শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৫২ অপরাহ্ন
Uncategorized

থাইল্যান্ড সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য

  • আপডেট সময় সোমবার, ৩ মে, ২০২১
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া মহাদেশের অন্তর্গত থাইল্যান্ড এমন একটি দেশ যেখানে ইউরোপীয় স্বাশনের প্রভাব বিশেষ একটা পরে নি। বেশির ভাগ সময় ই এই দেশে রাজার রাজত্বের প্রসার ঘটে। আজ আমরা যে দেশটিকে কিংডম অফ থাইল্যান্ড হিসাবে জানি সেটাকে একটা সময় সিয়াম নাম ডাকা হতো। থাইল্যান্ডের আধিকারিক মানুষরা থাইল্যান্ড কে মুইঅং থাই নামে একটা সময় ডাকতেন।
থাইল্যান্ডের আধিকারিক ভাষা হলো থাই। এই থাই শব্দের অর্থ হলো ফ্রি ম্যান। কথা কিছুটা হলেও সত্যি। কারণ যুদ্ধ ব্যতীত থাইল্যান্ডকে কোনো পাশ্চাত্যের দেশ কোনো সময় ই স্বাসন করতে পারে নি। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে দেশটি রাজতন্ত্রের অধীনে চলে আসে এবং  রাজ্ বংশের অধীনে থাকাকালীন ই দেশটি গণতান্ত্রিক অধিকার পায়। সেই সময় রাজা প্রজাদীপক বাধ্য হয়ে দেশের সাধারণ মানুষ গুলিকে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার দিয়ে দেয়। ফলে থাইল্যান্ডের রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে। কিন্তু তারপরেও রাজাদের কাছে খুব সীমিত ক্ষমতা থেকেই যায়। তবে এই রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেন এই দেশে স্থায়ী হতেই চাই না। এই দেশে যে কতবার রাজনৈতিক অরাজকতার সৃষ্টি হয়েছে তা বলে শেষ করা যাবে না। ২০১৪ সালে এই দেশে স্বাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন হয়।  আর তার কয়েক বছর পরেই ২০১৭ সালে নতুন ভাবে সংবিধান গঠন করা হয়।
থাইল্যান্ডের মোট আয়তন ৫ লক্ষ ১৩ হাজার ১২০ বর্গকিমি। যা আয়তনে বিশ্বে ৫০ তম স্থান দখল করে রেখেছে। এই দেশের চারদিকে মালেশিয়া, কম্বোডিয়া এবং মায়ানমারের মতো দেশ গুলি রয়েছে। কিন্তু থাইল্যান্ডের পাশাপাশি সেখানকার কিছু বিখ্যাত জায়গা রয়েছে যা সারা বিশ্বের কাছে খুবই পরিচিত এবং জনপ্রিয়। যেমন থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক, পাটায়াফুকেট ইত্যাদি।

থাইল্যান্ডের জাতীয় মুদ্রা থাই বাত। থাইল্যান্ডের মানুষ ওদের মুদ্রাকে খুবই সম্মান করে। কারণ ওদের মুদ্রাতে ওখানকার রাজার ছবি থাকে। তাই ওদের মুদ্রাকে যদি কেউ অপমান করে তাহলে তাদের আর রক্ষা নেই। বাত পৃথিবীতে বহুপ্রচলিত মুদ্রা গুলির মধ্যে একটি।

থাইল্যান্ড দেশটি একটা সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ সুনামির কবলে পড়লেও সেখানে পরবর্তী সময়ে পর্যটকদের আসা কখনোই কমে যায় নি। কারণ এই দেশের রাজধানী ব্যাংককের আসল নামটা পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো নাম গুলির মধ্যে একটি। এছাড়াও ব্যাংকককে সিটি অফ এঞ্জেলসসিটি অফ রয়াল প্লেসেস আরো কিছু বিখ্যাত নামে ডাকা হয়। প্রাচীন মানুষরা মনে করতেন থাইল্যান্ডের মানুষরা দক্ষিণ পশ্চিম চীন থেকে এসে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় তাদের বসতি স্থাপন করে। যাকে আগে সিয়াম নামে ডাকা হতো। আর এখন তাকে থাইল্যান্ড বলা হয়। তাই দেশের মূল জাতিগত গোষ্ঠীকে থাই বলা হয় এবং চীনা থাই গোষ্ঠীর মানুষকেও থাইল্যান্ডে দেখা যায়।

জনসংখ্যার দিক দিয়ে ২০ তম স্থানে অবস্থান করা থাইল্যান্ডের মোট জনসংখ্যা প্রায় ৬ কোটি ৯০ লক্ষ। এই দেশের অধিকাংশ মানুষ বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাসী। তবে তবে থাইল্যান্ডের মানুষ বৌদ্ধ ধর্মের একটি শাখা থেরাভাদা তে বিশ্বাসী। এই থেরাভাদার সমস্ত লিপি গুলি রাখা আছে পালি ক্যানন এ। এই বৌদ্ধ ধর্মের পাশাপাশি ওখানে স্বল্প পরিমান হিন্দু, মুসলিম এবং খ্রিষ্টান ধর্মের মানুষও বসবাস করে। থাইল্যান্ডে বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব থাকায় সেখানে বেশির ভাগ জায়গায় বৌদ্ধদের মন্দির এবং স্তূপ দেখতে পাওয়া যায়। ‘গ্রেট বৌদ্ধা অফ থাইল্যান্ড‘ এই বিশাল ভাস্কর্যটি এই থাইল্যান্ডেই অবস্থিত।

