বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার মতো ইংরেজি ভাষাভাষী দেশগুলোকে বেছে নিলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন, জাপান, তুরস্ক, দক্ষিণ কোরিয়া ও জার্মানির মতো ভিন্ন ভাষার দেশগুলোর প্রতিও আগ্রহী হচ্ছেন।
এর কারণ হিসেবে ওইসব দেশে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীরা বলছেন, সেখানে ভাষাগত ব্যবধান থাকলেও স্কলারশিপের সুযোগ বেশি থাকে। টিউশন ফি সেইসঙ্গে থাকা খাওয়ার খরচও অপেক্ষাকৃত কম। আবার পড়াশোনার পর পর অনেক দেশে কাজেরও সুযোগ থাকে।
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার জন্য জাপানে যাবার প্রচলন আগে থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আরো বেড়েছে।
জাপানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান ও প্রকৌশল থেকে শুরু করে সামাজিক বিজ্ঞান, মেডিকেল, সাহিত্য, ব্যবসা প্রশাসন, পরিবেশসহ যেকোনো বিষয়ে অ্যাসোসিয়েট ডিগ্রি, স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করছেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা।
এর মধ্যে স্নাতক ডিগ্রির মেয়াদ বিষয় ভেদে চার থেকে ছয় বছর। স্নাতকোত্তর ডিগ্রির মেয়াদ দুই বছর এবং পিএইচডির মেয়াদ বিষয় ভেদে তিন থেকে চার বছর হয়ে থাকে।
বাংলাদেশের নাগরিক ইয়াসিন আরাফাত সম্প্রতি বৃত্তি নিয়ে জাপানে তার স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পূর্ণ করেছেন।
বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, “জাপানের শিক্ষকরা খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে পড়ান। সেখানকার অন্য ছাত্ররাও অনেক হেল্পফুল। তাদের ভদ্রতার কোন তুলনা হয় না। তবে হ্যাঁ, পড়াশোনার চাপ অনেক বেশি। তাই সেইরকম পড়াশোনার মন মানসিকতা নিয়ে এদেশে আসতে হবে।”
জাপানে শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপের বড় ধরনের সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি পর্যায়ে স্কলারশিপের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি।
এর মধ্যে জনপ্রিয় স্কলারশিপ হল মেক্সট স্কলারশিপ। এছাড়া এডিবি-জাপান স্কলারশিপ প্রোগ্রাম, জাপান-বিশ্বব্যাংক বৃত্তিও উল্লেখযোগ্য।
এসব বৃত্তির আওতায় শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি, ভর্তি ফি, থাকা-খাওয়া- যাতায়াতের খরচ, বই কেনা, হাত খরচ, চিকিৎসা ভাতা এমনকি জাপানে আসার বিমান ভাড়াও অন্তর্ভুক্ত থাকে।
এসব স্কলারশিপ পেতে দেশটির সরকারি ওয়েবসাইট ও পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে নিয়মিত নজর রাখার পরামর্শ দিয়েছেন সেখানকার শিক্ষার্থীরা।
মি. আরাফাত বলেন, “জাপানের শিক্ষাবর্ষ দুটি, এপ্রিল-সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবর-মার্চ। এই বিষয়টি মাথায় রেখে কোর্স শুরু হওয়ার অন্তত ২-৩ মাস আগে থেকে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। যেন বিশ্ববিদ্যালয় আবেদন গ্রহণের সাথে সাথে ভিসার জন্য দাঁড়াতে পারেন।”
স্কলারশিপ ছাড়া এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি বছরে সাত লাখ থেকে বারো লাখ ইয়েন হয়ে থাকে। বাংলাদেশি টাকায় যা ছয় থেকে ১০ লাখের মতো। এজন্য বাংলাদেশের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী দেশটিতে স্কলারশিপ নিয়েই পড়তে যান।
এরপরও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে সাধারণত ২৮ ঘণ্টার মতো কাজ করার সুযোগ পান। কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে জাপানি ভাষা জানাটা বেশ জরুরি।
