দার্জিলিং এবং তার হোটেল, এই গ্রুপে আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে খুবই ভালো লাগে এবং যখনই কোন পোস্ট করি উত্তরবঙ্গ নিয়ে মূলত আমি শুধু উত্তরবঙ্গ নিয়ে পোস্ট করি। একটা বড় অংশের কমেন্ট থাকে দার্জিলিং নিয়ে। এবং দার্জিলিং এর হোটেল নিয়ে। উত্তরবঙ্গে বাড়ি হওয়ার সুবাদে আমার মাসের গড়পড়তা দুবার এবং বছরে কিছু না হলে কুড়ি বার দার্জিলিং যাওয়া হয়। দার্জিলিংয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক আমার জ্ঞান হওয়ার আগে থেকে।
যদিও অধিকাংশ সময় আমি দার্জিলিং এ জিম খানা ক্লাবে থাকি সেখানকার মেম্বার হওয়ার সুবাদে কিন্তু দার্জিলিং এর একটা বড় অংশ হোটেলে থাকা লোভ আমি সামলাতে পারিনি, তাই মাঝেমধ্যেই একটু টেস্ট চেঞ্জ করতে বিভিন্ন হোটেলে থাকি।
এই পোস্টটা শুধুমাত্র দার্জিলিং এর হোটেল নিয়ে দার্জিলিং বলতে আমি এখানে দার্জিলিং স্টেশন দক্ষিণ প্রান্তে, উত্তরের বাউন্ডারি হিসেবে নর্থ পয়েন্ট স্কুল এবং পশ্চিমের বাউন্ডারি হিসেবে জলাপাহার কে ধরেছি,
আশা করব আপনারা যারা ঘুম বা বাতাসিয়া এই অঞ্চলে হোটেলের কথা বলবেন সেটা এই পোস্টে আমি উল্লেখ করছি না।
এবং দার্জিলিং এর আশেপাশে যে চা বাগান গুলোর মধ্যে থাকা আছে সেগুলো আমি এই পোস্টে দিচ্ছি না পরে আমি একটা চা বাগানে থাকা নিয়ে পোস্ট করব আলাদা করে।
এবার দার্জিলিংয়ের হোটেল গুলোকে মূলত আমি ৫ টা ভাগে ভাগ করব
১.
দার্জিলিং এর সব থেকে দামি এবং লাক্সেরিয়াস থাকা,
এক্ষেত্রে মূলত চারটি হোটেলকে ধরা যায়
সেগুলো হল এলগিন, উইন্ডমারে, মে ফেয়ার এবং Ceder Inn
এগুলোর মধ্যে আমার কাছে সব থেকে ভালো এলগিন এবং উইন্ডেমিয়ার মূলত এদের মানুষজনের ব্যবহার এবং অতুলনীয় সার্ভিসের জন্য, Ceder Inn একটা সময় অসাধারণ ছিল কিন্তু পরবর্তীকালে সেটার মালিকানা এংলো ইন্ডিয়ানদের থেকে মারোয়ারীদের হাতে যাওয়ার পরে বারোটা বেজে গেছে।
মি ফেয়ার আমার কাছে এই লাক্সারি ক্যাটাগরির মধ্যে সব থেকে overhyped হোটেল, এর মূল কারণ এই যে হেরিটেজ প্রপার্টি টা সেটার শুধু নামই হেরিটেজ আছে এখানে সমস্ত ঘর গুলো তার যে পুরনো জিনিসপত্র সবকিছু ধ্বংস করে একটা বার্ড বক্স তৈরি করা হয়েছে।
যদি খরচের কথায় আসা যায় এই চারটিরই মোটামুটি ভাড়া ৮ হাজার থেকে ১২ হাজারের মধ্যে ঘোরাফেরা করে ,
এই চারটে হোটেলের মধ্যে মিফেয়ার ছাড়া বাকি সবকটাতেই পার্কিং নিয়ে কোন অসুবিধা নেই
২. এই ক্যাটাগরিতে হলো কর্পোরেট ক্যাটাগরির হোটেল এর মধ্যে আমি যেগুলোতে থেকেছি সেগুলো হল রামাদা, yashashree, সুইস, সুমিটেল , ডেকলিং , ওরসিনো, লিটল Tibet , RJ resort, Istana, Viceroy , Sinclairs, sonar bangla, Pradhan Jagjeet , Lunar, sunflower , Mohit , Musctle , Crescent
