প্রায় ৫ বছর ধরে নির্মিত কাটারা টাওয়ারস দেখতে যেন ২টি বিশাল আকৃতির তরবারি। এটি দেখতে দেশটির জাতীয় প্রতীকের মতো।
কাতার বরাবরই এর ঐশ্বর্য, বিলাসবহুল স্থাপনা ও সৌখিন জীবনধারার জন্য বিখ্যাত। এখানে এতসব আলোচিত স্থাপনার মধ্যে একটি নতুন হোটেলকে আলাদা করে সবার দৃষ্টি কাড়ার জন্যে প্রয়োজন অভিনব উপস্থাপনা ও আতিথেয়তার।
সেরকমই এক অভিনব নকশা তৈরি করেছে নির্মাণ প্রতিষ্ঠান কাটারা টাওয়ারস।
প্রায় ৫ বছর ধরে নির্মিত কাটারা টাওয়ারস দেখতে যেন ২টি বিশাল আকৃতির তরবারি। এটি দেখতে দেশটির জাতীয় প্রতীকের মতো।
গত বৃহস্পতিবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন’র প্রতিবেদনে বলা হয়, র্যাফেলস ও ফেয়ারমন্ট হোটেল ২টি নিয়ে কাতারের লুসাইলে তৈরি হয়েছে গগনচুম্বী কাটারা টাওয়ারস।
এর বাম পাশে তরবারির মতো ভবনটি র্যাফেলস ও ডান পাশেরটি ফেয়ারমন্ট। প্রতিটি ভবনই ৩ লাখ বর্গমিটার জায়গায় নির্মিত।
ফেয়ারমন্ট ও র্যাফেলস হোটেল ২টি আনুষ্ঠানিকভাবে গত জানুয়ারিতে জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়।
হোটেল ২টির ভেতরের বিলাসবহুল আয়োজনে আছে ভিন্নতা।
র্যাফেলস
নানান ধরনের চারুকলা থেকে অনুপ্রাণিত অল-স্যুট র্যাফেলস হোটেলের লবিতে আছে সাদা গ্র্যান্ড পিয়ানো। এর উপরে সিলিংয়ে ঝুলছে ৬০ মিটারের ঘূর্ণায়মান ক্যালিডোস্কোপ।
এখানে আরও আছে লাল মখমলের আসনের ব্যক্তিগত চলচ্চিত্রগৃহ, নিজস্ব হোটেলের শেফদের তৈরি কাস্টম স্ন্যাকস, রুফটপ বার, অ্যাকোস্টিক ও লাইভ পারফরম্যান্সের জায়গাসহ আরও বেশকিছু সুবিধা।
র্যাফেলসের সবচেয়ে বিলাসবহুল স্যুটটি ২ তলা নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে আছে ব্যক্তিগত সুইমিং পুল, লিফট, সেলুন ও হাম্মামখানা।
এছাড়াও আছে ব্লু সিগার ককটেল ও সিগার বার। আছে বিপুল সংখ্যক দুর্লভ বইয়ের সংগ্রহ। যেমন ধরুন, ‘মবি ডিক’র প্রথম সংস্করণ কিংবা ইংরেজিতে মুদ্রিত হোমারের মহাকাব্য ‘দ্য ওডিসি’র প্রাচীনতম সংস্করণের মতো বইগুলো।
কাতারের পর্যটন বোর্ডের আন্তর্জাতিক জনসংযোগ ও যোগাযোগ পরিচালনার দায়িত্বে থাকা অ্যাঞ্জেলা মুর সম্প্রতি পর্যটক হিসেবে কাটারা টাওয়ার পরিদর্শন করেন।
তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার কাজের প্রয়োজনে অনেক হোটেল দেখি। অনেকে মনে করেন যে, শুধু সুন্দর দৃশ্যসহ সুন্দর রুম দেওয়াই যথেষ্ট।’
‘ফেয়ারমন্ট ও র্যাফেলস যা করছে তা চাকচিক্যের থেকেও বেশি কিছু’ বলে মন্তব্য করেনি তিনি। আরও বলেন, ‘এখানের প্রতিটি বিষয়ই অবাক করার মতো। এখানে প্রতিটি অতিথিকে আলাদাভাবে যত্ন নেওয়া হয়।’
ফেয়ারমন্ট
যিনি ঘুরতে যাচ্ছেন তিনি কাটারার কোন অংশে থাকবেন তা ঠিক করবেন কীভাবে?
