শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১২:২১ পূর্বাহ্ন
Uncategorized

দক্ষিণের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১২ অক্টোবর, ২০২১

চলতি মাসেই উদ্বোধন হবে বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পায়রা সেতুর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতু উদ্বোধন করবেন। সংশ্লিষ্টরা উদ্বোধনী আয়োজন বেশ জোরেশোরে চালিয়ে যাচ্ছেন। এ কারণে এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনার শেষ নেই।

একটা সময় ছিল বরিশাল থেকেই সড়কপথে কুয়াকাটা যেতে সময় লাগত ৯-১০ ঘণ্টা। তখন কীর্তনখোলা আর পায়রাসহ বরিশাল-পটুয়াখালীর ৬টি নদী পার হয়ে পৌঁছতে হতো কুয়াকাটায়। বরিশাল নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব ডা. মিজানুর রহমান বলেন, ‘তখন সূর্যোদয়ের সময় বরিশাল থেকে রওয়ানা হয়ে কুয়াকাটায় গিয়ে সূর্যাস্ত দেখা কঠিন হয়ে পড়ত।’ বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে এই ৬টি নদীর মধ্যে ৫টিতেই ব্রিজ হয়েছে। বাকি থাকা পায়রা নদীর উপরও দাঁড়িয়েছে গর্বের সেতু। ২০১৬ সালের ২৪ জুলাই নির্মাণ শুরু হওয়া এই সেতুটির এখন শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষা। সাড়ে ৯ বছর ধরে নির্মাণযজ্ঞ চলার পর যানবাহন চলাচলের জন্য এটি এখন প্রস্তুত।

জানা যায়, সেতুটি ১ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে। এর ৮২ ভাগের জোগান দিয়েছে কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড এ্যাপেক্স ফান্ড। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী সেতুর মতো এটিও নির্মাণ করা হয়েছে এক্সট্রা ডোজ ক্যাবল পদ্ধতিতে। সেতুতে থাকা ১৬৭টি বক্স গার্ডার সেগমেন্টের কারণে দূর থেকে দেখলে মনে হবে এটি শূন্যে ভেসে আছে। ১ হাজার ৪৭০ মিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণে বসানো হয়েছে ১৩০ মিটার দৈর্ঘ্যরে বেশ কিছু পাইল। এসব পাইল পদ্মা সেতুতে বসানো পাইলের চেয়েও বড়। ৩২টি স্প্যানের মূল সেতুটি বিভিন্ন মাপের ৫৫টি টেস্ট পাইলসহ ১০টি পিয়ার, পাইল ও পিয়ার ক্যাপের ওপর নির্মিত।

সেতু নির্মাণের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আব্দুল হালিম বলেন, ‘সর্বোচ্চ জোয়ারেও নদীর উপরিভাগ থেকে ১৮.৩০ মিটার উঁচুতে থাকবে এ সেতু। ৪ লেন বিশিষ্ট সেতুর উভয় পাশে নির্মিত হয়েছে ১ হাজার ২৬৮ মিটার দৈর্ঘ্যরে অ্যাপ্রোচ সড়ক। করা হয়েছে আলোকসজ্জা। রাতে শুধু সেতুই নয়, পুরো পায়রা নদী ঝলমল করে উজ্জ্বল আলোয়। এছাড়া বাংলাদেশে এই প্রথম পায়রা সেতুতে বসানো হয়েছে হেলথ মনিটরিং সিস্টেম। ভূমিকম্প, বজ পাত এবং ওভারলোডেড গাড়ির ক্ষেত্রে এই সিস্টেম দেবে আগাম সংকেত। ফলে বড় ধরনের ক্ষতি হওয়ার শঙ্কা মুক্ত থাকবে সেতু।’ বর্তমানে দুই পাড়ে নদী শাসনের কিছু কাজ বাকি থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এজন্যে সেতু চালু করতে কোনো বাধা নেই।’

