দক্ষিণ আমেরিকার কেন্দ্রে অবস্থিত একটি স্থলবেষ্টিত দেশ প্যারাগুয়ে। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এই দেশকে বলে ‘দক্ষিণ আমেরিকার হৃদয়’। জীবনযাত্রার স্বল্প ব্যয় এবং বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশের জন্য এটি দক্ষিণ আমেরিকার অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য। যাঁরা এই মহাদেশে দীর্ঘমেয়াদি বসবাসের কথা ভাবছেন, তাঁদের জন্য প্যারাগুয়ে একটি স্থায়ী বসবাসের (পারমানেন্ট রেসিডেন্সি—পিআর) সুযোগ দিচ্ছে। পিআর পেলে দেশটিতে দীর্ঘ সময় থাকা, কাজ করা এবং পড়াশোনার সুযোগ পাওয়া যাবে।
কেন প্যারাগুয়েতে স্থায়ী বসবাস করবেন
প্যারাগুয়েতে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পেলে সে দেশে বসবাস, কাজ এবং পড়াশোনার সুযোগ পাওয়া যায়। সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো, এই রেসিডেন্সি সচল রাখতে প্রতি তিন বছরে শুধু একবারের জন্য দেশটিতে প্রবেশ করলেই চলে। দেশটিতে কর-সুবিধা থাকায়, অন্যান্য দেশের তুলনায় এখানে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের পরিমাণ বেশ কম।
স্থায়ী বসবাসের বিভিন্ন পথ
প্যারাগুয়েতে স্থায়ী বসবাসের জন্য কয়েকটি প্রধান পথ রয়েছে:
অস্থায়ী রেসিডেন্সি থেকে রূপান্তর: প্রথমে অস্থায়ী রেসিডেন্সি নিয়ে ২১-২৪ মাস পর সেটিকে স্থায়ী রেসিডেন্সিতে রূপান্তর করা যায়।
বিনিয়োগ: ব্যবসা বা রিয়েল এস্টেটে কমপক্ষে ৭০ হাজার মার্কিন ডলার (প্রায় ৭৭ লাখ টাকা) বিনিয়োগের মাধ্যমে রেসিডেন্সি পাওয়া যায়। একটি ব্যবসায়িক পরিকল্পনা থাকলে এই বিনিয়োগ পর্যায়ক্রমে সম্পন্ন করা সম্ভব।
অবসর গ্রহণ: যাঁরা অবসরজীবন কাটাতে চান, তাঁদের জন্য প্রতি মাসে কমপক্ষে ১ হাজার ২২ মার্কিন ডলার (প্রায় ১ লাখ ১২ হাজার টাকা) পেনশন আয় প্রদর্শনের মাধ্যমে রেসিডেন্সি নেওয়া সম্ভব।
পারিবারিক সম্পর্ক: কোনো প্যারাগুয়ের নাগরিককে বিয়ে করলে অথবা যদি আপনার বাবা-মা বা সন্তান প্যারাগুয়ের নাগরিক হন, তাহলেও স্থায়ী বসবাসের জন্য আবেদন করা যায়।
অন্যান্য পথ: কিছু কম প্রচলিত পথের মধ্যে রয়েছে কাজের অনুমতি এবং পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলন।
আবেদনের যোগ্যতা
স্থায়ী বসবাসের জন্য আবেদনকারীর কিছু সাধারণ যোগ্যতা থাকতে হয়:
আবেদনকারীকে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী হতে হবে।
একটি বৈধ পাসপোর্ট থাকতে হবে।
আবেদনকারীর নিজ দেশ এবং প্যারাগুয়ে থেকে নেওয়া পুলিশি সনদ (পুলিশ ক্লিয়ারেন্স) জমা দিতে হবে।
প্যারাগুয়েতে দেওয়া একটি মেডিকেল সনদ থাকতে হবে।
প্যারাগুয়ের পরিচয়পত্র (Cedula) নিতে হবে।
