থাইল্যান্ড বিমানবন্দরে প্রবেশের পরই অনুমান করা যায় এদেশের নারীরা কর্মজীবী। বিমানবন্দরে সব ডিপার্টমেন্টে নারীদের দায়িত্বে থাকতে দেখা গেছে।
এরপর আপনি যেখানেই যাবেন নারীদের ব্যস্ততা চোখে পড়বে। শুধু ব্যাংকক শহরে নয়, থাইল্যান্ডের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীরাও কর্মজীবী। এমনও শত শত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে, যেখানে পুরুষ ছাড়াই নারীরা সব সামলান।
ব্যাংকক শহর, নারাথিওয়াৎ, পাতায়া, চিয়াংমাইসহ বিভিন্ন প্রদেশ ঘুরে দেখা গেছে, বড় বড় শপিং সেন্টার, সুপার শপ, হাসপাতাল, ফার্মেসি, ফিলিং স্টেশন, রেস্টুরেন্ট, মুদি দোকান থেকে শুরু করে, নার্সারি, সেলুনের দোকান, সবজির দোকান সব ব্যবসায় নারীরা জড়িত।
ট্রাভেল এজেন্সিতেও ৯০ শতাংশ নারী। ড্রাইভিং পেশায় আছেন অনেক নারী। অনেক কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা পার্টটাইম চাকরি করেন। বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ৬০-৭০ বছরের বৃদ্ধাকে পরিচালনা করতে দেখা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কর্মজীবী নারী সংখ্যার দিক থেকে থাইল্যান্ড এগিয়ে। দেশটির মোট কর্মজীবীর ৪৮ শতাংশই নারী। থাইল্যান্ডের রাস্তায় বের হলেই কর্মব্যস্ত নারীদের চোখে পড়ে। দেখা গেছে, ভালো ইংরেজি বলতে না জানলেও বিদেশি পর্যটকদের সঙ্গে হাসিমুখে সেবা দিয়ে যান।
থাইল্যান্ডের শপিং মল, রাস্তার পাশের দোকানগুলোর বেশিরভাগ বিক্রেতাই নারী। শুধু শপিং মলই নয়, খাবারের দোকানগুলোও নির্ভরশীল নারীদের ওপর। আবার সব জায়গায় মুসলিম নারীদের সরব উপস্থিতি।
তাদের বেশিরভাগই হিজাব পরেন। শুধু ব্যাংকক শহরে সেভেন ইলেভেন নামে একটি সুপার শপের প্রায় ২ হাজার আউটলেট আছে। এসব আউটলেটের দায়িত্বে থাকা কর্মীদের মধ্যে ৯০ শতাংশ নারী।
ব্যাংককের ইসরাফাত এলাকায় তিনটি বিল্ডিং পরিচালনার দায়িত্বে আছেন সৌবিতা নামের পঞ্চাশোর্ধ্ব এক নারী। তিনি, তার মেয়ে ও মা মিলে তিন শিফটে দায়িত্ব পালন করেন। এই তিন ভবনে থাকা ভাড়াটিয়া থেকে শুরু করে সবকিছু দেখভাল করেন।
আবার অনেক এলাকায় দেখা গেছে, পেছনে বা দোতলায় বাসা, সামনে বা নিচতলায় খাবারের দোকান, কাপড়ের দোকান, ফলের দোকান, সবজির দোকান, টি স্টল দিয়ে ব্যবসা করছেন নারীরা।
ব্যাংককের সুকুমিত এলাকার প্লাটিনাম শপিং সেন্টারের নারী বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা সকাল ৮টার মধ্যে দোকানে আসেন। ৯টা পর্যন্ত চলে গোছানোর কাজ। তারপর থেকে শুরু হয় ক্রেতাদের সেবা দেওয়া।
জানা গেছে, এশিয়ায় নারীদের মধ্যে সর্ব প্রথম ১৯৩২ সালে ভোটাধিকার পায় থাই নারীরা। দেশটির পার্লামেন্টে নারীদের অংশীদারত্ব ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ। ১৯৪৯ সালের ৫ জুন থাইল্যান্ডের পার্লামেন্টে হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভ হিসেবে অরপাচিন চাইয়াকান পার্লামেন্টে পদ পান।
রাজধানী ব্যাংককের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কারাবি শহর, পাত্তানি, আলা, নারাথিওয়াতে দেখা যাবে থাই মুসলিমদের দৈনিন্দন জীবনযাপন। থাই মুসলিম নারীরা সব সময় হিজাব পরেই থাকেন। ঘরে-বাইরে হিজাব পরেই দৈনন্দিন কাজ-কর্ম ও ব্যবসা-বাণিজ্য করেন।
এক কথায় থাই নারীরা অনেক কর্মঠ। মেয়েরা এখানে অনেক নিরাপদ। মধ্য রাতেও দেখা যায় নারীরা মনের আনন্দে মোটরসাইকেল চালিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ব্যবসা-বাণিজ্য দোকান বন্ধ করে বা কর্মস্থল থেকে বাসায় ফিরছেন তারা। মেয়েরা অনেক স্বাধীন ও অনেক নিরাপদ এখানে।
এখানে কৃষিকাজেও নারীরা জড়িত। থাইল্যান্ডে ছোট-বড় প্রায় ১০ হাজার নার্সারি আছে। এসব নার্সারির মালিক ও কর্মচারীর মধ্যে ৮০ শতাংশ নারী।
নারাথিওয়াৎ প্রদেশের গোলক এলাকায় ৫টি নার্সারির মালিক হাজেরা নামের এক মুসলিম নারী। তার নার্সারিতে আছে দেশি-বিদেশি কয়েক হাজার গাছের চারা। তার আছে বেশ কয়েকটা দামি গাড়ি, বাড়ি, অর্ধশত কর্মচারী, সব শক্ত হাতে পরিচালনা করেন।
৪০ বছর ধরে থাইল্যান্ডে বসবাস করা বাংলাদেশি মাহবুব হাসান বলেন, ‘থাইল্যান্ডে সক্ষম সব নারীই কর্মজীবী। বরং পুরুষের তুলনায় এরা বেশি। ছোটবেলা থেকে পরিবার থেকে মেয়েরা শিক্ষা নেয়।’
‘এখানকার নারীরা বৃদ্ধ বয়সেও বসে থাকে না। শারীরিক ক্ষমতা অনুযায়ী বিভিন্ন কাজ করেন। আমার দেখা ও জানামতে এখানে এমন কোনো নারী নেই, সে শুধু ঘরের কাজ করছে বা ঘরে বসে আছেন।’
ব্যবসায়িক কাজে থাইল্যান্ডে আসা চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দা মো. ওমর শরীফ বলেন, ‘ব্যবসা ও চিকিৎসার জন্য আমার প্রায় সময় থাইল্যান্ড আসা হয়। এদেশে কর্মক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে নারীরা পিছিয়ে নেই। এখানকার সব সেক্টরে নারীদের দেখা যায়। এমনও অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেখেছি, যেখানে সবাই নারী।’