থাইল্যান্ড প্রযুক্তিবিদ্যার দিক দিয়েও অনেক এগিয়ে। আজ বড়ো বড়ো গাড়ি নির্মাণ শিল্পে পৃথিবীর মধ্যে থাইল্যান্ড অন্যতম। এছাড়াও ওখানে দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত অনেক দ্রব্য উৎপন্ন হয়। টিনের দ্রব্য উৎপাদনে বিশ্বের বাণিজ্যিক বাজারে থাইল্যান্ড সবার উপরে থাকে। ওখানে দেশের মূল অর্থনৈতিক ব্যবস্থা রপ্তানীগত দ্রব্য থেকেই আসে। এছাড়াও থাইল্যান্ডের অর্থনীতির অনেকটাই আসে পর্যটন শিল্পের থেকে। সারা বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রতি বছর ব্যাংকক, পাটায়া এই শহর গুলিতে বেড়াতে আসে। পর্যটন শিল্প থেকে আসা আয়ের পরিমান দেশের সমগ্র অর্থনীতির ৬ শতাংশের মতো।

থাইল্যান্ডের পরিবহন ব্যবস্থা খুবই উন্নত। বিশেষ করে পর্যটকদের যাতে কোনো অসুবিধায় না পড়তে হয় সেই সব দিকে বিশেষ ভাবে খেয়াল রাখা হয়।  এবং পর্যটকদের মাত্রা বাড়ানোর জন্য ওরা পর্যটকদের সমস্ত রকম সুযোগ সুবিধা প্রদান করে। থাইল্যান্ডে পর্যটকদের বেড়ানোর জন্য জায়গার অভাব নেই। যেমন সেখানে বিভিন্ন লেক, স্তুপ, গার্ডেন ইত্যাদি পর্যটকদের বিশেষ ভাবে আকৃষ্ট করে।

চালের তৈরি যেকোনো খাবার এবং নানা রকম মাছের খাবার থাইল্যান্ডে খুবই জনপ্রিয়। বিশ্বের একটি বড়ো খাবার  প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউশন এ থাইল্যান্ডে উৎপন্ন প্রায় সব  রকমের চালের খাবার সঞ্চিত রাখা আছে। তো বুজতেই পারছেন চাল উৎপাদনে থাইল্যান্ড বিশ্ব বিখ্যাত।

একটা জিনিস থাইল্যান্ডে প্রতিদিন দেখতে পাওয়া যায় তা হলো ওখানে প্রতিদিন সকাল ৮ টায় জাতীয় পতাকা তোলার নিয়ম রয়েছে এবং সেই পতাকা সন্ধ্যে ৬ টায় নামিয়ে নেওয়া হয়। থাইল্যান্ডের পতাকায় তিনটি রং দেখতে পাওয়া যায়, লাল রং, সাদা রং এবং নীল রং। এই প্রত্যেকটি রঙের কিছু বিশেষত্ব রয়েছে।  যেমন লাল রং দেশের জায়গা এবং মানুষের প্রতীক। সাদা রং দেশের মানুষের সম্প্রদায়ের প্রতীক এবং নীল রং দেশের রাজতন্ত্রের প্রতীক।

খেলাধুলাতেও  থাইল্যান্ড এর মানুষ খুবই আগ্রহী। আপনি যদি বক্সিং ভালোবাসেন তাহলে থাই বক্সিং এর নাম নিশ্চই শুনে থাকবেন। এই থাই বক্সিং থাইল্যান্ড এ খুবই জনপ্রিয় একটি খেলা। যা ওখানে মুয়ায় থাই নামে পরিচিত। তবে দিন দিন ফুটবলের জনপ্রিয়তা থাইল্যান্ডে বেড়েই চলছে। এবং দেশের জাতীয় ফুটবল টিমটি সাফল্যের দিকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।

কিন্তু দিন দিন বন জঙ্গলের পরিমান থাইল্যান্ডে কমে যাচ্ছে। যার ফলে প্রাণীজ সম্পদ দিন দিন লপ্ত হয়ে যাচ্ছে।  কিন্তু বর্তমানে থাইল্যান্ডে গাছপালা কাটা একেবারে নিষিদ্ধ কারণ ওখানের মাটিতে বিভিন্ন রকমের প্রাণী পাওয়া গিয়েছে যা খুবই বিরল। থাইল্যান্ডের জাতীয় পশু হাতি। যার দেহের গঠন শক্তির পরিচয় দেয়। তো ওখানে প্রায় সব জায়গাতেই হাতি দেখা যায়।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com