৩ দফা সময় বৃদ্ধি এবং নির্মাণে ৯ বছর সময় লাগার কারণ হিসাবে তিনি বলেন, ‘প্রথমত, অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ প্রশ্নে জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে আমরা জটিলতায় পড়েছিলাম। নদী শাসনের ক্ষেত্রেও বেশ কিছু সমস্যা দেখা দেয়। এখানে জয়েন্ট ভেঞ্চারে সেতু নির্মাণ প্রশ্নে লিডিং ঠিকাদার চীনের লো ঝিয়াং কোম্পানি। সেতুর অধিকাংশ মালামালও এসেছে চীন থেকে। করোনার কারণে কাজে পিছিয়ে পড়ার পাশাপাশি মালামাল আসায় জটিলতা না থাকলে আরও আগেই শেষ হতো সেতুর নির্মাণ।’

যানবাহন চলাচলের জন্য সেতু খুলে দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা সব কাজ সম্পন্ন করেছি। আশা করছি প্রধানমন্ত্রী এটি উদ্বোধন করবেন। প্রস্তাবনা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। চলতি মাসেই সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে বলে আশা করছি।’

তবে একটি বিষয় নিয়ে খানিকটা নাখোশ এই অঞ্চলের মানুষ। কারণ সেতুতে যানবাহন পারাপার প্রশ্নে যে টোল নির্ধারণ করা হয়েছে তা বর্তমানে চালু থাকা ফেরির তুলনায় প্রায় ৭ গুণ বেশি। যেখানে ফেরিতে যাত্রীবাহী বাস পার হতে দিতে হয় ৫০ টাকা সেখানে ৩৪০ টাকা ধরা হয়েছে সেতুর টোল। অন্যান্য যানবাহনের ক্ষেত্রেও একই হারে বাড়ানো হয়েছে টাকার অঙ্ক। বরিশাল-পটুয়াখালী মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওসার হোসেন শিপন বলেন, ‘২৫ আসনের একটি মিনিবাস বরিশাল থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরত্বে থাকা পটুয়াখালী যেতে ভাড়া নেওয়া হয় মাথাপিছু ৮০ টাকা। এই পথে আরও দুটি সেতু রয়েছে। ওই দুই সেতুতে ৫০ টাকা করে টোল দেই আমরা। সঙ্গে রয়েছে কর্মচারী বেতন এবং জ্বালানি ব্যয়। পায়রা সেতুতে ৩৪০ টাকা টোল দিতে হলে লোকসানের মুখে পড়বেন বাস মালিকরা। তাইে টোলের হার পুনর্নির্ধারণের দাবি জানাচ্ছি।’

বরিশাল মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট এফবিসিসিআইর পরিচালক নিজামউদ্দিন বলেন, ‘পায়রা সেতু চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। বরিশাল থেকে মাত্র দুই-আড়াই ঘণ্টায় পৌঁছে যাওয়া যাবে পায়রাবন্দর ও সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটায়। ফলে সেখানে পর্যটন শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটবে। পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজারের ওপর নির্ভর করে পুরো একটি অঞ্চল অর্থনীতিতে শক্তিশালী। পায়রা সেতু চালু হলে কুয়াকাটার পাশাপাশি বরগুনা-পটুয়াখালী তথা পুরো বরিশাল অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রশ্নে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে।’

পটুয়াখালী চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট পৌর মেয়র মহিউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, সেতু উদ্বোধন হলে পটুয়াখালী-বরগুনাসহ দক্ষিণের বিশাল একটি এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে। এই অঞ্চলের সঙ্গে বিভাগীয় শহর বরিশাল ও রাজধানী ঢাকার দূরত্বও কমে যাবে।

পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনের সংসদ সদস্য মুহিব্বুর রহমান বলেন, এই সেতুসহ ভাঙ্গা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত মহাসড়ক ফেরি মুক্ত করায় জাতির পিতার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। পায়রা ও পদ্মা সেতু চালু হলে যে কেউ ইচ্ছে করলে সকালে ঢাকা থেকে রওয়ানা হয়ে সমুদ্র দর্শন শেষে আবার রাতেই ঢাকায় ফিরতে পারবেন। এটা একটা বৈপ্লবিক উন্নয়ন। আর এটা সম্ভব হয়েছে শুধু জননেত্রী শেখ হাসিনার কারণে। আমরা দক্ষিণাঞ্চলবাসী এজন্যে তার কাছে কৃতজ্ঞ।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com