স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি পর্যায়ে ইংরেজি ভাষায় পাঠ্যক্রম থাকায় জাপানি ভাষা না জানলেও খুব একটা সমস্যা নেই। তবে স্নাতকের জন্য ভাষা শিখতেই হবে।
জাপানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেই আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জাপানি ভাষা শেখার সুযোগ রয়েছে। আবার শিক্ষার্থীরা চাইলে বাংলাদেশ থেকে শিখে যেতে পারেন।
উচ্চশিক্ষার জন্য বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থীর প্রিয় গন্তব্য এখন চীন।
দেশটির শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে সিনহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়, পিকিং ইউনিভার্সিটি, ফুদান ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইন চায়না, ঝেজিয়াং ইউনিভার্সিটি এবং উহান ইউনিভার্সিটি।
এসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান ও প্রকৌশল, মেডিকেল, সমাজ বিজ্ঞান, মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা, কৃষিসহ আরও নানা বিষয়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রির সুযোগ রয়েছে।
তবে মেডিকেল স্কুলগুলোয় পড়তে চাইলে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের অনুমতিপত্র লাগে।
উচ্চশিক্ষার জন্য ফারিয়া নিশাতের চীনকে বেছে নেয়ার অন্যতম কারণ ছিল দেশটির স্কলারশিপ সুবিধা।
প্রতিবছর চীন বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রচুর স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হল চায়না স্কলারশিপ কাউন্সিল-চায়না গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ।
এছাড়া কনফুসিয়াস স্কলারশিপ, কাউন্সিল রোড এন্ড বেল্ট স্কলারশিপ, মফকম স্কলারশিপ, কাস টাওয়াস স্কলারশিপ, ইউনিভার্সিটি প্রেসিডেন্সিয়াল স্কলারশিপ, প্রভিন্সিয়াল স্কলারশিপ, এন্টারপ্রাইস স্কলারশিপ, ইয়েস চায়না স্কলারশিপ সেইসাথে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব কিছু স্কলারশিপের অফার করে থাকে।
এসব বৃত্তির আওতায় শিক্ষার্থীর টিউশন ফি, হোস্টেল ফি, স্বাস্থ্যবিমা, মাসিক ভাতা সব অন্তর্ভুক্ত থাকে।
চীনে পড়তে হলে হাতে গোনা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া চীনা ভাষা শেখাটা বাধ্যতামূলক না। সেখানকার স্নাতকোত্তর ও পরবর্তী পর্যায়ে ইংরেজি ভাষায় পড়ানো হয়।
তবে জীবনযাপন সহজ করার জন্য চীনা ভাষা শেখা জরুরি বলে জানিয়েছেন সেখানকার শিক্ষার্থীরা।
ফয়সাল আহমেদ, চীনে পড়তে যাওয়ার আগেই বাংলাদেশ থেকে চীনা ভাষা শিখে যাওয়ায় সেটি তার ভীষণ কাজে লেগেছে।
তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমি যে ইউনিভার্সিটিতে পড়তাম সেখানে সব ইংরেজিতে পড়ালেও চীনা ভাষার দুটি কোর্স ছিল। সেজন্য আমাকে আলাদা করে ভাষার কোর্স করতে হয়নি। আমার সময়/অর্থ দুটোই বেঁচেছে। তাছাড়া ভাষাটা জানা থাকায় সেখানকার স্থানীয়দের সাথে যোগাযোগ করতে, রাস্তাঘাটে চলাফেরায় খুব সুবিধা হয়।”
এছাড়া কেউ যদি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় স্কলারশিপ ছাড়া পড়তে যান সেই খরচও বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চাইতে তুলনামূলক কম।
চীনের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ঘেঁটে জানা গিয়েছে স্নাতকে পড়তে ১৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার ইউয়ান বা বাংলাদেশি টাকায় আড়াই লাখ থেকে আট লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে।
