1. [email protected] : চলো যাই : cholojaai.net
তিন বছরে পাঁচ লাখ কর্মী নেবে ইটালি, সুযোগ পেতে পারেন বাংলাদেশিরাও
রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ০৬:২২ পূর্বাহ্ন

তিন বছরে পাঁচ লাখ কর্মী নেবে ইটালি, সুযোগ পেতে পারেন বাংলাদেশিরাও

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই, ২০২৫

শ্রমবাজারের ঘাটতি পূরণে আইনি অভিবাসনের সুযোগ তৈরি করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশ ইটালি৷ তারই অংশ হিসাবে ২০২৬ থেকে ২০২৮ সাল পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশগুলো থেকে অন্তত পাঁচ লাখ নতুন কর্মী নিয়োগ দেবে দেশটি৷ সোমবার দেশটির মন্ত্রিসভার এক বিবৃতিতে এই তথ্য বলা হয়েছে৷

আগামী বছর মোট এক লাখ ৬৪ হাজার ৮৫০ জন কর্মীকে নিয়োগ দেবে দেশটি৷ আর ২০২৮ সালের মধ্যে এই সংখ্যাটিকে চার লাখ ৯৭ হাজার ৫৫০ জনে উন্নীত করা হবে৷

তিন বছর আগে ইটালির প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়া ডানপন্থি রাজনীতিবিদ জর্জা মেলোনি তার মেয়াদের মধ্যে এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো এ ধরনের পদক্ষেপ নিলেন৷ দেশটির সরকার ইতিমধ্যেই ২০২৩ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে সাড়ে চার লাখেরও বেশি বিদেশি কর্মীকে ওয়ার্ক পারমিট দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷

নতুন কর্মীদের নিয়োগের যেমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইটালি তেমনি অনিয়মিত অভিবাসন ইস্যুতেও বেশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে মেলোনির সরকার৷ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দ্রুততর করার পাশাপাশি এবং ভূমধ্যসাগরে অভিবাসীদের উদ্ধারকারী এনজিওগুলোর কার্যক্রমকে সীমিত করতেও নানা পদক্ষেপ নিয়েছে মেলোনি সরকার৷

মন্ত্রিসভার বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘সামাজিক অংশীদারদের চাহিদা এবং পূর্ববর্তী বছরগুলোতে জমা হওয়া ওয়ার্ক পারমিটের প্রকৃত আবেদনগুলো বিবেচনা করে কোটা নির্ধারণ করা হয়েছিল৷ এই কর্মসূচির লক্ষ্য হলো ব্যবসার চাহিদা পূরণ করা এবং বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নেয়া৷’’

বয়স্ক জনসংখ্যা এবং জন্মহার হ্রাস পাওয়ার কারণে ইউরো অঞ্চলের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটিতে বিদেশি কর্মীদের চাহিদা তীব্র হয়েছে৷ ২০২৪ সালে দেশটিতে জন্ম নেয়া শিশুর তুলনায় অন্তত দুই লাখ ৮১ হাজার বেশি মানুষ মারা গেছেন৷ দেশটির জনসংখ্যা ৩৭ হাজার কমে পাঁচ কোটি ৮০ লাখ ৯৩ হাজারে নেমে এসেছে৷ এক দশক ধরে দেশটিতে এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে৷

কৃষিক্ষেত্রের লবি কোল্ডিরেত্তি সরকারের এই পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছে৷ তারা বলেছে, এটি ফসল উৎপাদনে শ্রমিকের ঘাটতি পূরণ এবং দেশের খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিত করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ৷

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও পিয়ান্তেদোসি রোববার দৈনিক লা স্তাম্পাকে বলেন, ‘‘সরকার আমাদের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোকে সচল রাখতে নিয়মিত অভিবাসনের সুযোগকে অনুমোদন দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকবে৷’’

আরও পড়ুন
সমুদ্রপথে উদ্ধার: অভিবাসীদের মামলায় ইটালির পক্ষে রায় ইউরোপীয় আদালতের

ইটালীয় থিঙ্ক ট্যাঙ্ক রিও কন্তি পাবব্লিসি-এর গবেষণা বলছে, চলমান জনসংখ্যা হ্রাস মোকাবিলা এবং জনসংখ্যার বর্তমান স্তর বজায় রাখতে ইটালিকে ২০৫০ সালের মধ্যে কমপক্ষে এক কোটি অভিবাসী গ্রহণ করতে হবে৷

বাংলাদেশিদের সুযোগ কতটা?

