গরমের এই অসহ্য দাবদাহ থেকে মুক্তি পেতে এই সময় বহু পর্যটক ঘোরার পরিকল্পনা করেন উত্তরবঙ্গে। তবে দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াং তো চেনা জায়গা; আপনারা ঘুরে আসতে পারেন দার্জিলিংয়ের পাশেই একটি ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম থেকে। যেখানে গেলে আপনি প্রকৃতিকে প্রাণভরে উপভোগ করতে পারবেন। কাজের ব্যস্ততার মধ্যে জীবনে যে একঘেয়েমি তৈরি হবে তা কেটে যাবে এক নিমেষে। প্রকৃতির কোলে এমনই এক শান্ত-সুন্দর গ্রাম রঙ্গারুন বা ‘রাজেরু’(Rangaroon)।
গ্রামের (Rangaroon) চারিদিক চা বাগানে মোড়া এবং এই গ্রামে যদি একবার আসেন তাহলে আপনি ভুলে যাবেন আপনার সমস্ত ক্লান্তি। নিশ্চয়ই আপনারা জানতে ইচ্ছা করছে এই গ্রাম সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে তাহলে আজকের প্রতিবেদনটি অবশ্যই মনোযোগ সহকারে পড়ুন। এনজেপি থেকে পৌঁছতে সময় লাগে আড়াই-তিন ঘণ্টা। পাহাড়ের কোল থেকে এঁকেবেঁকে এখানে চলে গেছে প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ কিলোমিটার পথ।
ব্রিটিশ আমলে এখানে (Rangaroon) গড়ে ওঠে ৪৯.৯৩ হেক্টরের এই চা বাগান৷ এই পাহাড়ি গ্রামে আসলে আপনি মেঘ যেন হাতের মুঠোতে ধরতে পারবেন। রঙ্গারুন পৌঁছানোর পথে দেখতে পাবেন রাস্তার পাশে সাজানো রয়েছে ঘন গাছের সারি। এখানে আপনি পেয়ে যাবেন প্রায় ৩০ রকমের ঔষধি গাছপালা৷ কুইনাইন গাছও রয়েছে বিস্তর৷ সঙ্গে রয়েছে কমলার অগুনতি গাছ। শীতের সময় এইসব কাজ ফলে ভরে যায়।
রঙ্গারুনের (Rangaroon) প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের কাজে লাগবে যেন এক স্বপ্ন। সেনচেল অভয়ারণ্যের অন্তবর্তী গ্রাম হওয়ার জন্য আপনি যদি ভোরবেলা এখানে ঘুরতে বেরুন তাহলে আপনার বরাতজোরে চোখে পড়তে পারে ওরিয়েন্টাল টার্টল ডাভ, রেড ভেন্টেড বুলবুল, গ্রিন ফ্লেম ব্যাক ও অন্যান্য বিরল প্রজাতির পাখি৷ যেসব পর্যটকরা পাখি ভালোবাসেন তারা জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসে এখানে আসবেন নানা ধরনের পাখি দেখা যায়। পাশাপাশি এখানকার অভয়ারণ্যে রয়েছে ভাল্লুক, হরিণ, শজারু, এমনকী চিতাও৷ স্থানীয় মানুষের মধ্যে চাক্ষুষ চিতা দেখার অভিজ্ঞতাও রয়েছে, তবে তা বিরল৷
এই পাহাড়ি গ্রামের রোদ ঝলমলে দিনে আপনি দেখতে পাবেন কাঞ্চনজঙ্ঘার শিখর৷ আলো ঠিকরে পড়া চূড়া রাঙিয়ে দেয় রঙ্গারুনের রূপ৷ এখানকার আতিথেয়তায় আপনার মন ভরে যাবে। হোম স্টে, কটেজে আন্তরিকভাবে অভিনন্দন জানানো হয়। এই গ্রামের অচেনা মানুষগুলো খুব সহজেই আপনার কাছে চেনা হয়ে উঠবে। খাবারের আয়োজনও বাড়ির মতোই পেয়ে যাবেন৷ দার্জিলিং থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে বলে এখানে দুপুরের খাবার বাইরে সারারও প্রচুর অপশন পেয়ে যাবেন।
আপনি রঙ্গারুন (Rangaroon) চা-বাগানে মাঝ বরাবর হেঁটে গেলে এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। চারিদিকে পেয়ে যাবেন ঘন সবুজ এবং মাঝে হঠাত্ ঘিরে ধরবে মেঘের দল৷ গ্রামের অন্যদিকে আপনি পেয়ে যাবেন রুংদাং খোলা। যদিও এপথে গাড়ি যায় না, তাই পায়ে হেঁটে আপনাকে এই প্রাকৃতিক শোভা উপভোগ করতে হবে। আপনি চাইলে সূর্য ওঠার পরই প্রাতরাশ সেরে বেরিয়ে পড়তে পারেন রুমদাং খোলার পথে৷ রুংদাং খোলার সূত্রে রুংদাং নদী৷ রঙ্গারুনের নামও এসেছে নদীর সূত্রেই৷ লেপচা ভাষায় ‘রাঙ্গেরুন’ কথার অর্থ ‘এক বড় নদীর বাঁক’৷ এখানেই রুংদাং নদী সোজার বদলে বাঁকা পথ নেয়, তাই এমন নাম৷ এছাড়াও এই ছোট্ট গ্রামে সুব্যবস্থা রয়েছে রক ক্লাইম্বিং, মাউন্টেন বাইকিং, ফরেস্ট ক্যাম্পিং, ট্রেকিং, হাইকিং–ইত্যাদি জিনিসের।