শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ০২:১৫ অপরাহ্ন

দার্জিলিং—হিমালয়ের কোলে অবস্থিত এক স্বপ্নের মতো জায়গা

  • আপডেট সময় শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫
দার্জিলিং—হিমালয়ের কোলে অবস্থিত এক স্বপ্নের মতো জায়গা, যেখানে প্রকৃতি যেন আপন ঐশ্বর্যে নিজেকে উজাড় করে দেয়। তবে দার্জিলিং শহরের মূল আকর্ষণগুলি ঘুরে দেখার পর অনেকেই খুঁজে ফেরেন একটু নির্জন, শান্ত পরিবেশ—যেখানে পর্যটকের ভিড় নেই, কিন্তু প্রকৃতির সৌন্দর্যে ভরপুর। দার্জিলিংয়ের আশেপাশে এমন কিছু অফবিট গন্তব্য রয়েছে, যা প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে যেন স্বর্গসম। চলুন, একটু বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক এই অপরূপ স্থানগুলির কথা:
১. চটকপুর (Chatakpur)
দার্জিলিং শহর থেকে প্রায় ১৬ কিমি দূরে অবস্থিত চটকপুর একটি শান্ত ও নির্জন পাহাড়ি গ্রাম। ৭,৮৮৭ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই গ্রাম থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার এক ঝলক দেখা যায় পরিষ্কার দিনে। ঘন বন, বুনো ফুলের গন্ধ, পাখির ডাক, আর চা-বাগানের সবুজে মোড়া এই গ্রাম একেবারে নিরিবিলিতে সময় কাটানোর জন্য আদর্শ। এখানকার ইকো-হোমস্টেগুলি অত্যন্ত জনপ্রিয়, যেগুলো স্থানীয়দের দ্বারা পরিচালিত।
২. দাওয়াইপানি (Dawaipani)
দাওয়াইপানি মানে “ঔষধি জল”। দার্জিলিং থেকে প্রায় ১৫ কিমি দূরে এই গ্রামটি এখনও অনেকটাই অচেনা। এখানকার পরিবেশ একেবারে নির্মল ও প্রাকৃতিক। কাঞ্চনজঙ্ঘার দর্শন এখান থেকেও পাওয়া যায়, এবং সকালবেলার নীরবতা ও সন্ধ্যার সূর্যাস্ত যেন মন ছুঁয়ে যায়। যারা ব্যস্ত শহরের কোলাহল থেকে দূরে গিয়ে প্রকৃতির কোলে নিঃশব্দে সময় কাটাতে চান, তাদের জন্য এটি একেবারে উপযুক্ত।
৩. তাবাকোশি (Tabakoshi)
মিরিকের কাছাকাছি অবস্থিত তাবাকোশি একটি ছোট্ট গ্রাম, যেখানে রাম্ভা নদীর ধারে আপনি প্রকৃতির সাথে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারবেন। নদীর কুলকুল শব্দ, ঘন সবুজ বনাঞ্চল, স্থানীয় লেপচা সংস্কৃতি—সব কিছু মিলিয়ে এটি একটি নিঃশব্দ অথচ প্রাণবন্ত গন্তব্য। রিভার সাইড ক্যাম্পিং এবং মাছ ধরার মতো অভিজ্ঞতাও নিতে পারেন এখানে।
৪. জোরপোখরি (Jorpokhri)
জোরপোখরি নামেই বোঝা যায়, এখানে দুটি ছোট হ্রদ আছে। ৭,৪০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই জায়গাটি শান্তি আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব মিশ্রণ। চারিদিকে চিরসবুজ বন এবং হ্রদের পাশে বসে পাখির ডাক শুনতে শুনতে সময় কাটানো যেন এক অন্যরকম প্রশান্তি দেয়। এখানে বিরল প্রজাতির স্যালামান্ডার দেখা যায়, যা এই জায়গাটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।
৫. রামধুরা (Ramdhura)
কালিম্পংয়ের কাছে অবস্থিত রামধুরা একটি অসাধারণ দৃষ্টিসুখদায়ী গ্রাম, যেখান থেকে তিস্তা নদী ও কাঞ্চনজঙ্ঘার অপূর্ব দৃশ্য দেখা যায়। এই গ্রামে পৌঁছাতে একটু কষ্ট হলেও সেই কষ্ট ধুয়ে যায় ভোরের মেঘ ও সূর্যালোকের খেলায়। এখানে রাতের আকাশে অসংখ্য তারা দেখা যায়, এবং সকালে পাখিদের কলকাকলি এক স্বর্গীয় অনুভূতি এনে দেয়।
৬. সামসিং (Samsing)
দুয়ার্স অঞ্চলের একপ্রান্তে অবস্থিত সামসিং, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং জীববৈচিত্র্যের এক চমৎকার মিলনস্থল। চা-বাগান, নদী, ঝরনা, এবং নীল পাহাড়ের সারি—সব মিলিয়ে সামসিং যেন প্রকৃতির এক খোলা বই। এখানকার মৃগমারী বনভূমি ও রকি আইল্যান্ড এলাকা প্রকৃতি পর্যবেক্ষকদের জন্য বিশেষ আকর্ষণীয়।
এই সব জায়গাগুলোর সৌন্দর্য কোনো গাইডবুকে লেখা থাকে না, বরং নিজের চোখে দেখে ও মন দিয়ে অনুভব করলেই বোঝা যায়। প্রকৃতির সান্নিধ্যে সময় কাটাতে চাইলে দার্জিলিং-এর এই অফবিট গন্তব্যগুলি আপনার ভ্রমণতালিকায় অবশ্যই রাখা উচিত।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com