বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:২৭ অপরাহ্ন

দীপ্তর মনের আকাশে অনেক কথা

  • আপডেট সময় রবিবার, ২৬ মে, ২০২৪

ওদের দেখা-সাক্ষাৎ হয়নি বেশ কিছুদিন। মাঝে মাঝেই বিথী বলে যে, থ্যাংকস্ টু গড ফর দ্য স্মার্ট ফোন। তা না হলে যে কি হতো? কীভাবেই বা যোগাযোগ হতো, ইত্যাদি। প্রতিদিন না হলেও নিয়মিত ওদের টেক্সটিং বা খুদে-বার্তার আদান-প্রদান হয়। দুতিন দিন পরপর, পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে। ভালোই দিন কেটে যায় ওদের। কত রকম ইমোজি ব্যবহার করে বীথি তার যেন ইওত্তা নেই।
দীপ্ত নাম শুনে যেমন মনে হবে সে সুদর্শন, মেধাবী, চটপটে, এককথায় স্মার্ট একটা কলেজ পড়ুয়া ছেলে।

ব্যাপারটা কিন্তু তা নয়। দীপ্ত একটু মুখচোরা স্বভাবের। সাদামাটাভাবে কথা বলে। কথা বলার সময় তেমন কোনো নাটকীয় অঙ্গভঙ্গিও থাকে না। আর সব গুণ থাকা সত্ত্বেও ওকে ঠিক স্মার্ট ছেলেদের দলে ফেলা যায় কি না তা নিয়ে অনেকেরই দ্বিমত হবে। অন্যদিকে বীথি অনেক চটপটে। লেখাপড়ায়ও ভালো। তা না হলে তো আর অত ভালো আর বড় একটি কলেজে চান্স পেত না। তবে ইদানিং কথার মাঝে ইংরেজী শব্দ, কখনো কখনো পুরো লাইনই ইংরেজীতে বলে। মনে হয় কোনো ইংরেজী মিডিয়ামের সহপাঠী ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে ঘোরাফেরা বা আড্ডা দেয়।

কিছুদিন আগে বীথি খুব চাপাচাপি করে দীপ্তকে তার ফেসবুক ফ্রেন্ডস লিস্টে যোগ করে নিয়েছে। দীপ্ত ফেসবুকিং করে বটে, তবে অনর্গল বলে একটা কথা আছে, সেভাবে নয়। মাঝে-মধ্যে পড়ার ব্রেকে একটু দেখে নেওয়া, এই আর কি। ফ্রেন্ড লিস্টেও তেমন বেশি কেউ নেই। তাছাড়া সাথে সাথে দ্রুত মেসেঞ্জারের জবাব না পেয়ে ফ্রেন্ডলিস্টের বন্ধুরাও বোধ হয় দীপ্তকে ইগনোর করা শুরু করেছে।

এই গত কয়েকদিন যাবত বীথি বেশ মেসেজ করছে, সাথে ইমোজি পাঠাচ্ছে। কিছু কিছু ইমোজির মানে কি তার রহস্য ভেদ করতে দীপ্তকে গুগল করতে হচ্ছে। কাদের যে খেয়ে দেয়ে কাজ নেই, যে গাদা গাদা ইমোজি বানায়! সেদিনই তো বিথি একটা ইমোজি পাঠিয়েছে, যা দীপ্ত বাপের জন্মেও দেখেনি। কি যন্ত্রণা। ইগনোর করারও উপায় নেই, আবার জানতেও ইচ্ছে করছে।

গুগল করে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করতেই সে দেখলো, সেই ইমোজিটির সর্ম্পকে বিভিন্ন ওয়েবসাইটের বিভিন্ন মতামত। কেউ বলছে ইমোজিটির মানে হলো ‘মুচকি হাসি’, কেউ কেউ বলছে ‘হাল্কা হাসি’, আবার এক জায়গায় পেলো ‘ছদ্মগাম্ভীর্যের সাথে হাসি’। কোনো মানে হয়? তার নিজের কোনো ধরনের হাসি আসা তো দূরের কথা, বিরক্তিতেই মনটা তেঁতো হয়ে গেলো। ফোন রেখে, কলেজের একটা অ্যাসাইনমেন্ট ছিল তার দিকে মন লাগালো।

কয়দিন ধরেই বীথি তাকে খুব খোঁচাচ্ছে ফেসবুক মেসেঞ্জারে, যে তাকে একটা চিঠি লিখতে। ওরা একে অন্যকে এত মেসেজ লিখছে, মাঝে মধ্যে কথাও হচ্ছে, তথাপি চিঠিটা তার চাইই চাই। বলেছে যে, একটা ছেলে যদি একটা মেয়েকে প্রেমের চিঠি লেখে তাহলে যে রকম হবে, সে রকম। ব্যাপারটা সে একটু আধটু যে বোঝেনি তা নয়। তবে এমনও হতে পারে যে কোনো বান্ধবীকে প্রেমের চিঠি পেতে দেখেছে। আজকাল যা হয়েছে না, শুধু অনুসরণ আর অনুকরণ। যেমন কেউ কাউকে সেল্ফি তুলতে দেখলো কি খট্টাশ করে নিজের ধামা সাইজের একটা ফোন বের করে ওর থেকে বেশি কয়েকটা সেল্ফি না তোলা পর্যন্ত পেটের মধ্যে বাডুর-বুডুর চলতেই থাকবে যেন।

অগত্যা মনের মাধুরী মিশিয়ে একটা চিঠি লিখল দীপ্ত। সময় করে চিঠিটা ছেড়েও দিলো বীথির নতুন ঠিকানায়। বীথিকে চিঠি ছাড়ার কথা জানাতেই সে কমপক্ষে কুড়িটা প্রশ্ন ছুড়ে মারলো। কবে লিখলো, কখন লিখলো, কীভাবে, কিসের খামে, কত বড় চিঠি, প্রেমের চিঠি না নরমাল চিঠি, মন থেকে লিখেছে কি না, কবে পাবে, ইত্যাদি, ইত্যাদি আরো কত কি।

দীপ্ত কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলো, কিছু ইচ্ছে করেই বলল না বা গুছিয়ে বলতে পারবে না বলে এড়িয়ে গেলো। বীথি তো আর ছেড়ে দেওয়ার বান্দা না। এদিকে দীপ্তও বলছে না। এক পর্যায়ে কথোপকথনটা কথা কাটাকাটিতে পরিণত হলো। দীপ্ত আস্তে আস্তে বলে ফেলল,

-‘ও তুমি বুঝবে না। ওসব বলতে আমার যে বড়ো কষ্ট হয়।’
-‘আমাকে বলতে তোমার কষ্ট হয়? আচ্ছা অত আর কষ্ট করতে হবে না।’

বলেই ক্লিক। বীথি ফোনটা কেটে দিলো। ‘টা টা’ পর্যন্ত বললো না। দীপ্ত বীথিকে কথার শেষে ‘বাই’’ বলে, আর বীথি ওকে বলে ‘টা টা’। মনটা বিষন্ন করে দীপ্ত অনেকক্ষণ বসে থাকলো। ভাবলো, সে নিজে এ রকম কেন? কেন সে বীথির কাছে সবকিছু গুছিয়ে বলতে পারে না? তার মনের আকাশে অনেক কথা, অনেক স্মৃতি ভেসে উঠল।

লেখক: অমিয় দাশ

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com