আরব আমিরাতের সাতটি প্রদেশের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়, প্রধান শহর, নিরাপদ শহর ও আমিরাতে বাণিজ্যিক রাজধানী দুবাই। বিলাসবহুল জীবনযাপন, চোখ ধাঁধানো রঙিন আলোকরশ্মি, আকাশচুম্বি অট্টালিকা, বিলাসবহুল হোটেল, কৃত্রিম দ্বীপপুঞ্জসহ ব্যবসায়িক কারণে দুবাই ভ্রমণপ্রিয়দের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে।
১. বুর্জ খলিফা
বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন বুর্জ খলিফা, যা একইসঙ্গে একটি সাত তারকা হোটেল, মসজিদ, বিনোদনকেন্দ্র, নাইট ক্লাব, অ্যাপার্টমেন্ট, অফিস এবং বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্যবেক্ষণ ডেক হিসেবে বিখ্যাত। ভবনটি জুমেইরা সৈকত থেকে ২৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বুর্জ খলিফা ‘দুবাই টাওয়ার’ নামেও পরিচিত। ১৬০ তলাবিশিষ্ট আকাশচুম্বী এ ভবনটির মোট উচ্চতা ২ হাজার ৭১৭ ফুট, যার অবকাঠামো রকেটের মতো। এ ভবনে ঘণ্টায় ৪০ মাইল গতিবেগে চলে এমন মোট ৫৪টি এলিভেটর আছে।
পর্যটকদের কাছে এটি নিঃসন্দেহে আরব আমিরাতের সবচেয়ে দর্শনীয় এবং আকর্ষণীয় স্থান। এ ভবনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা হলো ১২৪ তলার ওপরে প্রকৃতি দর্শনের জন্য পর্যবেক্ষণ ডেকটি। এখান থেকে শুধু দুবাই নয়, আরবের একটি বড় অংশ পর্যবেক্ষণ করা যায়। ভূমি ছেড়ে এ ভবনটি এতই উপরে উঠেছে যে, একই বিল্ডিংয়ে থাকা সত্ত্বেও এখানকার মানুষজন ভিন্ন ভিন্ন সময়ে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখতে পান। শুধু উচ্চতাই নয়, বুর্জ খলিফার আভিজাত্য এবং চোখ ধাঁধানো নির্মাণশৈলী এক মুহূর্তেই আপনাকে বিমোহিত করে তুলবে। তবে বুর্জ খলিফা ভ্রমণের ক্ষেত্রে সূর্যোদয়ের সময়টি বেছে নিতে ভুলবেন না যেন।
২. বুর্জ আল আরব
বিশ্বের একমাত্র বিলাসবহুল সাত তারকা হোটেল বুর্জ আল আরব। ৩২১ মিটার লম্বা এ ভবনের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে অনেকটা পাল তোলা জাহাজ বা তিমি মাছের মতো, যা জুমেরিয়া সৈকতে পাশে সমুদ্রের মধ্যে একটি কৃত্রিম দ্বীপের ওপর তৈরি করা হয়েছে। আকাশচুম্বী এ হোটেল বিশ্বের চতুর্থ সুউচ্চ ভবন। বিলাসবহুল এ হোটেলের অত্যাধুনিক রাজকীয় অন্দরসজ্জা, দৃষ্টিনন্দন অ্যাকুরিয়াম এবং চমৎকার ইন্টেরিয়র ডিজাইন আপনাকে দারুণ এক শিহরণ দেবে।
হোটেলের প্রতিটি রুমেই রয়েছে ২৪ ক্যারেট স্বর্ণের আইপ্যাড, যার মাধ্যমে আপনি সহজেই হোটেল এবং রেস্তোরাঁর নানা তথ্য জানতে পারবেন। ব্যাপক ব্যয়বহুল এ হোটেলে প্রতি রাত থাকার জন্য খরচ হবে ৪ হাজার ৫০০ দিরহাম। তবে, এত টাকা খরচ না করেও পাশে থাকা জুমেইরা সৈকতে গিয়ে নিজেকে ফ্রেমবন্দি করে নিতে পারেন আপনি।
৩. আটলান্টিস, দি পাম
আটলান্টিস, দি পাম হচ্ছে একটি হোটেল রিসোর্ট, যা দুবাইয়ের পাম জুমাইরাতে অবস্থিত। কৃত্রিম দ্বীপের ওপর তৈরি এটিই বিশ্বের প্রথম রিসোর্ট। দি পামে প্রবেশ করার ঠিক পর মুহূর্ত থেকেই এর বিলাসিতা ও চোখ ধাঁধানো জৌলুস আপনার মন কেড়ে নেবে।
কয়েকদিনের অবসরে ছুটি কাটানোর জন্য এ রিসোর্ট খুবই জনপ্রিয়। হলিউড-বলিউডের অনেক তারকাই এখানে আসেন অবসর কাটাতে। খুব কাছ থেকে সেসব তারকার মুখোমুখি হতে পারেন আপনিও।
৪. পাম আইল্যান্ড
দুবাইয়ের পাম আইল্যান্ডটি বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় একটি জায়গা, যা মানুষের তৈরি কৃত্রিম দ্বীপগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোড়ন সৃষ্টিকারী। পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ও পর্যটকদের আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে সাগরের বুকে তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম তিনটি দ্বীপ।
