অত্যধিক তাপমাত্রার কারণে মাত্র ১০ দিনে ইউরোপের ১২ শহরে ২ হাজার ৩০০ মানুষ মারা গেছে। বুধবার প্রকাশিত এক বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে একদল বিজ্ঞানী। এতে বিজ্ঞানীরা আরও দাবি করেন, ১ হাজার ৫০০ মানুষ মারা গেছে শুধু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে। জলবায়ু পরিবর্তন এই তাপপ্রবাহকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, ইমপেরিয়াল কলেজ অব লন্ডন এবং লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের একদল বিজ্ঞানী এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তারা বলছেন, গত ২৩ জুন থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত ইউরোপের ১২ শহরে এই ২ হাজার ৩০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে কেবল তাপপ্রবাহের প্রভাবে। এই সময় ইউরোপের পশ্চিমাঞ্চলের শহরগুলোতে অত্যধিক তাপমাত্রা পরিলক্ষিত হয়। এর মধ্যে স্পেনে তাপমাত্রা ছাড়িয়ে যায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া ফ্রান্সে শুরু হয় দাবানল।
গবেষক দলের সদস্য ইমপেরিয়াল কলেজ অব লন্ডনের গবেষক ড. বেন ক্লার্ক বলছেন, ‘এবার যেমন গরম অনুভূত হওয়ার কথা, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তা আরও বেশি পরিমাণে অনুভূত হয়েছে। এ কারণে তাপপ্রবাহ আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।’
গবেষণায় ইউরোপের ১২ শহরকে বেছে নেওয়া হয়, যার মধ্যে রয়েছে স্পেনের বার্সেলোনা, ইতালির মিলান ও যুক্তরাজ্যের লন্ডন। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এসব শহরে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল।
গবেষকেরা বলছেন, এবার গরমের কারণে যারা মারা গেছেন, সেসব মানুষদের সঠিক সংখ্যা কোনো সরকারই প্রকাশ করেনি। এ ছাড়া এমন অনেক মৃত্যু রয়েছে, যেগুলো তাপপ্রবাহের কারণে হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে হবে না। এ কারণে বিশেষ এক পদ্ধতি অনুসরণ করে গবেষণা করেছেন তারা।
বুধবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস জানায়, গত মাস ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে তৃতীয় উষ্মতম জুন। গত দুই বছর এর চেয়ে বেশি গরম ছিল জুনে। তবে ইউরোপের পশ্চিমাঞ্চলে এবার জুন মাসটা ছিল সবচয়ে উষ্মতম। অনেক এলাকায় তাপমাত্রা কম থাকলেও অনুভূত হয়েছে অনেক বেশি।
কোপার্নিকাসের জলবায়ু বিষয়ক গবেষক সামান্থা বার্গেস বলেন, ‘এটা বিশ্বের কাছে সতর্কবার্তা যে, এখন থেকে তাপপ্রবাহ একটা নিত্যনৈমত্তিক ঘটনা হয়ে যাবে। এ ছাড়া এই তাপপ্রবাহ আরও বেশি ইউরোপীয়দের জীবনে প্রভাব ফেলবে।’
ইউরোপের বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য বিষয়ক ইনস্টিটিউটগুলোর তথ্যের বরাতে গবেষকেরা জানান, ২০২২ সালে তাপপ্রবাহের প্রভাবে ইউরোপে মারা গেছে ৬১ হাজার মানুষ।