এগুলোর মধ্যে পার্সোনালি আমার কাছে লিটিল Tibet, yashashree (mall road one) এবং সুইস এই তিনটি হোটেল প্রথমে থাকবে এর কারণ মূলত এখানকার রুমগুলো এবং লোকজনের ব্যবহার।
যে হোটেলটা আমি সবাইকে এভোয়েড করতে বলবো সেটা হচ্ছে রামাদা। এটা প্রচন্ড ওভারহাইড একটা হোটেল এবং এখানকার লোকজনের ব্যবহার অত্যাধিক খারাপ।
এই হোটেল গুলোর মধ্যে আরজে রিসোর্ট, সোনার বাংলা, প্রধান, লুনার, সুমিটেল, আর ডেকলিন ছাড়া বাকি হোটেল গুলোতে গাড়ির পার্কিং আছে কিন্তু নাম্বারটা লিমিটেড, এই হোটেল গুলোর ভাড়া মোটামুটি তিন হাজার থেকে ছয় হাজার টাকার মধ্যে অনেক সময় অফ সিজনে এদের ভাড়া ২০০০ টাকার মধ্যেও পাওয়া যায়।
৩. এই ক্যাটাগরিতে আমি মূলত দার্জিলিংয়ের হেরিটেজ কিছু প্রপার্টিকে রাখবো এবং আমার থাকা হেরিটেজ কিছু প্রপার্টি হল
Ivanhoe house, দা ইংলিশ কটেজ, সেন্ট্রাল হেরিটেজ, বেলভিউ হোটেল, এলিজভিলা ,পাইনরিজ হোটেল, ওল্ড ব্রাউডওয়, বর্ধমান প্যালেস, ভিলা এভারেস্ট, আইভরি ভিলা, নাইটেঙ্গল ভিলা
এগুলোর মধ্যে আমার কাছে সবথেকে ভালো দা ইংলিশ কটেজ(অসাধারণ কাঞ্চনজঙ্ঘা ভিউ) এবং ivonhoe হাউস
এর মূল কারণ এগুলো অসাধারণ ভাবে মেইনটেইন করা হয়েছে।
আমি বর্ধমান প্যালেসের কথাও বলব একটাই এখানে অসুবিধে এটা মূল শহর থেকে একটু দূরে
এগুলোর মধ্যে সবথেকে খারাপ অবস্থা যদি বলা হয় সেটা পাইনরেজ হোটেলের এই হোটেলটা আবার দার্জিলিংয়ের সবথেকে ভুতুড়ে হোটেল হিসেবে বিখ্যাত বা কুখ্যাত আমি এখানে পাঁচবার থেকেছি ভূত দেখতে পাইনি তবে এখানকার স্টাফেদের রাত নটার পরে পাওয়া যায় না। সেটার কোন উত্তর এখন আমি খুঁজে পাইনি।
এই হোটেল গুলোর মধ্যে ভিলা এভারেস্ট আইভরি ভিলা বর্ধমান প্যালেস এলিজভিলা তে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা আছে এর মধ্যে আইভরিভিলা এবং বর্ধমান প্যালেসে পার্কিং নিয়ে কোন সমস্যা হবে না কিন্তু বাকিগুলোতে কথা বলে নেওয়া আগে ভালো যদি গাড়ি নিয়ে আসতে হয়।
ভাড়ার দিকে বলতে গেলে ইংলিশ কটেজের ভাড়া অনেকটাই বেশি আট হাজার টাকার মত থাকে
বাকিগুলোর ভাড়া মোটামুটি তিন থেকে ছয় হাজারের মধ্যে
Alice villa এবং পাইনরেজ এর ভাড়া ডের থেকে আড়াই হাজারের মধ্যে থাকে