সমুদ্রের ওপর বালি দিয়ে তৈরি তিনটি দ্বীপ এমনভাবে বসানো হয়েছে যা ওপর থেকে দেখতে একটি পাম গাছের মতো লাগে। এখানে রয়েছে বিলাসবহুল সব হোটেল আর রিসোর্ট। আরো রয়েছে নিজস্ব আবাসিক সৈকত, অ্যাপার্টমেন্ট, সুইমিং পুল, থিম পার্ক, রেস্তোরাঁ, শপিংমল, হাসপাতাল এবং খেলাধুলার সুবিধা।
৫. দুবাই স্বর্ণ মার্কেট
বিশ্বের সবচেয়ে কম দামে খাঁটি স্বর্ণ পাওয়া যায় যে দেশে, সে দেশটি হলো সংযুক্ত আরব আমিরাত। দুবাই শহরবাসীরা নিজেরাই একে স্বর্ণের দেশ বলে দাবি করেন।
প্রথমদিকে স্বর্ণের জন্য বিখ্যাত দু’টি দেশ ছিল ভারত ও চীন। তবে এ দেশ দু’টিকে ছাড়িয়ে বর্তমানে শীর্ষে দুবাই। প্রতি বছর স্বর্ণ কেনার জন্যই বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকরা দুবাইয়ে ভিড় করে। সবাই দুবাই থেকে স্বর্ণালঙ্কার কিনতে প্রবল আগ্রহী। অনেকে আবার পুরনো স্বর্ণ বিক্রি করে নতুন স্বর্ণ কেনেন।
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ববাজারে স্বর্ণের মোট প্রবাহের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশই আসে দুবাই থেকে। দিন দিন দুবাই স্বর্ণের জন্য এতই বিখ্যাত হয়ে উঠছে। এর অন্যতম কারণ, দুবাইয়ের স্বর্ণের একটি বিশেষত্ব আছে, এখানকার স্বর্ণের তৈরি জিনিসপত্র নিঃসন্দেহে নির্ভেজাল। এখানে সবচেয়ে কম দামে সেরা জিনিস পাওয়া যায়। তাই স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা বিক্রির সময় কোনো দর কষাকষি পছন্দ করেন না।
৬. স্কি দুবাই
দুবাই ভ্রমণের পথে মরুভূমির বুকে ধু ধু করে বালি ওড়া কিংবা মরিচিকার দেখা পাওয়া স্বাভাবিক মনে হলেও বরফে স্কি করা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার এই যে, মরুভূমিতে ঝলসানো রোদ থাকলেও দুবাইয়েই কেবল মরুভূমির বুকে স্কি করা সম্ভব। তাও আবার বরফঘেরা মাঠে, যা ২২ হাজার ৫০০ বর্গমিটার এলাকা জুড়ে অবস্থিত।
স্কি দুবাই মূলত একটি ইনডোর স্কি লাউঞ্জ, যেখানে পাওয়া যাবে পৃথিবীর সর্বপ্রথম ৪০০ মিটার দীর্ঘ ব্ল্যাক রান। লাউঞ্জের ভেতরে প্রবেশ করলে কিছু সময়ের জন্য হলেও আপনি পেতে পারেন এন্টার্কটিকা ভ্রমণের অনুভূতি। ভ্রমণপিপাসুদের জন্য স্কি দুবাইয়ের অভিজ্ঞতা উত্তেজনাপূর্ণ ও আনন্দময় মুহূর্ত সৃষ্টি করে। স্কি দুবাইয়ের প্রধান আকর্ষণ জেনেটু পেঙ্গুইন, কিং পেঙ্গুইন। এখানে পেঙ্গুইনদের সঙ্গে সাঁতার কাটাসহ কাচের বিশাল প্রাচীরের মাধ্যমে পেঙ্গুইনের মুখোমুখি হওয়া সত্যি অতুলনীয়। শুন্যের নিচে মাইনাস ৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় বসেও আপনি মজা করে আইসক্রিম বা মগ ভর্তি গরম কফি খেতে পারেন। সে জন্য আপনাকে অবশ্যই বিশেষ এক ধরনের পোশাক পরতে হবে।
৭. দুবাই ম্যারিনা
সংযুক্ত আরব আমিরাতের আরেক সুউচ্চ ভবন দুবাই ম্যারিনা। যেখানে রয়েছে বিশাল বিশাল সব আকাশছোঁয়া ভবন, বিলাসবহুল সৌন্দর্যে আবেশিত প্যাঁচানো ‘ক্যানন টাওয়ার’, সমুদ্র সৈকত, যা ট্যুরিস্টদের মন কেড়ে নেয় এক নিমিষেই।
সুন্দর আবহাওয়ার একটি দিন বেছে নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন দুবাই ম্যারিনা থেকে। এখানে ‘ওয়াটার ট্যাক্সি’ নিয়ে ঘুরতে পারেন ম্যারিনার অন্যতম ক্রুজে; কিংবা প্রিয়জনদের সঙ্গে সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে অসাধারণ একটি ডিনারও করে নিতে পারেন।