তবে চীনে কেউ স্কলারশিপে পড়াশোনা করতে আসলে তাদের বৈধভাবে কাজের কোন সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন ফারিয়া নিশাত।
তিনি বলেন, “এখানে পড়াশোনাকে ফুল টাইম জব ধরা হয়। কেউ যদি নিয়ম ভেঙ্গে কোথাও কাজ করতে গিয়ে ধরা পড়ে, তাহলে তার স্কলারশিপ বাতিল হয়ে যাবে। আর এখানে পড়ালেখার চাপ এত বেশি, পড়া সামলে কাজ করা বেশ কঠিন।”
সাধারণত প্রথম কাতারের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য আইইএলটিএস বা এইচএসকে (চীনা ভাষার দক্ষতা পরীক্ষা) দরকার হয়। তবে কেউ যদি ইংরেজি মাধ্যমে লেখাপড়া করে থাকে, তাহলে এমওআই (মিডিয়াম অব ইন্সট্রাকশন) সনদ দিয়ে আবেদন করা যাবে।
চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা দূতাবাসের ওয়েবসাইট কিংবা সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে আবেদন করা যেতে পারে।
তবে সেখানকার শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে আবেদন করলে স্কলারশিপ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশি।
উচ্চশিক্ষার জন্য ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় যুক্তরাজ্যের পরের অবস্থানেই রয়েছে জার্মানি। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, জার্মানিতে বেশ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনির্দিষ্ট কিছু ডিগ্রি প্রোগ্রামে বিনা পয়সায় উচ্চশিক্ষা অর্জনের সুযোগ পাওয়া যায়। এছাড়া শিক্ষা-বৃত্তির সুবিধাও রয়েছে।
দেশটির প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আছে টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব মিউনিখ, ফ্রি ইউনিভার্সিটি বার্লিন, হামবোল্ট ইউনিভার্সিটি অব বার্লিন, কেআইটি ইত্যাদি।
ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি সামার সেশন এবং মে থেকে জুলাই উইন্টার সেশন- এই দুই সময়কে টার্গেট করে আবেদন জমা দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সেখানকার শিক্ষার্থীরা।
তবে স্কলারশিপ ছাড়া জার্মানিতে পূর্ণ অর্থে পড়ালেখা করাটা বেশ ব্যয়বহুল। বিষয় ভেদে বছরে তিন হাজার থেকে ২৫ হাজার ইউরো টিউশন ফিস দিতে হতে পারে। অর্থাৎ সাড়ে তিন লাখ টাকা থেকে ত্রিশ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে।
এছাড়া প্রথম বছর থাকা-খাওয়ার খরচ চালাতে আগে থেকেই প্রায় ১২ হাজার ইউরো বা প্রায় ১২ লাখ টাকার মতো সিকিউরিটি মানি জার্মানিতে নির্দিষ্ট ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দিয়ে রাখতে হয়। শিক্ষার্থীরা জার্মানিতে গেলে তাকে প্রতি মাসে ওই টাকা থেকে অল্প অল্প করে খরচ দেয়া হয়।
তবে কাজ করার সুযোগ থাকায় অনেকে আংশিক স্কলারশিপ পেলেও জার্মানি চলে আসেন।
বিবিসি বাংলার সাথে আলাপকালে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আসিফ মাহমুদ বলেন, শিক্ষার্থী হিসেবে সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা কাজের অনুমতি পান। এছাড়া তিনি তার গ্রীষ্মকালীন তিনমাস ছুটিতে এবং বছরে দুবার সেমিস্টার ব্রেকে ফুল টাইম কাজ করেন।
তবে পুরো সময় কাজ করতে গিয়ে পড়াশোনার চাপ সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে।
তিনি বলেন, “আমি আমার জমানো সব টাকা নিয়ে এখানে এসেছি। কিছু লোন করতে হয়েছে, সেটা শোধ করতেই কাজ করা। কেউ পুরো টিউশন ফিস দিয়ে আসতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়। কোর্সটা শেষ করতে পারলে দেশে হোক বা এখানে আমার ক্যারিয়ার প্রসপেক্ট অনেক ভালো হবে।”
জার্মানরা ইংরেজি ভাষায় বেশ সাবলীল হলেও পার্ট টাইম কাজ করার ক্ষেত্রে জার্মান ভাষা শেখার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি।