২টি হোটেলেরই ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিশ্চিয়ান হার্টের মতে, প্রতিটি হোটেলের নিজস্ব গ্রাহক আছে।
হোটেলগুলোর গ্রাহকদের পার্থক্য নিয়ে তিনি বলেন, ‘র্যাফেলসের অতিথিরা হলেন সুরুচিসম্পন্ন ভ্রমণকারী। তারা নতুন-ভিন্ন সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা খুঁজছেন, যা তারা আগে কোথাও পাননি।’
তার মতে, ‘ফেয়ারমন্টের অতিথিরা হলেন পাকা ভ্রমণকারী। তারা স্থানীয় সংস্কৃতিকে একেবারে খাঁটিরূপে আবিষ্কার করতে চান।’
ফেয়ারমন্টে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই অতিথিরা প্রাণবন্ত পরিবেশ অনুভব করেন। এখানকার দেয়ালগুলোয় দেখা যায় ১৮-ক্যারেট স্বর্ণের কাজ। অতিথিরা প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে দেখতে পান বিশ্বের বৃহত্তম ঝাড়বাতি। এর উচ্চতা ৫৬ মিটার বা ১৮৩ ফুট। এ থেকে মুক্তা ও সোনার ঝলকানি বিকিরিত হয়।
ফেয়ারমন্টের নকশাটি অপর একটি বিলাসবহুল সংস্কৃতি থেকে অনুপ্রাণিত। তা হচ্ছে—ইয়ট। ফেয়ারমন্টের কক্ষগুলো সাদা ও নীল রঙে রাঙানো; মার্জিত ও বেশ আরামদায়ক।
পূর্বমুখী কক্ষগুলো থেকে পারস্য উপসাগরের মনোরম দৃশ্য দেখা যায়। পুরো হোটেলটিতে সামুদ্রিক থিমের সূক্ষ্ম স্পর্শ আছে।
৩৩ তলার প্রোভোক বারটি নীল ও সাদা কাঁচে তৈরি। এটি মরুভূমির সূর্যের উজ্জ্বল আলো থেকে হালকা ও লঘু অনুভূতি তৈরি করে।
বাজপাখি দিয়ে প্রাণী শিকার মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম জনপ্রিয় বিনোদন। ফেয়ারমন্টের সবচেয়ে দামি স্যুটগুলোর মধ্যে ২টির নাম এরকমই বাজপাখির ২টি প্রজাতির নাম অনুসারে করা হয়েছে। একটি পেরেগ্রিন ও অন্যটি ল্যানার।
উভয় হোটেলের ফ্রন্ট ডেস্ক স্টাফ ও প্রহরীদের জন্যে আছে ব্রিটিশ ফ্যাশন ব্র্যান্ড ‘নো ইউনিফর্ম’র কাস্টম নকশা করা স্যুট ও পোশাক।
আড়াআড়িভাবে ২টি তরবারি কাতারের জাতীয় প্রতীকের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। তবে সম্প্রতি সরকার প্রতীকটি হালনাগাদ করেছে। কফির কাপ থেকে শুরু করে গয়না পর্যন্ত অনেক কিছুতেই ২ তরবারির কাতারি নকশাটি মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে দেখা যায়।
প্রথমবারের মতো এই আকৃতিটি একটি ভবনের নকশায় দেখা গেল।
তথ্যসূত্র:সিএনএন