সময়টা ভ্রমণের বলে মনে হতেই পারে। তবে এই রোদের নগরে একটু বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা দেখে মনটা গুমোট হয়ে ওঠে। আহা! বৃষ্টি দেখা হলো না। বৃষ্টি দেখা হলো না আর সঙ্গে সবুজ। সেজন্যই বর্ষার সময় যেতে হবে চা বাগানে।
চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গল। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে দিগন্তবিস্তৃত চা-বাগান আর চারপাশে সবুজের সমারোহ। নীল আকাশের নিচে যেন সবুজ গালিচা পেতে আছে সবুজের সজীব প্রকৃতি। উঁচু-নিচু টিলা আর সমতলে সবুজের চাষাবাদ। এই সবুজে অন্তত বিরক্তির সুযোগ নেই।
শ্রীমঙ্গলে মানুষ ও চায়ের বাগানের নৈসর্গিকতা একসঙ্গে মিলেমিশে একাকার। যদিও দীর্ঘদিন চায়ের বাগানে কাটালে বিষণ্ণতা আসতেই পারে। তবে সেও ক্ষণিকের জন্য। আপনি তো আর দীর্ঘদিনের জন্য যাবেন না। একটু সবুজ আর ফাঁক পেলে গুমগুমে শব্দের বৃষ্টি। কিন্তু মৌলভীবাজারে গেলে সব চায়ের বাগানে গেলেই মুগ্ধ হবেন তা কিন্তু নয়। একঘেয়ে লাগতেই পারে।
মৌলভীবাজার জেলায় রয়েছে ৯১টি চা-বাগান। যার ৩৮টিই শ্রীমঙ্গলে। এসব চা-বাগানের একেকটির সৌন্দর্য একেক ধরনের। সব চা বাগানের নিজস্বতা রয়েছে। আর কিছু চা-বাগান রয়েছে মনোমুগ্ধকর। এসব চা-বাগান দেশের পর্যটন শিল্পে অনন্য ভূমিকা পালন করে চলেছে। অর্থনৈতিক খাতে অবদান তো রয়েছেই।
প্রায় সারা বছরই মৌলভীবাজারের দিগন্তবিস্তৃত সবুজাভ চা-বাগানগুলো দেখতে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আগমন ঘটে। এসব চা-বাগানের মধ্যে সাম্প্রতিককালে পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে শ্রীমঙ্গলের এমআর খান চা-বাগান। এ বাগানের ৭ নম্বর সেকশনটি পুরো যেন দার্জিলিংয়ের আদলে তৈরি বা পুরো দার্জিলিংয়ের চা-বাগানের মতো দেখতে। যদিও এটি পর্যটকদের কাছে দার্জিলিং টিলা নামে পরিচিতি পেয়েছে। ভাবা যায়? দেশের ভেতর দার্জিলিং এর আবহ? হ্যাঁ, ভাবা যায়।
মৌলভীবাজার জেলা সদর থেকে ৩২ কিলোমিটার ও শ্রীমঙ্গল উপজেলা থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বর্তমান সময়ের আলোচিত এমআর চা-বাগানের প্রায় ৩০০ ফুট উচ্চতার দার্জিলিং টিলায় গেলে অন্তত মানুষের অভাব নেই। সেখানে অনেক মানুষ ঘুরতে আসেন। জেলার পর্যটন শিল্পে নব-সংযোজন অপরূপ সৌন্দর্যময় এ টিলার চারপাশে সবুজের প্রান্তর অসংখ্য পর্যটনের মনোযোগ আকর্ষণ করে ফেলেছে। ঠিক যেন একটা ছবি। বাস্তব কিন্তু তারপরও বাস্তব নয়।
চারদিকে সবুজাভ চা-বাগান আর মনোমুগ্ধকর বৃক্ষরাজি। দৃষ্টি যেদিকে যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। চা-বাগানের সর্পিল মেঠো-পথ যে কারও মনকে ভরিয়ে দিতে পারে প্রশান্তির ছায়ায়। এখানে এলে সবাই হয়তো মোবাইলে ছবি তুলতে চাইবেন। এমন সবুজ যার গাঢ়তা নেই। স্নিগ্ধতা রয়েছে। টিলার চারপাশে বন্ধুদের নিয়ে উল্লাসের সুযোগও কম নয়। আর এখানে ঘুরতে আসার সবচেয়ে বড় সুবিধা আপনি অবাধে চা-বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। সবুজের চাদরে আচ্ছাদিত চা-বাগানের টিলায় সচরাচর প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত থাকে। তাই ঘুরতে গেলেও কেমন এক ধরনের পিছুটান থেকেই যায়। এখানে নেই। যেমনটি নেই সমরেশ মজুমদারের উপন্যাসে জলপাইগুড়ির চা-বাগানের বর্ণনায়।
হতেই পারে আপনি দুই থেকে তিন দিনের ভ্রমণে এসেছেন। আবার একদিনের ভ্রমণও হতে পারে। সেটা আপনার ইচ্ছের ওপর। আসবেন তো চা বাগানটি দেখতে। সে আর অমন কি কঠিন বিষয়? দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে যানবাহন অথবা ট্রেনে করে আসবেন শ্রীমঙ্গলে। শ্রীমঙ্গল নামার পর আর আপনার ভাবনা নেই। শহরের স্টেশনরোড এলাকায় চলে এলেই আপনার গন্তব্যের পথ নিশ্চিত। স্টেশন রোডের পেট্রল পাম্প এলাকায় এলেই মোহাজেরাবাদের দিকে যাচ্ছে এমন সিএনজি অটোরিকশা পাবেন ঝাঁকে ঝাঁকে। তাদের ডাক আগে থেকেই। আসুন আসুন। অটোরিকশায় চড়ার পর ভ্রমণটা সংক্ষিপ্তই।
কোনো ঝামেলা না হলে মোটে ১৫ মিনিট। আপনাকে পৌঁছে দেবে এমআর খান রাস্তার মুখে। ওইখান থেকে ২ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণে এগিয়ে যাওয়ার পর আপনার দার্জিলিং টিলা চোখের সামনেই উন্মুক্ত হবে। যাদের প্রাইভেট যানবাহন আছে অথবা বাইকে করে একটা ট্যুর দেওয়ার ইচ্ছে আছে তারা তো টিলার পাদদেশ পর্যন্ত চলে যেতে পারবেন। সময়টা এমনভাবে নির্বাচন করুন যাতে বিকালের দিকে পৌঁছুতে পারেন। বিকালে কেমন ফুরফুরে বাতাস এখানে। আপনার সামনে দিগন্তবিস্তৃত সবুজের সম্মিলন। দার্জিলিং। শুধু ট্রেনটা হলেই হয়ে যেত।