দেশটিতে যেতে জার্মান ভাষা শেখা বাধ্যতামূলক নয়। তবে ভাষাটি জানা থাকলে ছোট-বড় যেকোনো শহরেই কাজ পাওয়া সহজ হয়।
জার্মানিতে পড়তে গেলে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আইইএলটিএস করে যাওয়ার শর্ত দেয়।
উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় যুক্ত হয়েছে তুরস্কের নাম। এর একটি বড় কারণ বাংলাদেশের প্রথম সারির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় তুরস্কের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার খরচ কম। এছাড়া বৃত্তির সুযোগও অনেক বেশি।
এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজ বিজ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল, ব্যবসায়ে প্রশাসনের বিভিন্ন বিষয় সেইসাথে ইসলামের ইতিহাস এবং প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর, পিএইচডি এবং রিসার্চ প্রোগ্রামের সুযোগ রয়েছে।
তুরস্কে ২০৯ টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে । এরমধ্যে ১২৯টি সরকারি ও ৭৬টি বেসরকারি ৷ এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের সবগুলোতেই বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের পড়ার সুযোগ রয়েছে ।
সেখানকার শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে দেশটিতে বছরে দুই সেমিস্টারে ৫০ হাজার থেকে ৪ লাখ পর্যন্ত খরচ হয়। এছাড়া থাকা খাওয়ার খরচও থাকে নাগালের মধ্যেই
শিক্ষাবৃত্তি পেলে এই খরচটুকুও করতে হয় না। কেননা স্কলারশিপের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও টিউশন ফি, এক বছরের তুর্কি ভাষা কোর্স ফি, থাকা/খাওয়া, স্বাস্থ্যবিমা, মাসিক ভাতা, প্রথমবার যাওয়া ও পড়ালেখা শেষ করে দেশে ফেরার বিমান টিকিটের টাকা পাওয়া যায়। মাস্টার্স এবং পিএইচডির শিক্ষার্থীদের পরিবারসহ থাকার সুযোগ রয়েছে ।
স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা মাসে ৮০০ লিরা (প্রায় সাড়ে চার হাজার টাকা), স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীরা মাসে ১১০০ লিরা (প্রায় ছয় হাজার টাকা) ও পিএইচডি শিক্ষার্থীরা মাসে ১৬০০ লিরা (প্রায় আট হাজার টাকা) পেয়ে থাকেন বলে জানা গিয়েছে।
তুরস্কে বছরে সেপ্টেম্বর-ফেব্রুয়ারি সামার সেশন এবং মার্চ-জুন ফল সেশনে ভর্তি হওয়া যায়। সেই অনুযায়ী কয়েক মাস আগে থেকেই আবেদনের পরামর্শ দিয়েছেন সেখানকার শিক্ষার্থী হাফিজ মোহাম্মদ।
এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য নির্দিষ্ট বয়সসীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে দেশটির সরকার।
কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, স্নাতকের জন্য আবেদন করতে শিক্ষার্থীর বয়স ২১ বছরের নিচে, স্নাতকোত্তরে আবেদনের বয়স ৩০ বছরের নিচে, পিএইচডিতে ৩৫ বছরের নিচে হতে হবে। এছাড়া রিসার্চ প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করতে বয়স ৪৫ বছরের নিচে থাকার শর্ত দেয়া হয়েছে।
সেইসাথে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার ওপরও জোর দেয়া হয়েছে।
মি. হাফিজ বলেন, “তুরস্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার মিডিয়াম তার্কিস তবে এখন প্রথম সারির প্রায় সবগুলো ইউনিভার্সিটির লেখাপড়া সম্পূর্ণ ইংরেজি মাধ্যমে হয়। ইংরেজি মাধ্যমে পড়তে হলে টোফেল, জিআরই নাহলে পিটিই স্কোর প্রয়োজন হয়। তবে আপনার পূর্বের ডিগ্রিটি ইংরেজি মাধ্যম থেকে হলে তুরস্কের বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি ভর্তি পরীক্ষা দিয়েও উত্তীর্ণ হওয়া যায়।”
