবাই ভিজিট ভিসা পাওয়া অনেকটা সহজ একটি ব্যাপার। সে ক্ষেত্রে কিছু টাকা খরচ করলেই আপনি দুবাইয়ের ভিজিট ভিসা পেয়ে যাবেন। কোন রকমের ঝামেলা হবে না।
যদি ভিজিট ভিজিট ভিসায় দুবাইতে এসে থাকেন তাহলে আপনাকে অবশ্যই যেকোনো একটি রেসিডেন্সিয়াল ভিসার জন্য কাজে নিয়োজিত হতে হবে। এই ক্ষেত্রে আপনি আপনার ফ্রেন্ড অথবা পরিচিত কারো মাধ্যমে এই সুযোগটা করে নিতে পারবেন। যদি সরাসরি এমপ্লয়মেন্ট ভিসা নিয়ে আসেন তাহলে এই ভিসাতেই হবে রেসিডেন্সি ভিসা যা দুই বছর মেয়াদ। আপনার ভিসার প্রফেশন অবশ্যই ম্যানাজার ক্যাটাগরির হতে হবে। আপানি যে ভিসা নিবেন তাতে যেন আপনার মাসিক বেতন হিসাবে যেন ৫ হাজার দিরহাম এর বেশি বেতন উল্লেখ করা থাকে তা মনে রাখবেন। আর প্রতিমাসে যে আপনার বেতন ব্যাংকে ট্রান্সফার করা যায় সে বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। তবে কাজ পাওয়াটা দুবাইয়ে একটু কঠিন ব্যাপার কিন্তু চেষ্টা করলে সম্ভব। যখন আপনি দুবাইয়ে কাজে নিয়োজিত হয়ে যাবেন এবং আপনার দুই বছর মেয়াদী একটি ভিসা পেয়ে যাবেন তখন কিন্তু আপনি এক বছর থাকার পরেই ইউরোপে যাওয়ার জন্য আপনি প্রস্তুত হতে পারবেন। এর আগে দুবাইয়ের যেকোন একটি ব্যাংকে আপনাকে একাউন্ট খুলতে হবে।
ভিসা প্রস্তুত ও ব্যাংক একাউন্ট হওয়ার জন্য অবশ্যই আপনাকে ট্রাভেল হিস্ট্রি করা লাগবে। প্রথমে আপনাকে ছোট দেশগুলোতে ভ্রমণ করা লাগবে। দুবাই থেকে সহজে ছোট ছোট দেশগুলোর ভিসা পাওয়া সহজ। যেমন ওমান, কুয়েত, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, জর্জিয়া, আজারবাইজান, মিশরসহ অন্যান্য ছোট ছোট দেশ গুলোতে আপনাকে ভ্রমণ করে ট্রাভেল হিস্ট্রি তৈরি করতে হবে।
এইভাবে আপনি ইউরোপের ভিসা পাবার জন্য এই কাজগুলো করে নিবেন। তাহলে ভিসা পাওয়া সহজ একটি ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। কারণ ইউরোপে যাওয়ার জন্য এই বিষয়গুলো দেখা হয়। এর পাশাপাশি আপনার ব্যাংক একাউন্ট স্ট্রং করতে হবে। প্রতি মাসে স্যালারি একাউন্টে ডব্লিউপিএস করতে হবে। এইভাবে এক বছর অতিক্রম হওয়ার পর ও যখন রেসিডেন্সি ট্রাভেল হিস্ট্রি, ব্যাংক স্টেটমেন্ট সবকিছু ঠিকঠাক থাকবে তারপর আপনি নিজে অথবা ভাল কোন ট্রাভেল এজেন্সির সহযোগিতায় ইউরোপের ভিসার জন্য ফাইল প্রসেসিং করতে হবে।
ইউরোপের ভিসার জন্য যেসব কাগজপত্র প্রয়োজন হবে লাগবে সেগুলো হলো:
ছয় মাস মেয়াদি আপনার পাসপোর্ট কপি এবং এম্বেসিতে মেইন পাসপোর্ট সাথে নিতে হবে, দুবাই রেসিডেন্সি ভিসার কপি, এমিরেটস আইডি কার্ডের কপি
তিন অথবা ছয় মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট, এনআইডি কার্ডের ফটোকপি (যদি থাকে), দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, হোটেল বুকিং এর প্রমাণপত্র
বিমান টিকিট, পূর্বে ট্রাভেল করেছেন তার প্রমাণ অর্থাৎ যেসব দেশে আপনি ভ্রমন করেছেন সেগুলোর ফটোকপি, যে কোম্পানিতে আপনি ভিসা নিয়েছেন, সেখান থেকে একটা এনওসি লেটার, কী উদ্দেশ্যে ইউরোপ যাচ্ছেন তার একটি বিবরন দিয়ে কভার লেটার।
এই রিকোয়ারমেন্ট গুলো সাধারণত আপনার যখন হয়ে যাবে তখন এজেন্সীর মাধ্যমেই তারা ভিসা কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। সমস্ত ডকুমেন্টস নিয়ে তারাই কাজকর্ম করবে। তবে এক্ষেত্রে কিন্তু আপনি চাইলে নিজেও এজেন্সি অথবা দূতাবাসের মাধ্যমে এগুলোর জন্য কাজ করতে পারবেন। যদি আপনি নিজেই পারেন তাহলে সরাসরি নিজে গিয়ে করা ভালো হবে। এক্ষেত্রে দালালের মাধ্যম এড়িয়ে চলবেন এবং অবশ্যই বৈধ পথে চলার চেষ্টা করবেন। তাহলেই আশা করা যায় সফল হতে পারবেন।