নাটকের শুটিংয়ে অস্ট্রেলিয়া গিয়েছিলেন অভিনয়শিল্পী তানজিম সাইয়ারা তটিনী। কাজে একটু ফুরসত পেলেই ঘুরে বেড়িয়েছেন দেশটির এ-শহর, ও-শহর। শোনালেন তেমনই একটি অভিজ্ঞতা।
অস্ট্রেলিয়ায় একাধিক নাটকের শুটিং। তাই বলে একটু ঘুরব না! সহশিল্পী খায়রুল বাসারের সঙ্গে বিষয়টা নিয়ে কথাও বলেছিলাম। কিন্তু সিডনিতে টানা শুটিংয়ে সময় বের করাটাই কঠিন হয়ে পড়ল। একঘেয়েমিও পেয়ে বসল। মন চাইছিল কোথাও একটু ঘুরতে যাই। এর মধ্যেই পাওয়া গেল বিরতি। সময়টা ঘুরেফিরে কাটাতে পারলে মন্দ হয় না। ব্যবস্থা করে দিল আমার কাজিন। সে-ও আমার অবসরের অপেক্ষায় ছিল সস্ত্রীক। সিদ্ধান্ত হলো তাদের সঙ্গে লা-পেরুজে যাব।
হলিউডের অনেক সিনেমার শুটিং সিডনির এই শহরতলিতে হয়েছে। জায়গাটা পর্দায় দেখা। সিনেমার সেসব দৃশ্যের কথা মনে পড়তেই আনন্দে নেচে উঠল মন। লা পেরুজের সূর্যাস্তের কথা তো কতই শুনেছি। পরে আমার কাজিনদের কাছ থেকেও জানলাম। তারাও অনেকবার গিয়েছে।
লা পেরুজে পৌঁছেই মনটা ভালো হয়ে গেল। পরিচ্ছন্ন আর খোলামেলা সৈকত, আবহাওয়াটাও দারুণ।
ঘোরাঘুরি আমার কাছে নেশার মতো। সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়তে চেষ্টা করি। কিন্তু অভিনয়ের ব্যস্ততায় নিজের মতো করে সময় বের করা অনেকটাই কমে গেছে। দেশে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাজশাহী, সুন্দরবনসহ অনেক জায়গায় কাজে গেছি। শুটিংয়ের ফাঁকে কমই ঘুরতে পেরেছি। দূর দেশে সেই সুযোগ পেয়ে ভালোই লাগছিল।
লা পেরুজের খোলা জায়গায় চোখ বন্ধ করে শ্বাস নিলাম। সতেজ বাতাস আর সমুদ্রের গর্জনে কোথায় যেন হারিয়ে গেলাম। তন্ময় হয়ে দূর নীলিমায় চেয়ে থাকলাম। একসময় আবিষ্কার করলাম চারপাশে ঝাঁকে ঝাঁকে গাঙচিল ওড়াউড়ি করছে।
আমার হাতে চিপসের প্যাকেট। একটা-দুটো করে চিপস খাচ্ছি। হঠাৎ দেখি একটি-দুটি করে গাঙচিল আমার পাশে ঘুরছে। একে একে পাখিদের দল ভারী হতে থাকে। পড়ন্ত বিকেলে সাদা পাখিদের দেখে মনটা নেচে উঠল। তাদের চিপস খেতে দিলাম। তাদের কেউ কেউ ঠোঁটে নিয়ে নিল। খাবার দিচ্ছি দেখে আকাশ সাদা করে বিশাল এক ঝাঁক চলে এল। হাতে থাকা সব চিপস তাদের বিলিয়ে দিলাম।
আনন্দের পরে যে বিষাদ আছে, একটু পরেই তা টের পেলাম। জানতে পারলাম সমুদ্রপাড়ে পাখিদের কোনো খাবার দেওয়া নিষেধ। আমার মতো প্রথম যারা এখানে বেড়াতে আসে, তাদের অনেকেই এই ভুল করে। না জেনে পাখিদের ভালোবেসে খাবার দিয়ে ফেলে। একজন জানাল, গাঙচিলদের খাবার দিলে অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। অনেক সময় পাখিগুলো খাবারের লোভে ভ্রমণকারীদের আক্রমণ করে। প্রায়ই এমনটা হয়ে থাকে।
মনে মনে ভাবছিলাম, ভাগ্যিস আমরা কোনো দুর্ঘটনায় পড়িনি!
গাঙচিলদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমরা একটা জায়গায় বসলাম। রয়েসয়ে সূর্যাস্ত দেখার ইচ্ছা। ভাবছিলাম সময়টা যেন শেষ হয়ে না যায়। কিন্তু সময়কে তো আটকানো যায় না। দিন শেষের সোনালি আভায় আকাশটা ভরে উঠল।
লা পেরুজে দেখা সূর্যাস্তের সেই সৌন্দর্য আজও মনে গেঁথে আছে।