৪. দার্জিলিঙে বাঙালি আসার একটা মূল কারণ কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা তাই এই ক্যাটাগরি টাতে আমি সেই হোটেল গুলো কি রেখেছি যেখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা সব থেকে ভালো দেখা যায়। এবং বলাই বাহুল্য দার্জিলিংয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা যদি সব থেকে ভালো দেখতে হয় তাহলে অবজারভেটরি হিল এই লাগুয়া হোটেল গুলোই নেওয়া সব থেকে ভালো। এই হোটেল গুলোর যেগুলোতে আমি থেকেছি সেগুলো হল ডলফিন, হাইল্যান্ডের ইন, ক্লাসিক গেস্ট হাউস, সেন্ট্রাল গ্লেনিগার্লস, udaan, Lions inn সত্যি বলতে কি এদের সবকটা হোটেলে ভালো কিন্তু যদি আপনার একটু বড় রুমের দরকার হয় তাহলে ক্লাসিক গেস্ট হাউস এবং উড়ান আপনার জন্য সবথেকে ভালো ,
এগুলোতে কোনোটাতেই পার্কিং পাওয়া যায় না। আর এগুলোর ভাড়া মোটামুটি 2000 থেকে চার হাজার টাকার মধ্যে থাকে।
৫. বাজেট ক্যাটাগরি এখানে আমি সেই হোটেল গুলোকে রেখেছি যেগুলোর ভাড়া ৫০০ থেকে দু হাজারের মধ্যে এগুলোর মধ্যে আমি যেগুলোতে থেকেছি সেগুলো হল চ্যালেট হোটেল , রিভলভার, চাণক্য হোটেল, সেভেন সি ইজ হোটেল, হোটেল সেভেন সেভেনটিন , তিস্তা লজ, নর্ভু হাউস, অলিভ হোটেল, ব্রড ওয়ে এনএক্স হোটেল, হিডেন মাঙ্কি ব্যাক প্যাকার্স, মাউন্টেন হর্স লজ, ইয়াক রেসিডেন্সি , ভুটান হাউস, কস্তুরী প্যালেস, বৈকুণ্ঠ লজ
এগুলোর কোনোটাতেই পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নেই
এদের মধ্যে যদি সার্ভিসের হিসেবে আমাকে বলতে হয় তাহলে অবশ্যই রিভলবার, নরবু হাউস, কস্তুরী প্যালেস সব থেকে এগিয়ে থাকবে এর মূল কারণ এদের ঘর এখানকার খাওয়া-দাওয়া সার্ভিস এবং এগুলো থেকে একটা সুন্দর কাঞ্চনজঙ্ঘা ভিউ পাওয়া যায়।
একটি বিশেষ মেনশন করে দেওয়া ভালো, আর একটা জায়গা যেটা আমার দার্জিলিংয়ের খুবই প্রিয় কিন্তু আজকাল সেখানে এত বেশি ভিআইপিরা বুক করে আগে থেকে বসে থাকে সেখানে বুকিং পাওয়া খুবই মুশকিল কিন্তু যদি আপনারা বুকিং পান তাহলে চোখ বুঝে সেখানে চলে আসবেন সেটা হলো দার্জিলিং টুরিস্ট লজ,
দার্জিলিং এ এতই বেশি হোটেল আছে কোন মানুষের পক্ষে একটা জীবনে সবকটা হোটেলে থাকা সম্ভব হবে না তাই এখানে সেই হোটেল গুলোই আমি মেনশন করেছি যেগুলোতে আমি থেকেছি। এখানে অনেক মানুষ আছে যারা অন্য অনেক হোটেলেও থেকেছেন আপনারা বলবেন আপনাদের অভিজ্ঞতা এবং সেখান থেকে অনেকেই লাভবান হবেন।
এবার বুকিং এর প্রসঙ্গে আসি আমি কোনদিনও কোন এজেন্ট এর মাধ্যমে বুকিং করি না যদি সেটা সিজন হয় তাহলে হোটেলে ডাইরেক্ট ফোন করে আগে বুক করিনি আর অফ সিজন হলে সাধারণত হোটেলে এসেই বুকিং করি যেটাকে রানিং বুকিং বলা হয়।
এর মূল কারণ অনেকটাই টাকা এখানে সেভিং করা যায়.
অনেক এজেন্টরা বলেন যে কিছু কিছু হোটেল আগে থেকে বুক না করলে সেখানে ঢুকতে দেওয়া হয় না এটা সম্পূর্ণ ভুল একটা কথা. আশা করবো এই পোস্টটা আপনাদের ভালো লাগবে এবং আপনাদের দার্জিলিং এর ভ্রমণ সুখকর করবে।.