ইটালি সরকারের এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশিদের জন্য সুখবর আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ কারণ এ বছরের মে মাসে বাংলাদেশ সফর করেছেন ইটালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও পিয়ান্তেদোসি৷

সফরকালে নিয়মিত অভিবাসনের সুযোগ তৈরি ও অনিয়মিত অভিবাসন বন্ধে একটি সমঝোতা স্মারকে (এমওইউ) সই করেছে বাংলাদেশ ও ইটালি৷ সেদিন ঢাকায় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এই সমঝোতা স্মারকটি সই হয়৷

মাইগ্রেশন অ্যান্ড মবিলিটি বিষয়ক সমঝোতায় বাংলাদেশের পক্ষে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং ইটালির পক্ষে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও পিয়ান্তেদোসি সই করেন৷

এর মধ্য দিয়ে অনিয়মিত অভিবাসন বন্ধ এবং নিয়মিত অভিবাসনের সুযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে ইটালির সঙ্গে প্রথমবারের মতো কোনো সমঝোতা স্মারকে সই করলো বাংলাদেশ৷

সেদিন ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘‘বৈধপথে অভিবাসন বৃদ্ধি করতেই আমাদের এই উদ্যোগ৷ যারা ইটালি গমনেচ্ছু তারা যেন নিরাপদে যেতে পারেন, ভালো পারিশ্রমিক পান সেটাই লক্ষ্য আমাদের৷’’

তিনি আরো বলেছেন, ‘‘ইটালি সিজনাল ও নন-সিজনাল দুই ভাবে লোক নেবে৷ আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে, আমরা জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ করবো৷ তারা বছরে একবার করে মিটিং করবে৷ আমাদের টেকনিক্যাল ট্রেইনিং সেন্টার আছে, সেখানে আমাদের কর্মীরা যাতে ইটালির ভাষা শিখতে পারে, আমরা সে বিষয়ে কাজ করছি৷’’

বাংলাদেশ সফরে আসছেন মেলোনি

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে আগস্টে বাংলাদেশ সফর করতে পারেন ইটালির প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনি৷ সম্প্রতি কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে বাংলাদেশের প্রথমসারির একাধিক দৈনিক পত্রিকা এমন খবর প্রকাশ করেছে৷

সরকারের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, সফর সংক্রান্ত সব প্রস্তুতি নিয়ে কাজ চলছে৷ জর্জা মেলোনি আগামী ৩০ আগস্ট ঢাকায় আসার কথা রয়েছে৷ তবে তার সফরটি হবে সংক্ষিপ্ত৷ ১ সেপ্টেম্বর ভোরেই ফিরে যাবেন তিনি৷

এই সফরের মধ্য দিয়ে এবং সমঝোতা স্মারক সইয়ের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য সুযোগ তৈরি হবে বলে আশা করা হচ্ছে৷

অবশ্য মেলোনির ঢাকা সফরে কথা জানিয়ে গেছেন তারই মন্ত্রিসভার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও পিয়ান্তোদোসি৷ গত ৫ মে দুই দিনের ঢাকা সফরে এসে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন তিনি৷

ওই বৈঠকে নিয়মিত অভিবাসনের সুযোগ তৈরির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ থেকে আরো জনশক্তি নিতে ইটালির আগ্রহের কথা প্রধান উপদেষ্টাকে জানান তিনি৷

মাত্তেও পিয়ান্তেদোসি জানান, ইটালির প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনি চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের আগেই বাংলাদেশ সফর করতে পারেন৷ কারণ, ঢাকার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা ‘নবায়ন’ এবং ‘পুনরুজ্জীবিত’ করতে চায় রোম৷

তিনি বলেন, ‘‘ইটালিতে বাংলাদেশিদের একটি বড় কমিউনিটি রয়েছে৷ আমরা বাংলাদেশি কমিউনিটি নিয়ে খুবই সন্তুষ্ট৷ কারণ তারা তরুণ, পরিশ্রমী এবং ইটালির সমাজের সঙ্গে তারা সুন্দরভাবে মিশে গেছেন৷ ইটালির জন্য বাংলাদেশের এমন নাগরিক আমাদের আরো প্রয়োজন রয়েছে৷’’

ইটালির মন্ত্রী বলেন, ‘‘যে কারণে আমি এখানে এসেছি, যে বিষয়টা আমি বলতে চাই, সেটা হলো অনেক বাংলাদেশি বিপজ্জনকভাবে অনিয়মিত পথে ইটালি যাওয়ার চেষ্টা করেন, যা ঝুঁকিপূর্ণ৷ আমরা চাই তারা নিয়মিত পথে আসুক৷’’

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস জানান, অনিয়মিত অভিবাসন ও মানবপাচার বন্ধে ইটালির সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী বাংলাদেশ৷

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Developed By ThemesBazar.Com