প্রতি বারের মতো এ বার গোয়ার প্রকৃতি তার সব সৌন্দর্য উজাড় করে দিয়েছিল আমাকে। বরং আগের চেয়ে খানিক বেশিই। পাহাড়ের ধার ধরে ফলন্ত কাজু গাছ দেখে চোখ জুড়োয়। চেনা–অচেনা পাখির ডাকে ভাঙত ঘুমের আলস্য। অতি পরিচিত গোয়ার সমুদ্রকে আবিষ্কার করলাম অন্য রূপে। সমুদ্রের রং এত গাঢ় নীল আগে দেখিনি। হয়তো পর্যটক কম বলেই। কখনও সমুদ্রের ধারে নরম রুপোলি বালিতেই ব্যায়াম করতাম, আবার কখনও সঙ্গী হত বই। জীবনের সঙ্গে প্রকৃতির এমন যোগসূত্র আগে খুঁজে পাইনি। সূর্যাস্তের রঙের ছটা, তারা ভর্তি আকাশ, জ্যোৎস্নায় ধুয়ে যাওয়া পথ— পর্যটকের ভিড়ে আর কৃত্রিম আলোয় এগুলো যেন কোথায় লুকিয়ে ছিল! আকাশ এতটাই পরিষ্কার যে, তারা গুনতে গুনতে কত রাত, ভোর হয়ে যেত।
দীর্ঘকাল পর্তুগিজ়দের অধীনে থাকায় এখানকার সংস্কৃতিতে তাদের প্রভাব রয়েছে। খাওয়াদাওয়া তো বটেই। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে স্থানীয় কোঙ্কণি স্বাদ। স্থানীয় কোকাম পাউডার ও নারকেল ছাড়া গোয়ার খাবার ভাবাই যায় না। কিন্তু লকডাউনে গোয়ার খাবারের জৌলুস ফিকে ছিল। সমস্ত স্যাক বন্ধ। জায়গাগুলোয় কেমন যেন ভূতুড়ে পরিবেশ। অন্য সময় প্রন ভিন্দালু, ফিশ জ়াকুতি, রাইস অ্যান্ড ক্র্যাব কারি, চকলেট স্মুদি, হরেক রকমের ফ্রুট জুসে মজে যাই। এ বারে খাওয়াদাওয়ার সেই এলাহি ব্যাপারটা মিস করেছি। তবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মন ভরিয়ে দিয়েছে। শ্বাস ভরে অক্সিজেন নিয়েছি, সবুজের সাম্রাজ্যে লুটোপুটি খেয়েছি। কখনও নরম বালির বুকে আঁকিবুঁকি কাটতাম আবার কখনও পাথুরে রাস্তার অলিগলিতে নিরুদ্দেশ হয়ে যেতাম। বারবার মনে হত সৃজনশীল কিছু করতে হবে। কী ভাবে একশো দিন কেটে গেল বুঝতে না বুঝতেই আমি গোয়া থেকে মুম্বইয়ের সড়কে।
গোয়া থেকে মুম্বই আসার রাস্তায় অনেক আধো অন্ধকার টানেল পেরোতে হয়। মনে হচ্ছিল নিজের জীবনের অন্ধকার টানেলগুলো যেন এত দিনে পেরিয়ে এলাম। মুম্বইয়ে ১৪ দিন গৃহবন্দি থাকার পরে কাজে ফিরল, সে এক অন্য টিনা, যে হারিয়ে গিয়েছিল মুম্বইয়ের বদ্ধ জীবনে । আজ আমি অনেক আত্মবিশ্বাসী। যে সিদ্ধান্তগুলো নিতে পারতাম না, তা এখন অনায়াসেই নিয়ে ফেলি।
কিছু ভ্রমণ মানুষকে নতুন ভাবে বাঁচতে শেখায়। একশো দিনের এই সফর আমার সারা জীবনের সেরা সঞ্চয়। যেমন ক্যামেরায়, তেমন স্মৃতিতে। জীবনে অনেক বার প্রেমে পড়েছি, কিন্তু গোয়ায় যার প্রেমে পড়লাম, সে হল আমার যোগা ম্যাট। কোথাও গেলেই সবচেয়ে আগে ওইটা প্যাক করে ফেলি।