দেশে গভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ পেতে যাচ্ছে মার্কিন কোম্পানি এক্সন মবিল। এ কাজে প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার বা ৩ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে চায় কোম্পানিটি। এরই মধ্যে উৎপাদন বণ্টন চুক্তি বা পিএসসি অনুমোদন করেছে সরকার। এতে বিদেশি কোম্পানি প্রাপ্ত তেল-গ্যাসের ৫০ শতাংশ পাবে। বাংলাদেশ না কিনলে, থাকছে রফতানির বিধানও। বর্তমান সরকারের মেয়াদেই এক্সন মবিলের সাথে সমঝোতা স্মারক সই করার প্রস্তুতি নিচ্ছে জ্বালানি বিভাগ।
গভীর ও অগভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি এক্সন মবিল। বেশ কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশে ৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব ছিল তাদের। এ নিয়ে কয়েক দফা বৈঠকও হয় জ্বালানি বিভাগের সাথে। তার আলোকে সম্প্রতি দ্বিতীয় দফায় যে প্রস্তাব আসে, তাতে আগস্টেই সমঝোতা করার কথা বলে এক্সন মবিল।
এরই মধ্যে সংশোধন করা হয়েছে উৎপাদন বণ্টন চুক্তি বা পিএসসি। প্রধানমন্ত্রীর সম্মতির পর অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি তা চূড়ান্ত করেছে। পেট্রোবাংলা ও উত্তোলনকারী কোম্পানি, তার সমান অংশীদার হবেন।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, যে পিএসসি আমরা করছি, সে পিএসসির আওতায় তারা আসতে চাচ্ছে। তারা নিজেদের অর্থে করতে চায়, এক্ষেত্রে নন বাইন্ডিং একটা সমঝোতার কাছাকাছি আসতে চাইছে। তাদের জায়গাটা ‘মোর ফ্যাক্সিবল’।
ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, এটাতে আর বিলম্ব করা উচিত না, সুযোগ হাতছাড়া করা উচিৎ হবে না। এটাতে স্পেশাল এটেনশন দেয়া উচিৎ। এখানে এক্সন মবিলের সাথে আলোচনা বা চুক্তি যাই হোক না কেন; আমার মনে হয় বাংলাদেশের খুব রিজিট থাকা ঠিক হবে না। অবশ্যই জাতীয় স্বার্থ সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার পাবে।
এবারের পিএসসিতে কোম্পানির অংশের গ্যাস বাংলাদেশ না কিনলে তা রফতানিরও সুযোগ আছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, দাম নিয়ে যে দেন দরবার হবে তা নয়। আমরা স্ট্যান্ডার্ড প্রাইস ফরমুলা করে দিয়েছি। সে অনুযায়ী প্রাইসিং হবে। প্রাইসিং হলে আমরা যদি নিই তাইলে নিব, আর আমরা না নিলে তারা বাইরে বেচতে পারবে। এই মেয়াদেই হয়ত আমরা বিডিংয়ে চলে যাব। অ্যাসেসমেন্ট হয়তো পরে হবে।
তবে এটি নিয়ে উদ্বিগ্ন না হওয়ার পরামর্শ জ্বালানি বিভাগের। অধ্যাপক বদরুল ইমামও এ প্রস্তাবকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন। তিনি বলেন, মৌলিকভাবে আমরা রফতানি বিরোধী। প্রাকটিক্যালি যদি দেখেন, গ্যাস সম্পদ যে পরিমাণ আবিষ্কার হওয়ার কথা বা হবে বলে মনে করি আমরা, সেটা এতো অতিরিক্ত হবে না যে, বাংলাদেশ কখনো বলবে যে, না আমরা এ গ্যাস কিনবো না।
নির্বাচনের আগেই মার্কিন কোম্পানিটির সাথে তেল গ্যাস অনুসন্ধানের বিষয়টি চূড়ান্ত করার পথে হাঁটছে জ্বালানি বিভাগ। পিএসসি অনুযায়ী গভীর সমুদ্রে গ্যাস পাওয়া গেলে সেটার দাম বছরে দেড় শতাংশ হারে বাড়াতে পারবে এই মার্কিন কোম্পানি।
প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তির পর, ২০১৪ সাল থেকেই গভীর সমুদ্রে তেল গ্যাস অনুসন্ধানের চেষ্টা করলেও, এতদিন আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো সাড়া দেয়নি।