তুরস্কে আইইএলটিএস স্কোর গ্রহণযোগ্য নয় বলে তিনি জানান।
তবে কেউ যদি তুরস্কে কাজ করে তার পড়াশোনার খরচ ও থাকা খাওয়ার খরচ মেটানোর কথা ভাবেন তাহলে সেই চিন্তা থেকে সরে আসার পরামর্শ দিয়েছেন মি. হাফিজ।
তিনি বলেন, “তুরস্কে শিক্ষার্থীদের কাজের সুযোগ নেই বললেই চলে। বড় দুই একটি শহরে শিক্ষার্থীরা কাজ করতে পারলেও সেই আয় দিয়ে টিউশন ফি যোগানো সম্ভব না। খুব বেশি হলে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা হতে পারে। তাই স্কলারশিপ না পেলে পুরো টিউশন ফি নিয়েই পড়তে আসতে হবে।”
গত কয়েক বছর ধরে মার্কিন ডলার বিনিময়ে তুরস্কের মুদ্রার মান কমে যাওয়ায় সে সুযোগ আরও সংকুচিত হয়েছে বলে তিনি জানান।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি করার জন্য বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা দক্ষিণ কোরিয়াকে বেছে নিচ্ছেন।
এর একটি কারণ হিসেবে শিক্ষার্থীরা বলছেন বিশ্ব র্যাংকিংয়ে কোরিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান উপরের দিকে রয়েছে। কিন্তু সে অনুযায়ী টিউশন ফি খুব বেশি নয়।
এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের আবাসনের ব্যবস্থা থাকায় থাকা খাওয়ার খরচ সীমিত। রাজধানী সোলের মতো বড় শহরের বাইরে অন্যান্য শহরগুলোতে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকলেও খরচ কম হয় বলে জানিয়েছেন সেখানকার শিক্ষার্থীরা।
গত বছর দক্ষিণ কোরিয়ায় পড়তে এসেছেন ইবতিশাম রুমা। এই দেশটির প্রতি তার আগ্রহ মূলত জন্মেছিল কোরিয়ান টিভি সিরিজ ও পপ কালচারের প্রতি আগ্রহ থেকে।
তিনি বলেন, “বিষয়টা হয়তো অবাক ঠেকতে পারে। কিন্তু কে-ড্রামা দেখেই আমার সাউথ কোরিয়া নিয়ে এতো আগ্রহ। যখন আব্বু আম্মু বলল যে বাইরে পড়াবে, আমি তখন এখানকার ইউনিভার্সিটিগুলো সার্চ করি। দেখি অনেক ইউনিভার্সিটি ওয়ার্ল্ড র্যাংকিংয়ে আছে। চাকরির সুযোগও খুব ভালো। তারপর আর দেরি করিনি।”
মিস রুমা পূর্ণ টিউশন ফি দিয়েই এখানে পড়তে এসেছেন। তবে দেশটিতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ২০০টির বেশি শিক্ষা-বৃত্তির সুবিধা রয়েছে।
এর মধ্যে অন্যতম হল দেশটির ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশনের পরিচালিত গ্লোবাল কোরিয়া স্কলারশিপ প্রোগ্রাম (জিকেএস)।
এর মাধ্যমে বিদেশি শিক্ষার্থীদের বৃত্তিসহ কোরিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ দেওয়া হয়।
এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গেলে সাধারণত ইংরেজি ও কোরিয়ান দুটি ভাষার দক্ষতার প্রমাণপত্র দেখাতে হয়।
দক্ষিণ কোরিয়ায় স্নাতক ডিগ্রির মেয়াদ সাধারণত তিন থেকে চার বছর, স্নাতকোত্তর ডিগ্রির মেয়াদ এক থেকে দুই বছর এবং পিএইচডি ডিগ্রির মেয়াদ তিন থেকে পাঁচ বছর হয়ে থাকে।
দেশটিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিতে গিয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানান শাহাদাত হোসেন।
তিনি বলেন, “এখানে লেকচারভিত্তিক কোন পাঠদান হয় না। শিক্ষকরা প্রতিনিয়ত আমাদের অনেক টাস্ক দেন, এগুলো একেকটা পরীক্ষার মতো। এজন্য প্রচুর পড়া লাগে। তাই স্কলারশিপ পাওয়াটাই সব নয়। এই চাপ সামলে ভালো রেজাল্ট করাটা আসল পাওয়া।”
এদিকে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা তাদের উচ্চশিক্ষার গন্তব্য হিসেবে নেদারল্যান্ডস, পর্তুগাল, ডেনমার্ক, রাশিয়া, ইউক্রেন, ফিনল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ফ্রান্স, সুইডেন, হাঙ্গেরি, স্পেন, চেক রিপাবলিক, ইত্যাদি দেশকে বেছে নিচ্ছে।
বিবিসি বাংলা