যদি প্রযোজ্য হয়, তাহলে চাকরির সনদ বা সম্পত্তির মালিকানার সনদ দিতে হবে।
রেসিডেন্সি চলাকালীন প্যারাগুয়েতে বসবাসের প্রমাণ সংরক্ষণ করতে হবে।
বিদেশি নথিগুলো অবশ্যই স্প্যানিশ ভাষায় অনুবাদ করতে হবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী অ্যাপোস্টিল ও নোটারি করতে হবে।
প্রয়োজনীয় নথিপত্র
বৈধ পাসপোর্ট
জন্মসনদ (অ্যাপোস্টিল এবং অনুবাদ করা)
অপরাধ রেকর্ডের সনদ (শেষ বসবাসের দেশগুলো থেকে নেওয়া, অ্যাপোস্টিল এবং অনুবাদ করা)
প্যারাগুয়েতে দেওয়া মেডিকেল সনদ
প্যারাগুয়েতে দেওয়া অ্যাফিডেভিট
যদি প্রযোজ্য হয়, তবে বিয়ে বা তালাকের সনদ
প্যারাগুয়েতে বসবাসের প্রমাণপত্র
ছয় কপি পাসপোর্ট আকারের ছবি
যদি প্রযোজ্য হয়, তবে চাকরির বা সম্পত্তির মালিকানার সনদও জমা দিতে হবে।
আবেদন প্রক্রিয়া
প্রথমে আপনার স্থায়ী বসবাসের যোগ্যতার শর্তগুলো যাচাই করে নিন।
আপনার পেশা এবং আর্থিক অবস্থার সঙ্গে মানানসই রেসিডেন্সি প্রোগ্রামটি নির্বাচন করুন (যেমন: অবসর, বিনিয়োগ, কাজ বা পারিবারিক)।
প্রয়োজনীয় সমস্ত নথিপত্র সংগ্রহ ও প্রস্তুত করুন। নিশ্চিত করুন যে বিদেশি নথিগুলো অনুবাদ, অ্যাপোস্টিল এবং নোটারি করা হয়েছে।
প্যারাগুয়েতে ট্যুরিস্ট ভিসায় প্রবেশ করুন (যদি প্রয়োজন হয়) এবং অভিবাসন অফিসে (Direccion General de Migraciones-DGM) রেসিডেন্সির জন্য আবেদন করুন।
আবেদনের সরকারি ফি বাবদ ২২০-৩৮০ মার্কিন ডলার (২৪,২০০—৪১, ৮০০ টাকা) জমা দিন। আইনজীবীর ফি, নথিপত্র অনুবাদ এবং নোটারি ফি আলাদা দিতে হবে।
আবেদনের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করুন। সাধারণত প্রক্রিয়াটি ৩ থেকে ৬ মাস সময় নেয়।
আবেদন অনুমোদিত হলে অনুমোদনের ছয় মাসের মধ্যে আপনার স্থায়ী রেসিডেন্সি কার্ড এবং প্যারাগুয়ের আইডি কার্ড (Cedula) সংগ্রহ করুন।
স্থায়ী রেসিডেন্সির শর্তগুলো মেনে চলুন। যেমন: প্রতি ১০ বছর অন্তর Cedula কার্ডটি নবায়ন করা এবং প্রতি তিন বছরে কমপক্ষে এক দিনের জন্য প্যারাগুয়েতে প্রবেশ করা।
রেসিডেন্সির মেয়াদ
স্থায়ী রেসিডেন্সি কার্ডের মেয়াদ সাধারণত ১০ বছর হয় এবং এটি নবায়নযোগ্য। অস্থায়ী রেসিডেন্সি কার্ডের মেয়াদ সাধারণত ২ বছর থাকে, এরপর সেটি স্থায়ী রেসিডেন্সিতে উন্নীত হয়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৪ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার (প্রায় ৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা) জমা দেওয়ার মাধ্যমে রেসিডেন্সি পাওয়ার একটি পুরোনো পথ সম্প্রতি আইন পরিবর্তনের কারণে বাতিল করা হয়েছে।
স্থায়ী বসবাসের তিন বছর পর এবং প্রতিবছর ১৮৩ দিনের সশরীর উপস্থিতি নিশ্চিত করলে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা সম্ভব।